মঙ্গলবার ● ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » আঞ্চলিক » আশাশুনির হাজরাখালি খালে নেট ও পাটা দেয়ায় কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় দু’গ্রামের ২শত পরিবার পানিবন্দি
আশাশুনির হাজরাখালি খালে নেট ও পাটা দেয়ায় কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় দু’গ্রামের ২শত পরিবার পানিবন্দি
আশাশুনি : আশাশুনির শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালি খালে ঘন নেট ও পাটা দিয়ে পানির প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত করায় মাড়িয়ালা, হাজরাখালি সহ পার্শ্ববর্তী ছোট বড় প্রায় ২ শতাধিক পরিবারের পয়নিষ্কাষন বন্ধ হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ পরিবারের রান্নাঘর, সৌচাগার ও টিউবওয়েল পানিতে ডুবে থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে এসব পরিবারের। চারিদিকে অথৈ পানিতে কোলের শিশুদের নিয়ে মায়েরা পড়েছে চরম বিপাকে। চোখের আড়াল হলেই ঘটতে পারে মর্মান্তিক কোন দুর্ঘটনা। তাই অবিলম্বে খালের নেট ও পাটা অপসারণ করে পানি নিস্কাশনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
হাজরাখালি গ্রামের মৃত. বাবর আলী সানার ছেলে রেজাউল করিম, নওশের আলী গাজী, ইদ্রিস গাজী, আব্দুল মান্নান, আবুল কাসেম, আতিয়ার গাজী, গফ্যার সরদার, সিদ্দিক সরদার, রহিম জোয়ার্দার, রেজাউল জোয়ার্দার, করিম জোয়ার্দার সহ ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০২০ সালে প্রলয়ংকরি আম্ফানে হাজরাখালি খেয়াঘাট সংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। দীর্ঘ দিন জোয়ার ভাটার স্রোতে হাজরাখালি ও মাড়িয়ালা গ্রামের শতাধিক বসতবাড়ি ভেঙ্গে প্রায় দুই শত বিঘা জমি খালে পরিণত হয়। বিগত ৪ বছর ধরে পরিত্যক্ত এ জমিতে স্থানীয় অসহায় লোকজন মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। খালে কোন নেটপাটা না থাকায় পার্শ্ববর্তী জনৈক মিজান সাহেবের কলগৈ দিয়ে সহজেই বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হয়ে যেতো। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বকচর গ্রামের আব্দুল্লাহ আল মামুন মুস্টিমেয় কয়েকজন জমির মালিকের নিকট থেকে মাত্র ৩০ বিঘার মত খাল শ্রেণীর জমি ডিড নিয়ে প্রায় ২০০ বিঘা জমি দখলে নিয়েছে। ২০ দিন আগে তিনি বাসা তৈরি করে এবং খালে নেট ও পাটা দিয়ে পানি নিস্কাশন ব্যহত করে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে চলেছেন। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তার লোকজন খাল দখলে এলে গ্রামবাসীর সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন এলাকাবসি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক মহিলার সাথে কথা বললে তারা জানান, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় সৌচাগার ও রান্নাঘর ডুবে আছে। রান্না খাওয়ার সাথে সাথে মল ত্যাগের সমস্যা প্রকট আকার ধারন করেছে। চারিদিকে থৈ থৈ পানিতে বাচ্চাদের কোল থেকে নামিয়ে রাখতে সাহস পাচ্ছিনা। এরই মধ্যে কেউ যদি আবার খাল হয়ে যাওয়া বসত ভিটার পাশে ঘের করে তাহলে নিরাপত্তা বলতে কিছুই থাকবে না। তাই আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থে বহিরাগতরা যাতে ঘের না করতে পারে তার ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।এ ব্যাপারে কৃত্রিম জলাবদ্ধতাকারী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৯৫ বিঘা জমির মালিক বিগত ৪ বছর ধরে জমি থেকে একটি টাকাও না পেয়ে আমার কাছে মৎস্য ঘের করার প্রস্তাব দিলে একাধিক জমির মালিকের কাছ থেকে আমি প্রায় ৭৫ বিঘা জমি ডিড নিয়ে মৎস্য ঘের করার প্রস্তুতি নিয়েছি। বাকিদের সাথে ডিড গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। ২০ দিন আগে একটি বাসা নির্মাণ করে নেটপাটা দিয়েছি। পানি নিস্কাশনের দায়িত্ব মসজিদ কমিটির উপর ন্যস্ত। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে সব গ্রামের মতো হাজরাখালি ও মাড়িয়ালা গ্রামের নিন্মাঞ্চল তলিয়ে গেছে। একটি কুচক্রী মহল প্রকৃত জমির মালিকদের বিগত ৪ বছরের মতো ক্ষতিগ্রস্ত করতে এলাকার সাধারণ মানুষকে আমার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ করে যাচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক কার্যকর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।