রবিবার ● ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » আঞ্চলিক » আশাশুনির কাদাকাটিতে প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি; কয়েক’শ পরিবার বাড়ি ছাড়া, খাদ্য ও পানি সংকট প্রকট
আশাশুনির কাদাকাটিতে প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি; কয়েক’শ পরিবার বাড়ি ছাড়া, খাদ্য ও পানি সংকট প্রকট
আহসান হাবিব, আশাশুনি : গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নে প্রায় ৩ হাজার পরিবারের ১২ সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাড়িতে বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় বাড়ি ছেড়েছেন কয়েক’শ পরিবার। ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা জমির মৎস্য ঘের। সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে খাদ্য ও সুপেয় পানি। স্যানিটেশান ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানাবিদ পানি বাহিত রোগ। এলাকার মানুষ প্রায় দেড় মাস পানি বন্দি অবস্থায় থাকলেও এ বছর পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার কেহ নেই বা করা হয়নি। মানুষ ভীষন কষ্ট করে জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকে টিনের উপর অথবা ছাদের উপর রান্না করে একবেলা খেয়ে দুই বেলা উপোস করে দিন পার করছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করা হলে এলাকার মানুষের দুর্ভোগের অন্ত থাকবে না।
রোববার (২৯ সেপ্টম্বর) উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে কাদাকাটি ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রাম ঘেরে দেখা গেছে, কাদাকাটি উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া যদুয়ারডাঙ্গা, পূর্ব কাদাকাটি, টেংরাখালী, তালবাড়ীয়া-বলাবাড়িয়া, মোকামখালী, মিত্র তেতুলিয়া, শ্রীরামকাটি, ঝিকরা সহ ইউনিয়নের প্রায় ১৫ টি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। যতদূর চোখ যায় চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। মানুষ নিরুপায় হয়ে কোন রকমে ভেলা ও নৌকায় করে চলাচল করছে। অনেকে নিচু এলাকা থেকে বাড়ী ছাড়া হয়ে পার্শ্ববর্তী একটু উচ্চ জায়গায় যেয়ে বসবাস করতে বাধ্য হয়েছে। কেউ কেউ আবার পরিবার পরিজন নিয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে চলে গেছে।
এ ব্যাপারে কাদাকাটি গ্রামের রমজান আলী বলেন, পার্শ্ববর্তী তালা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার পানি বিগত দিনে আমাদের এই ইউনিয়নের উপর দিয়ে বেতনা নদিতে নিষ্কাশিত হয়ে থাকে। কিন্তু কিছু দুষ্কৃতিকারী স্বার্থেন্বেষী ব্যক্তির দ্বারা মানুষ ঘটিত দূর্যোগের ব্যবস্থা করায় আমাদের এলাকার পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। আমরা প্রায় দেড় মাস পানিবন্দি অবস্থায় থাকলেও কেউ আমাদের খবর নিতে বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে পাশে আসেনি। বর্তমানে আমাদের এলাকার মানুষ চরম খাদ্য ও সুপেয় পানি সংকটে ভুগছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলাম বলেন, এলাকার কিছু প্রভাবশালীরা খাল গুলো নেটপাটা দিয়ে দখল করে রেখেছে, যে কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। তিনি দ্রুত নেট পাঠা অপসারণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থার দাবি জানান।
যদুয়ারডাঙ্গা গ্রামের পূর্ণিমা রানী মন্ডল বলেন, আমাদের খুব কষ্টের মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে। পানির মধ্যে থাকায় হাত পায়ে ঘা হচ্ছে। বিষাক্ত সাপ ও পোকার ভয় সব সময় লেগে থাকে। বিশেষ করে আমাদের বাচ্চাদের নিয়ে খুব ভয়ে আছি। কারণ চারিদিকে পানি আর পানি। দ্রুত এ সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে চায়।
মিত্র তেতুলিয়ার খায়রুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়নের অধিকাংশ ঘরবাড়ি পানিতে জলমগ্ন হয়ে আছে, এর প্রধান কারণ হচ্ছে অবৈধভাবে খাল দখল। এলাকার অবৈধ দখল নেওয়া খাল গুলো যদি উন্মুক্ত করা হয় তাহলে পানি নিষ্কাশন হয়ে মানুষকে দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা করা যেত।
কাদাকাটি ইউপি চেয়ারম্যান দীপঙ্কর কুমার সরকার দীপ বলেন, ইউনিয়নের নয়টা ওয়ার্ডের সবগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বহু মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। বর্তমানে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। সুপেয় পানি, সেনিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। এমতাবস্থায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাল উন্মুক্ত, স্লুইচগেট দ্রুত সংস্কার এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা দরকার।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কৃষ্ণা রায় বলেন, আমরা পানি নিষ্কাশনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের তেমন কোন পথই পাচ্ছি না। তবে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে। তিনি সকলে সহযোগীতা কামনা করেছেন।