শনিবার ● ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » লাইফস্টাইল » মাগুরায় গড়াই নদীতে জেলেদের জীবনজীবিকা
মাগুরায় গড়াই নদীতে জেলেদের জীবনজীবিকা
শাহীন আলম তুহিন ,মাগুরা থেকে : মাগুরা গড়াই নদীর তীরে মাছ ধরে জীবন জীবিকা করছেন শ্রীপুরের দোরান নগরের শতাধিক জেলেরা।ঝড়-বৃষ্টি রোদ উপেক্ষা করে নদীতে ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে সকাল থেকে রাত বদধি দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ শিকার করছেন তারা।
শ্রীপুরের গড়াই নদীর তীরের জেলেরা জানান,জুন-অক্টোবর মাস বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বেড়ে গেলে মাছ ভালো পাওয়া যায় । এ সময়ে নদীতে মাছের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে আমাদের কাজ বেড়ে যায় । সকাল থেকে আমরা নৌকা নিয়ে রাত অবদি পর্যন্ত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরি । গড়াই নদীর পানি স্বাদু ও মিঠা। তাই এ নদীতে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আমরা পেয়ে থাকি । তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে এ গড়াই নদীতে পাওয়া যায় ইলিশ মাছ । ইলিশ মাছ মুলত লবণাক্ত নদীর মাছ । এর প্রজনন স্থান পদ্মা,মেঘনা,যমুনা নদীতে । স্গারের বেশির ভাগ এলাকাতে এ মাছ বেশি পাওয়া যায় । এখন বর্ষা মৌসুমে আমরা গড়াই নদীতে প্রতিদিনই সাগরের রূপালি ইলিশ জেলেদেও জালে ধরা পড়ছে । প্রতিদিন সকাল থেকে বিকালের মধ্যে এ এলাকার জেলেদের জালে ধরা পড়ছে রূপালি ইলিশ ।এ ইলিশ দেখছে ভিড় করছে বিভিন্ন স্থানের মানুষ । কিনে নিয়ে যাচ্ছে মৎস্য ব্যবসায়ীরা ।
দোরাননগর গ্রামের জেলে নিতাই বিশ্বাস জানান,আমি ৩০ বছর এ পেশার সাথে জড়িত । আমার বাপ-দাদার এ পেশাকে টিকিয়ে রেখেছি কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে । আমাদের যুদ্ধ নদী আর পানির সাথে । সকাল থেকে আমরা জেলেরা জাল নিয়ে গড়াই নদীতে মাছ ধরি । প্রতিদিন ৭-৮টা জালের খ্যাপ নদীতে দিয়ে আমরা মাছ ধরি । এ নদীতে দেশিয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আমরা পাই । চিংড়ি,পটি,পাবদা,টেংরা,কাতলা,কৈ,জিয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আমাদের জালে ধরা পড়ে । এখন বর্ষা মৌসুমে পদ্মার রূপালি ইলিশ মাছ আমাদের গড়াই নদীতে পাওয়া যাচ্ছে । ২শ’ গ্রাম থেকে ৪শ’ গ্রাম পযর্ন্ত মাছ আমরা পেয়ে থাকি । জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ ব্যাপারিরা আমাদের নদীর ঘাট থেকে মাছ ক্রয় করে নিয়ে যায় । প্রতিদিন ৪-৫ হাজার টাকার মাছ আমরা বিক্রি করি । ইলিশ মাছ বেশি ধরা পড়লে দামটা আমরা ভালো পায় ।
জেলে নির্মল,কৃষ্ণ,হরেন ও হারাধন বলেন,বর্তমানে আগের মতো আমরা নদীতে মাছ পাচ্ছি না । তাই জীবন জীবিকায় আমরা সংসার চালাতে পাচ্ছি না । নদীতে পানি বাড়লে মাছের ভরা মৌসুমে মাছ ভালো পাওয়া যায় কিন্তু বছরের অন্য ৪-৫ মাস আমরা নদীতে মাছ পায় না । বিশেষ করে শীত মৌসুমে নদীর পানি কমে গেলে তখন মাছ পাওয়া যায় না । ফলে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে থাকি । মৎস্য অধিদপ্তরের কার্ড আমাদের অনেকে নাই তাই আমরা ভাতা পায় না । যাদের কার্ড করা আছে তারাও যদ সামান্য অর্থ পায় । এ টাকা নিয়ে আমাদের সংসার চলে না । আমাদের সংসার অনেক বড় । ছেলে-মেয়ে টাকার অভাবে আমরা ভালো ভাবে পড়াশুনা করাতে পারি না । ভালো কিছু কিনে তাদের খাওয়াতে পারি না । এভাবে জীবন সংগ্রাম আমাদেও চলে না । বর্তমান সরকার যদি মৎস চাষীদের কিছু অনুদান দিয়ে সহযোগিতা করে তাহলে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে কিছুটা সচ্ছল ভাবে জীবন যাপন করতে পারি ।
অনেকে অভিযোগ করে বলেন, বিগত বছর গুলো অক্টোবর মাসে সরকার মাছ ধরার উপর নিষেধাঙ্গা দিলে তা আমাদের জেলের উপরও পড়ে । আমাদের গড়াই নদীতে বর্ষার ভরা মৌসুমে নদীতে সামান্য ইলিশ মাছ পাওয়া যায় । সেটা সময়ও খুবই কম । এখানে মৎস্য অফিসের কিছু অসাধ্য লোক জেলেদের উপর মাছ ধরার জরিমানা করে । মাছ ধরে আমাদের জীবন চলে । এখানে আমরা মাছ ধরতে না পারলে আমাদের সংসার চলে না । তাই যথাযথ কতৃপক্ষের প্রতি আমাদের জোর দাবী জেলেদের বাচাঁন,নদী বাঁচান । নদী বাঁচলে দেশ ও জেলেরা বাচঁবে ।