শিরোনাম:
পাইকগাছা, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

SW News24
বুধবার ● ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » ঘাগরা একটি বিষাক্ত শাক
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » ঘাগরা একটি বিষাক্ত শাক
৩৭ বার পঠিত
বুধবার ● ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ঘাগরা একটি বিষাক্ত শাক

---       প্রকাশ ঘোষ বিধান

ঘাগরা শাক প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বর্ষজীবি বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এটি উত্তর আমেরিকা, পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার স্থানীয় উদ্ভিদ। উত্তর আমেরিকার থেকে পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। দক্ষিণপুর্ব এশিয়ার প্রায় সব দেশে এটি দেখা যায়। প্রাকৃতিকভাবে কোন রকম পরিচর্যা ছাড়াই এরা জন্মায়। ঘাগরা শাক ৫০-১২০ সে.মি. লম্বা হয়। কোনো কোনো প্রজাতি গায়ে কাঁটা থাকে। গবাদিপশু এই উদ্ভিদ খেয়ে বিষক্রিয়ার আক্রান্ত হয় ও মারা যায়। উদ্ভিদটি বড় হওয়ার সাথে সাথে এর বিষাক্ততা কমে যায়। তবে এর পাতা খেলে যকৃতের ক্ষতি হয়।
ঘাগরা গাছ যত্রতত্র জন্মে। জলের ধারে, রেল সড়কের পাশে, পতিত, মাঠান সব জায়গাতেই এর বিস্তার কম বেশি। বংশবিস্তারের জন্যে এর বীজ বিসরণ প্রক্রিয়া বেশ মজার। শুধু যে কাপড়ে আর রোমশ পশুর গায়ে লেগে যায় তার কাঁটাফল তা নয়, বিভিন্ন কৃষিযন্ত্র, লাঙ্গল জোয়াল মইতেও লেগে থাকে এরা। শুকনো বীজ জলে ভেসে চলে যায় দূর দূরান্তরে। আর এভাবে এক জমি থেকে আরেক জমি, এক দেশ থেকে আরেক দেশে দর্পে নেচে নেচে চলে যায় ঘাগরা।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় এর ভিন্ন ভিন্ন নাম ঘাগরা,হেগরা,আগরা, ছোট গোক্ষুর। গোক্ষুর সাপের ফণায় গোরুর ক্ষুরের ন্যায় চিহ্ন দেখা যায়। পুষ্ট ঘাগরা বীজের মুখটা ফাড়া, দ্বিখণ্ডিত ক্ষুরের মতো দেখতে হয়। ঘাগরা ফুল থেকে বীজ হতে হতে গাছে বিষ হয়, পাতাও বিস্বাদ হয়ে পড়ে। এর বিচি ও কচি চারা সবচেয়ে বিষাক্ত। আক্রান্ত প্রাণির মাথা ঘোরে, বমিবমি ভাব হয়, হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় ও অনিয়মিত স্পন্দন হয়, ঘাড়ের মাংশপেশী মুচড়ে যায়, এবং অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

বাংলাদেশের কিছু কিছু অঞ্চলে মানুষ এটিকে শাক হিসেবে খেয়ে বেশ কয়েকজন মৃত্যুমুখে পতিত হয়। সিলেটের এক দুঃখজনক ঘটনা ২০০৭ এর অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে বন্যার কারণে এলাকাবাসী শহর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। খাবার শেষ হয়ে গেলেও পরিমাণ মতো রিলিফ আসছে না। তারা বর্ষার বন্যার সময় ক্ষুধার্ত ছিল। নিকটবর্তী ডাঙ্গা থেকে এলাকাবাসী শাকপাতা সংগ্রহ করে খেতে লাগলো কিন্তু তাও শেষ হয়ে গেল দ্রুত। তারা ঘাগরা শাকও খেতে শুরু করলো।এতে বিষক্রিয়ায় কয়েক দিনেই ৮০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয় আর ২০ জন মারা যায়।

আয়ুর্বেদ এই গাছ ভেষজ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে বহুকাল। এই গাছের অংশবিশেষে বিষাক্ত ও ঔষধি গুণ দুই প্রকার আছে। কিছু দেশে এর পাতা আর কচি ডাঁটা খায় মানুষ। আমাদের দেশেও কখনও মাছের ঝোলের সঙ্গে রান্না করা হয়। কিন্তু ঘাগরা শাক খেতে হয় খুব সতর্কতার সাথে কারণ এর বিষক্রিয়া হতে পারে তা সকলের জানা। অনেক অপকারিতা থাকলেও হলুদ রঙ তৈরিতে ও চীনা ভেষজ চিকিৎসায় এর ব্যবহার রয়েছে। ফসলের ক্ষতিকারক অনেক পোকা এর থেকে দূরে থাকে ফলে কৃষকের উপকার হয়।

লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)