শনিবার ● ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » মুক্তমত » শিক্ষকরা সমাজের আলোকবর্তিকা
শিক্ষকরা সমাজের আলোকবর্তিকা
প্রকাশ ঘোষ বিধান
শিক্ষক হলেন জাতির আলোকবর্তিকাবাহী এবং মানব জাতির রূপকার। একটি আদর্শ, নীতি-নৈতিকতা বোধ সম্পন্ন জাতি তৈরির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিক্ষা। শিক্ষা ছাড়া আলোকিত মানুষ সৃষ্টি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। শিক্ষক হলো তার সুনিপুণ কারিগর। একজন আদর্শ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলেন।
শিক্ষক দিবস হলো শিক্ষকদের সম্মানার্থে পালিত একটি বিশেষ দিবস। এদিন শিক্ষকদেরকে তাদের নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য সম্মাননা দেয়া হয়। ভারতসহ পৃথিবীর বহু দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে শিক্ষক দিবস উদযাপিত হয়। ভিন্ন ভিন্ন দিনে উদযাপিত হলেও অক্টোবর ৫ তারিখ ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর ২৬ তম অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ইউনেস্কো মহাপরিচালক ড. ফ্রেডারিক এম মেয়রের যুগান্তকারী ঘোষণার মাধ্যমে ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালনের শুভ সূচনা করা হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ব্যাপী পালন করা হয়। ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়।
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা আলোকিত সমাজ বিনিমাের্ণর হাতিয়ার। আলোকিত মানুষ সৃষ্টিতে শিক্ষক হলো তার সুনিপুণ কারিগর। যাঁরা শিক্ষাদানের মহান ব্রত পালন করেন তারা হলেন শিক্ষক। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিতদেরই শিক্ষক বলা হয়। একজন আদর্শ শিক্ষকই পারেন তার অনুসারীদের জ্ঞান ও ন্যায় দীক্ষা দিতে। শিক্ষার্থীর মানবতাবোধ কে জাগ্রত করে একজন শিক্ষক কেবল পাঠদান কে সার্থকই করে তোলেন না, পাশাপাশি দেশের উন্নয়নকে ত্বরাণ্বিত করেন। স্বীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করে তাদেরকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলেন।
শিক্ষকদের বলা হয় জাতি গঠনের গারিগর। যে জাতি শিক্ষার অবকাঠামো ও পরিবেশ যত উন্নত সে জাতি সর্বক্ষেত্রেই তত উন্নতি লাভ করে। আর এই জাতি গঠনে মূল কাজটি করেন শিক্ষকরা। একজন মানুষের জীবনে মা-বাবার পরেই জীবন গঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে তার শিক্ষক। যারা বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করে আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে সাহায্য করেন। সেই নিঃস্বার্থভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাওয়া শিক্ষকদের জন্যই পুরোবিশ্বে শিক্ষকদের সম্মানে পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষকদের সম্মান দেওয়ার উদাহরণ রয়েছে কবি কাজী কাদের নেওয়াজের শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতায়। প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জীবনে শিক্ষকের মর্যাদা এবং অবদানের কথা স্মরণ রাখতে হবে।
প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পৃথিবী বদলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে শিক্ষকদের ও বদলাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শিক্ষকদের মানোন্নয়ন ছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন হবে না। ফলে শিক্ষকের দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাধীনতা ও সম্মানের বিষয়ে যত্নশীল হওয়ার মাধ্যমে ভবিষৎ স্বনির্ভর ও উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উপাদান হলো শিক্ষার্থী। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হলো শিক্ষক। শিক্ষার সার্বিক মান উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের শিষ্টাচার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শৃঙ্খলা রক্ষার্থে শিক্ষক ও অভিভাবকদের রয়েছে গুরুত্ব ভূমিকা। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অভিভাবকের গুরুত্ব অপরিসীম। ফলে শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক সফলতা পেতে হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। বর্তমান সময় শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকদের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। মানসিকভাবে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে শিক্ষকেরা অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন। ফলে অভিভাবকদের শিক্ষকদের সহযোগিতা করতে হবে। পরস্পর পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস, আন্তরিকতা ও আস্থার জায়গা তৈরি করতে হবে।
শিক্ষক ছাড়া উন্নত সমাজ ও উজ্জ্বল জীবন কল্পনাতীত। মানুষের জ্ঞানচর্চার শুরু থেকেই শিক্ষকের সূচনা হয়েছে। মানব শিশু পিতা-মাতার মাধ্যমে পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিক্ষকের হাত ধরে বৈচিত্র্যময় পৃথিবী সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে শেখে। জ্ঞানশূন্য মানব শিশুকে শিক্ষকই ভিন্ন চোখে বিশ্ব দেখতে শেখায়। সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের সুস্পষ্ট পার্থক্য বুঝিয়ে শিশুকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষক সর্বদা শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখায়, অনুপ্রেরণা জোগায়। তাই আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে হাজার বছর ধরে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কের মধ্যে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, শাসন ও স্নেহ বিদ্যমান। জীবনে সফলতার পেছনে যার দক্ষতা ও দিকনির্দেশনা থাকে তিনি হচ্ছেন শিক্ষক। সূর্যের মতো বিলিয়ে যান জ্ঞানের ভাণ্ডার। শিক্ষকতা একটি মহান ব্রত। একটি সভ্য জাতি গড়ার কারিগর হচ্ছেন শিক্ষক। আদার্শ শিক্ষক হওয়া খুব সহজ নয়, আত্মবিশ্বাসের এবং সম্মানের জন্য মহৎ দায়িত্ব। শিক্ষকরা আলোর দূত ও স্বপ্নের পূরণের নেতৃত্ব দেয়। শিক্ষকের অবদান জীবনে পরিবর্তন বয়ে আনে।
লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট