শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

SW News24
সোমবার ● ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » মুক্তমত » যানজট মুক্ত ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার কমাতে হবে
প্রথম পাতা » মুক্তমত » যানজট মুক্ত ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার কমাতে হবে
৪৮ বার পঠিত
সোমবার ● ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

যানজট মুক্ত ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার কমাতে হবে

---  প্রকাশ ঘোষ বিধান

পরিবেশ সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন করা হয়। নাগরিকদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করে বরং  সাইকেল, হাঁটা বা গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত করতে গাড়িমুক্ত দিবসের সূচনা হয়। বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। তেলচালিত গাড়ির ব্যাপক ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে সচেতন করা, নতুন দূষণমুক্ত জ্বালানিচালিত গাড়ির সুফল সম্পর্কে জানা। তাই ব্যক্তিগত গাড়ির প্রতি নির্ভরতা কমাতে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর পালিত হয় গাড়িমুক্ত দিবস। এই দিবসের মূল্য লক্ষ্য হলো, ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমানো ও এর পরিবর্তে সাইকেল চালানো, হাঁটা বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার বাড়ানো।

মোটর গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ুতে ক্ষতিকর পদার্থ ছড়ায়। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। চারটি প্রধান দূষণকারী উপাদান যানবাহনের নির্গত ধোঁয়া থেকে আসে। এর মধ্যে আছে ফ্রিন পদার্থ, যা মানুষের ফুসফুসের ক্ষতি করে। এছাড়া নাইট্রোজেন অক্সাইডও বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, যা অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন এক ও অন্যটির সঙ্গে বিক্রিয়ার ফলে জ্বালানি পোড়ার সময় তৈরি হয়। হাইড্রোকার্বনও একটি গাড়ির নিষ্কাশন দ্বারা নির্গত হয়। এটি কার্বন ও হাইড্রোজেনের একটি বিষাক্ত যৌগ। এছাড়া কার্বন মনোক্সাইড নির্গত হয় গাড়ির জ্বালানি থেকে। যা স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এসব দিক বিবেচনা করেই বিশ্ব গাড়িমুক্ত দিবস পালিত হয় সবাইকে সচেতন করা ও ব্যক্তিগত গাড়ির পরিবর্তে সাইকেলের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য। এতে শরীরচর্চাও হবে আবার স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।

১৯৬১ সালে প্রকাশিত সাংবাদিক ও লেখক ইয়ান জ্যাকবস তার দি ডেথ অ্যান্ড লাইফ অব গ্রেট আমেরিকান সিটিস বইয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে প্রথম ধারণা দেন। এটি নগর পরিকল্পনায় দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৬২ সাল থেকে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরে সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে শুধুমাত্র পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তারা এই ধারা অব্যাহত রেখেছে। এরপর ইউরোপে এই ধারণাটির প্রসার ঘটতে শুরু করে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আরো ব্যাপকতা লাভ করে ৭০ দশকে জ্বালানি সংকটের সময়। ১৯৭৪ সালে সুইজারল্যান্ডে গাড়িমুক্ত দিবস পালন করা হয়। নব্বই এর দশকে এই উদ্যোগের আরো প্রসার ঘটে। যেমন বিশ্বব্যাপী কারফ্রি সিটি নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে। এরপর ১৯৯৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সে জাতীয়ভাবে ৩৪টি শহরে গাড়িমুক্ত দিবস পালিত হয়। ২০০৬ সাল থেকে বেসরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন শুরু হয়। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে সরকারি উদ্যোগে দিবসটি পালন শুরু হয় ।

বর্তমানে ঢাকায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করে। প্রতিদিন যোগ হচ্ছে প্রায় ৪০টি নতুন ব্যক্তিগত গাড়ি। এছাড়া মোটরসাইকেলের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে, এটিও দুর্ঘটনা ও দূষণ বৃদ্ধির পাচ্ছে। মানসম্মত গণপরিবহনের অভাবে অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। ফলে গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি ও ব্যবহারে যানজট বেড়েছে। বুয়েটের পরিবহণ ও ট্রাফিক সিস্টেম বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু ঢাকা শহরে যানজটে প্রতিবছর দেশের অন্তত ৪০ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়। বর্তমানে যানজটের কারণে প্রতিদিন লাখ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। জ্বালানির অপচয় হচ্ছে, বাড়ছে দূষণ। এসবের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ব্যক্তিগত গাড়ি। ব্যক্তিগত গাড়ি সড়কে বেশি জায়গা দখল করে ও কম যাত্রী বহন করে। শহর এলাকায় টেকসই পরিবহন নিশ্চিত করার জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি একটি কার্যকর গণপরিবহন ব্যবস্থা এবং পথচারী ও সাইকেলবান্ধব শহর তৈরি করার এখনই সময়।
রাজধানীতে মানসম্মত গণপরিবহনের অভাবেই মূলত ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। এর ফলে প্রতিনিয়তই বাড়ছে যানজট। ব্যক্তিগত গাড়ি চলার জন্য যেমন জায়গা যায়, থামার জন্য তার চেয়ে বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়। এ কারণেই পৃথিবীতে সবাই একমত যে ব্যক্তিগত গাড়িগুলোকে নিরুৎসাহ করতে হবে। সড়কে যানজটের প্রধান কারণ ব্যক্তিগত গাড়ি।

বিশ্বের বহু দেশে এবং অধিকাংশ রাজধানীতে গাড়িমুক্ত হাঁটার সড়ক যেমন আছে, তেমনি থাকে ফুটপাত। আমাদের দেশে সড়ক অনুপাতে ফুটপাতের পরিমাণ খুবই কম। আবার যেটুকু আছে, সেটুকুও অবৈধ স্থাপনা ও ব্যবসার উদ্দেশ্যে ব্যবহারে দখল করা হয়। বিভাগীয় শহর ও ঢাকা মহানগরে বয়স্ক মানুষের পক্ষে শহরের কোনো ফুটপাত ব্যবহার করা সম্ভব নয়। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে তো কারো কোন ভাবনা নেই। একলা পথে নারীদের জন্যও ফুটপাতে চলাচল করা অত্যন্ত ঝামেলাপূর্ণ, বিব্রতকর ও কখনো কখনো হয়রানির সন্মখীন হতে হয়।

নগর যাতায়াতে পরিবেশ একটি বড় বিষয়। নিজের শহরকে দূষণমুক্ত রাখা এবং বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার দায়িত্ব নাগরিকের। যান্ত্রিক বাহনকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে  বায়ুদূষণ রোধ করা সম্ভব। সাধারণ মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করে, যান্ত্রিক যান ব্যবহার না করে অযান্ত্রিক যান যেমন; রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, স্বল্প দূরত্বে হেঁটে যাতায়াত করতে সচেতন করা হয়। এর ফলে শুধু যানজট নিরসন নয়, জ্বালানি তেলের সাশ্রয়, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ ও বাতাসে কার্বনের মাত্রাও কমিয়ে আনার চেষ্টা সফল হবে। অন্যদিকে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।

লেখক; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)