শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

SW News24
বৃহস্পতিবার ● ১৭ অক্টোবর ২০২৪
প্রথম পাতা » মুক্তমত » সড়ক দুর্ঘটনা অপ্রত্যাশিত মরণফাঁদ
প্রথম পাতা » মুক্তমত » সড়ক দুর্ঘটনা অপ্রত্যাশিত মরণফাঁদ
২৯ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ১৭ অক্টোবর ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সড়ক দুর্ঘটনা অপ্রত্যাশিত মরণফাঁদ

 ---

  প্রকাশ ঘোষ বিধান

    সড়ক দুর্ঘটনা দেশের জন্য একটি অপ্রত্যাশিত মরণফাঁদ। প্রতিদিন সড়কে ঝরছে প্রাণ। প্রতিদিনই খবরের কাগজে ভেসে উঠছে সড়কে মৃত্যুর খবর। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে সড়ক দুর্ঘটনা, ঝরে পড়ছে অসংখ্য তাজা প্রাণ। অনেকেই আবার বেঁচে ফিরছে আজীবন পঙ্গুত্ব নিয়ে, কষ্টে ভুগতে হচ্ছে সারাজীবন। তাইতো বলা হয় একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না।  প্রতিদিন যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে তা উদ্বেগজনক হলেও যথাযথ প্রতিকার নেই। আইনের যথাযথ প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন না করার কারণেই প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।

দেশে কোনভাবেই সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানো যাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। সড়ক দুর্ঘটনা সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও এখন দুর্ঘটনার লাগাম টেনে ধরা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। ফলে প্রায় প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে; পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হতাহতের ঘটনা। দেশে যেভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে তাতে করে দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো দিনে দিনে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে। সড়ক-মহাসড়কে এখন চলাচল করা মানেই নিজের জীবন বাজি রেখে চলাচল করা। সড়ক দুর্ঘটনায় কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্সবিহীন চালক, ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গ, পথচারীর ট্রাফিক আইন না জানা ইত্যাদি। এই দুর্ঘটনার সবচেয়ে বেশি শিকার হয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ, শিশু ও কর্মজীবী মানুষ।

দুর্ঘটনার ফলে দেশের স্বাস্থ্য খাতে অস্বাভাবিকভাবে ব্যয় বেড়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়, অনেক পরিবার চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। কেউ কেউ বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়ে চিকিৎসার অর্থ জোগান দিতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যে পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে সে পরিবারে নেমে আসে অর্থনৈতিক ঘোর অমানিশা, হয়ে পড়ে অসহায়। এর ফলে হারিয়ে যাচ্ছে কারো মা-বাবা, কারো সন্তান কিংবা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে একেকটি পরিবার।

ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে গঠিত নিরাপদ সড়ক চাই এর পক্ষ থেকে প্রতিবছর ২২ অক্টোবরকে নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালনের দাবি উত্থাপন করা হয়। ১৯৯৩ সাল থেকে প্রতিবছর সংগঠনের পক্ষ থেকে এই দিনটিকে নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালন করা হতে থাকে। নিসচার দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৫ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ও অনুমোদন করা হয়।
প্রতিবছর বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকে। দেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘনায় গড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। ওয়ার্ল্ড হেলথ র‌্যাঙ্কিং অনুসারে, সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনাকবলিত ১৮৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৬ তম। ৬১.৯০ শতাংশ মৃত্যু হার নিয়ে সবচেয়ে অনিরাপদ রাস্তার তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে জিম্বাবুয়ে। তারপর যথাক্রমে রয়েছে লাইবেরিয়া, মালাউই, গাম্বিয়া ও টোগো। অন্যদিকে সবচেয়ে নিরাপদ সড়কের তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে সুইডেন। দেশটিতে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ২.৩১ শতাংশ।

মোটরযান আইনে গতিসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া থাকলেও অধিকাংশ চালকই এ নিয়ম মানেন না। মহাসড়ক, শহর ও লোকালয়ের জন্য আলাদা গতিসীমা রয়েছে। মহাসড়কে বাস, কোচ ও পিকআপের সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৫৫ কিলোমিটার। ভারী ট্রাক, লরির গতিবেগ ৫০ কিলোমিটার। ট্রাক্টর ও অন্যান্য ভারী যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৩০ কিলোমিটার। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণ দেখানো হয়েছে ৩৭.৩৮ শতাংশ। পথচারীদের ভুলের কারণে মৃত্যু হয় ৩.৫৬ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে ৫.৭৮ শতাংশ।

দেশের সার্বিক সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, চালকদের অদক্ষতা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বেপরোয়াভাবে দ্রুতগতিতে যানবাহন চালানো। ওভারটেকিং করার প্রবল মানসিকতা, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, জনসচেতনতার অভাব, ট্রাফিক আইন কিংবা রাস্তায় চলাচলের নিয়ম না মানা দুর্ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। সড়ক দুর্ঘটনার অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, রেলক্রসিংয়ে দায়িত্বরত ব্যক্তির গাফিলতি। দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের অবাধ চলাচল। মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও  তিন চাকার যানের ব্যাপক বৃদ্ধি। সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কে বাতি না থাকা। মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা। উলটোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন। পরিকল্পনাহীনভাবে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ, নির্দিষ্ট লেন ধরে গাড়ি না চালিয়ে সড়কের মাঝখান দিয়ে চালকদের গাড়ি চালানোর প্রবণতা, রাস্তায় বিপজ্জনক বাঁক বিদ্যমান থাকা,মাদক সেবন করে গাড়ি চালানো, চালকদের বেপরোয়া গতিসহ ভুলপথে গাড়ি চালানো, রাস্তা দিয়ে চলাচলকারীদের ফুটপাত ব্যবহার না করে রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলাচল, রাস্তা পারাপারের জন্য ওভার ব্রিজ থাকলেও তা ব্যবহার না করা, রাস্তার ওপর বা ফুটপাতে দোকানপাট সাজিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা, দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্ত ট্রাফিক ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি রাস্তায় চলাচলে বিদ্যমান নিয়ম-কানুন প্রতিপালনে সংশ্লিষ্টদের অনীহা।

বুয়েটের সমীক্ষায় দেখা গেছে,  ৩০ শতাংশ গতিতে চলমান কোনো গাড়ির ধাক্কায় আঘাত পেয়ে আহত হলে বাঁচার সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশ। ৪০ শতাংশ গতির গাড়ির ধাক্কায় আঘাত পেয়ে আহত হলে বাঁচার সম্ভাবনা ৪৫ শতাংশে নেমে আসে আর ৫০ শতাংশ গতির গাড়ির ধাক্কায় আহত বাঁচার সম্ভাবনা ৫ শতাংশ নেমে আসে। সুতরাং গতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মাপকাঠি সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে। দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যেভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং দুর্ঘটনার সংখ্যা দিনে দিনে যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা যদি অতিদ্রুত রোধ করার ব্যাপারে বাস্তবমুখী ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় বা যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা না হয়, তাহলে আগামীতে সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়বে। সড়কে প্রাণহানির সংখ্যা কমাতে হলে সড়ককে নিরাপদ করতে হবে। এ জন্য জাতিসংঘ নির্ধারিত নিরাপত্তা কৌশল অনুসরণ করে নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।সড়কে দুর্ঘটনা রোধকল্পে সরকারের গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপের পাশাপাশি মালিক, শ্রমিক, যাত্রী, পথচারী ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের এ সংক্রান্ত আইন ও বিধি-নিষেধ জানা ও সেগুলো মেনে চলার বিকল্প নেই।

লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)