শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

SW News24
বুধবার ● ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বাঁশ নিয়ে বাঙালির হাসি মশকরা
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বাঁশ নিয়ে বাঙালির হাসি মশকরা
৫১ বার পঠিত
বুধবার ● ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বাঁশ নিয়ে বাঙালির হাসি মশকরা

  ---  প্রকাশ ঘোষ বিধান

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বাঁশ ও বাঁশজাত বিভিন্ন পণ্যের বহুল ব্যবহার রয়েছে। বিশ্ব বাঁশ সংস্থার আয়োজনে বিশ্বব্যাপী বাঁশের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং দৈনন্দিন পণ্য হিসেবে এর ব্যবহারকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিশ্ব বাঁশ দিবস পালন করা হয়। প্রতি বছর ১৮ সেপ্টেম্বর পালিত হয় বিশ্ব বাঁশ দিবস। এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো, বাঁশ শিল্পকে আরও সম্ভাবনাময় জায়গায় নিয়ে যাওয়া।

দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় বাঁশের কদর আজও অটুট। মূলত ঘাস জাতের এই উদ্ভিদ নির্মাণসামগ্রী হিসেবে জনপ্রিয়, কুটিরশিল্প এবং বাদ্যযন্ত্র তৈরিতেও অতুল উপকরণ। বাঁশ পরিবেশের অকৃত্রিম বন্ধু, এটা আদতে বিশ্ববাসীর নজরেই পড়ে না। এ কারণে ওয়ার্ল্ড ব্যাম্বু অর্গানাইজেশন বাঁশের সম্ভাবনা আরও ভালোভাবে দৃষ্টিগোচর করতেই দিবসটি পালন করছে। মানুষের মধ্যে বাঁশের প্রয়োজনীয়তা ও বাঁশ সম্পর্কিত সচেতনতা ছড়িয়ে দিতেই পালিত হয় বিশ্ব বাঁশ দিবস। পরিবেশ রক্ষা, টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন শিল্পের জন্য বাঁশ চাষে উৎসাহিত করা এবং ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা এর সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নও এর অন্যতম লক্ষ্য।

বৈশ্বিকভাবে বাঁশ শিল্পকে উন্নত করার লক্ষ্যে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ব বাঁশ সংস্থা। ২০০৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর, ব্যাংককে অষ্টম বিশ্ব বাঁশ কংগ্রেস চলাকালীন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায় বিশ্ব বাঁশ দিবস। দিনটিকে বিশ্ব বাঁশ দিবস হিসাবে মনোনীত করার প্রস্তাবে সম্মত হন। এই দিবস পালনের প্রস্তাব রেখেছিলেন সংস্থার তৎকালীন সভাপতি কামেশ সালাম।অনুষ্ঠানে প্রায় ১০০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

বছরের প্রতিটা দিনের রয়েছে আলাদা গুরুত্ব ও তাৎপর্য। এমন বিচিত্র সব দিবস দুনিয়ার নানা প্রান্তে পালন করা হচ্ছে রোজই। এসব দিবসের গুরুত্ব আছে সুনিশ্চিত। পালিত হয় বিশেষ বিশেষ দিবসও। কখনো সেটা হয়ে ওঠে সমাদৃত কখনোবা হাস্যকর। তবে কিছু দিবস আছে যা মানুষের দৃষ্টিগোচরও হয় না। তেমনই এক দিবস- বিশ্ব বাঁশ দিবস।

বাংলাদেশে বাঁশ শব্দটাই বেশ সংবেদনশীল এবং নেতিবাচক উপমায় ব্যবহার হয়। বাঁশ শব্দটি আমাদের দেশে ব্যবহৃত হয় ভিন্ন অর্থেও। অকস্মাৎ কোন সমস্যায় পড়লে বা ঠকে গেলে আমরা এই শব্দকে অনেকটা ভিন্নভাবেই উপস্থাপন করে থাকি। বাঁশ শব্দটিকে নিয়ে বাঙালির হাসিমশকরার শেষ নেই। বাঁশ দেওয়া নিয়ে বাঙালি তার চায়ের আড্ডায় হাসির রোল তোলে। বাঁশ শব্দটিকে অবশ্য আরও নানা আঙ্গিকে ব্যবহার করা হয়।

পৃথিবীতে যে সব উদ্ভিদ দ্রুত বাড়ে বাঁশ তাদের অন্যতম। বাঁশ মূলত একটি চিরহরিৎ উদ্ভিদ। ঘাস পরিবারের এরা বৃহত্তম সদস্য। বাঁশ গাছ সাধারণত একত্রে গুচ্ছ হিসেবে জন্মায়। এসব গুচ্ছকে বাঁশ ঝাড় বলা হয়। পৃথিবীতে ৩০০ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইন্সটিটিউট ৩৩ প্রজাতির বাঁশ সংরক্ষণ করেছে। এরমধ্যে রয়েছে; মুলি, তল্লা, আইক্কা, ছড়িসহ নানা প্রজাতির বাঁশ। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রজাতির বাঁশ পাওয়া যায় চীনে। চীনে ৩০০ প্রজাতির বাঁশ,  ব্রাজিলে ২৩২ প্রজাতি ও ৩৩ প্রজাতির বাঁশ থাকা বাংলাদেশ আছে তালিকার অষ্টম স্থানে। বাঁশ সাধারণত পাওয়া যায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ভারতীয় উপ-মহাদেশ এবং প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলিতে। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল উদ্ভিদ হল বাঁশ। কিছু প্রজাতির বাঁশ প্রতিদিন প্রায় ১ মিটার করে বাড়তে পারে। বাঁশের বন অন্যান্য গাছের বনের তুলনায় অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

বিশ্বব্যাপী আসবাবপত্র কিংবা গৃহস্থালি প্রয়োজন ছাড়াও বাঁশ ব্যবহার করা হয় খাদ্য দ্রব্য হিসেবে। চীন–ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশেও খাবার হিসেবে বাঁশের চাহিদা রয়েছে। খাদ্য হিসেবেও বাঁশ পুষ্টি উপাদান ও মুখরোচক স্বাদের জন্য পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের কাছে খাবার বাঁশ কোড়ল নামে পরিচিত। এর তৈরি স্যুপ, সালাদ, তরকারি বেশ জনপ্রিয়। সাধারণত বাঁশের অঙ্কুরোদগম হওয়ার পর চার থেকে ছয় ইঞ্চি পর্যন্ত যে কচি বাঁশ হয় সেটাই রান্না করে খাওয়া যায়। খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে বাঁশ হার্টের জন্য ভালো। ফাইবার থাকায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্যে উপশম দেয় এবং হজমশক্তি বাড়ায়।  সিলেটের হাঁস–বাঁশ এর সুনাম অনেক দিনের। বাঁশের কোঁড়লের সঙ্গে হাঁস দিয়ে রান্না করা হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, কচি বাঁশ খাওয়ার চল সম্ভবত চীন থেকেই এসেছে। পান্ডার প্রিয় খাদ্য বাশ ও বাঁশের পাতা উত্তম গোখাদ্য।

কাঠের বিকল্প হিসেবে বাঁশের বিপুল ব্যবহার আছে। সুতা ও কাগজ তৈরিতে বাঁশের ব্যবহার অনেক আগে থেকে হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বাঁশের তন্তু দিয়ে টুপি, স্কার্ফ, গ্লাভস, মোজা ও প্যান্ট তৈরি হচ্ছে। সেইসাথে বিভিন্ন ধরণের কাগজ, টয়লেট পেপার তৈরিতেও ব্যবহার হচ্ছে বাঁশ। বাড়িঘর তৈরির ক্ষেত্রে বাঁশের ব্যবহার রয়েছে। নিত্য ব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্য: আসবাবপত্র, বাদ্যযন্ত্র, রান্নাঘরের বিভিন্ন সরঞ্জাম যেমন কুলো, ডালা, ঝুড়ি, চাঁটাই, প্লেট, বাটি, চামচ, স্ট্র সেইসাথে কৃষি সরঞ্জাম, তোরণ, প্যান্ডেল তৈরি, ল্যাম্প, জামাকাপড়ের হ্যাঙ্গার, ল্যাপটপের কেসিং, ইত্যাদি নানা ধরণের পণ্য বানাতে বাঁশ দরকার হয়। বাঁশের তৈরি হস্তশিল্প পরিবেশবান্ধব, যা বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। নির্মাণসামগ্রী হিসেবে বাঁশ জনপ্রিয়, আমাদের দেশে সেতু থেকে শুরু করে ভবন নির্মাণে বাঁশের ব্যবহার হয়। বাঙালির বিভিন্ন উৎসবে প্যান্ডেল তৈরিতে বাঁশ ব্যবহার হয।

বাঁশ পরিবেশের অকৃত্রিম বন্ধু। প্রকৃতি-পরিবেশ ও প্রাণ রক্ষায় বিশেষ করে, দুর্যোগ মোকাবেলা, পাহাড় ধস, ভূমি ক্ষয়, নদী ভাঙ্গন রোধসহ জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় বাঁশের ভূমিকা বলে শেষ করা যাবে না। বাঁশের অসংখ্য পাতা ঝরে পড়ে, আর এই শুকনো পাতা মাটির পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। মাটিকে উর্বর করার ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা রয়েছে। মাটি সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও বাঁশের বিপুল উপযোগিতা। জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্যও বাঁশের উপযোগিতা বিপুল। অক্সিজেনের উৎস হল বাঁশ। অন্যান্য গাছের তুলনায় প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি অক্সিজেন উৎপন্ন করে বাঁশ। বাঁশ অন্যান্য গাছগাছালির চেয়ে বেশি অক্সিজেন উৎপাদন করে আর বেশি মাত্রায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে। ফলে বাতাস বিশুদ্ধ থাকে। বাঁশঝাড় আশেপাশের তাপমাত্রাকে চার ডিগ্রি পর্যন্ত ঠান্ডা রাখতে সক্ষম। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ঠেকাতে বাঁশের গুরুত্ব রয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বাঁশ চাষের মাধ্যমে বাঁশ শিল্পের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা। পাশাপাশি মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বাঁশ শিল্পকে আরও সম্ভাবনাময় জায়গায় নিয়ে যাওয়া। গড়ে ওঠুক বাঁশ শিল্পের নতুন জনপদ।

লেখক; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)