শিরোনাম:
পাইকগাছা, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

SW News24
মঙ্গলবার ● ৫ নভেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » মুক্তমত » ভয়াল ১২ নভেম্বর হোক উপকূল দিবস
প্রথম পাতা » মুক্তমত » ভয়াল ১২ নভেম্বর হোক উপকূল দিবস
৭ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ৫ নভেম্বর ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ভয়াল ১২ নভেম্বর হোক উপকূল দিবস

 ---ভয়াল ১২ নভেম্বর। উপকূলবাসীর কাছে এক ভয়াবহ কালরাত হিসেবে বিবেচিত। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ভোলা সাইক্লোন উপকূলে আঘাত হানে। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মতে ভোলা সাইক্লোন পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়ঙ্করতম প্রাণঘাতী একটি ঝড়। ১৯৭০ সালের এই দিন রাতে উপকূলে আঘাত হানে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ভয়াল ভোলা সাইক্লোন বা গোর্কি। এই দিনে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ১০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। উপকূলীয় দ্বীপচরসহ বহু এলাকার ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে বিরান জনপদে পরিণত হয়। এই ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতায় আজও অনেকে শিউরে ওঠেন।

উপকূলের প্রায় ৫ কোটি মানুষ প্রতিনিয়ত বহুমুখী দুর্যোগের সঙ্গে বাস করেন। ঝড়-ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ এক জনপদের নামই উপকূল। বৈরী প্রতিকূলতা, জলোচ্ছ্বাস, নদী-ভাঙন, লবণাক্ততার প্রভাব নিয়ে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে ফেরে উপকূলের শ্রমজীবী মানুষ। উপকূলের সংকট, সমস্যা, সম্ভাবনা এবং উপকূলের মানুষের অধিকার ও ন্যায্যতার দাবি আদায়ে উপকূলের জন্য একটি বিশেষ দিন অপরিহার্য।

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের র্বতমান বাংলাদশের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে। এ পর্যন্ত রেকের্ডকৃত ঘূর্নিঝড় সমূহের মধ্যে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্নিঝড় এবং এটি সর্বকালের সবচেয়ে ভঙ্করতম প্রাকৃতকি দূর্যোগ। সরকারি হিসাবে এ ঝড়ের কারণে প্রায় ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারায় তবে বেসরকারি হিসাবে প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। এটি ১৯৭০-এর উত্তর ভারতীয় ঘূর্নিঝড় মৌসুমরে ৬ষ্ঠ ঘূর্নিঝড় এবং মৌসুমের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্নিঝড় ছিল। এটি সিম্পসন স্কেলে ক্যাটাগরি ৩ মাত্রার র্ঘূণঝিড় ছিল। ঘূর্ণিঝড়ে ১৫ থেকে ২৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপগুলো প্লাবিত হয়ে ১০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এ ঘূর্ণিঝড়টিকে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ও (ডব্লিউএমও) উল্লেখ করেছে।

১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস পূর্ববঙ্গের মানুষের ভাগ্যবদলে দেয়। তরানিত্ব হয়ে ওঠে মুক্তিসংগ্রাম। তৎকালীন পাকিস্তান সকরারের অবহেলায় লাখো মানুষের মৃত্যুর সেই ঘটনা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামকে তড়ান্বিত করেছে। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার দুর্যোগের সতর্ক বার্তা দেয়নি। প্রাণহানির পর উদ্ধারকাজেও ছিল চরম অবহেলা। এই অবহেলার কারণে কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত উপকূলীয় জেলাগুলোর ১০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ভোলায় অনেক এলাকা জনমানুষশুন্য হয়ে পড়ে। অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ মারা যায় এই জেলায়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির রাষ্ট্রের সূতিকাগার আর ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় মহান স্বাধীনতা সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করে পাকিস্তানের ভৌগোলিক সীমানা পৃথক করে দেয়।

খাদ্যচাহিদার উল্লেখযোগ্য অংশই বর্তমানে উৎপাদিত হচ্ছে দেশের উপকূলে। জাতীয় অর্থনীতিতে উপকূল জিডিপির কমবেশি প্রায় ২৫ শতাংশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সমুদ্রের মৎস্য সেক্টর পুরোপুরি উপকূলকেন্দ্রিক। বাংলাদেশের কলকারখানার পাশাপাশি উপকূলের মৎস্য সেক্টর এবং উপকূলের জনশক্তি দেশের অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখছে। কিন্তু দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় গণমাধ্যমে, উপকূলের শ্রমশক্তি, মৎস্য খাত সেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না। বাংলাদেশের উপকূলে অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। উপকূলের বিপুল জনগোষ্ঠী জাতীয় অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। তা সত্ত্বেও উপকূলের প্রায় ৫ কোটি মানুষ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। জলবায়ু বিরূপ পরিবর্তনের ফলে এই ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। উপকূলের বহু এলাকা অরক্ষিত থেকে যাচ্ছে যুগের পর যুগ। ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় এলাকার মানুষরা দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। গণতন্ত্র, অর্থনীতি ও দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিতে উপকূলীয় অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষদের ভূমিকাও কম নয়।

উপকূলের সংকট, সমস্যা, সম্ভাবনা এবং উপকূলের মানুষের অধিকার ও ন্যায্যতার দাবি আদায়ে উপকূলের জন্য একটি বিশেষ দিন অপরিহার্য। কেননা উপকূলের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ, উপকূলকে প্রাকৃতিক বিপদ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবমুক্ত রাখা, উপকূলের দিকে নীতিনির্ধারণী মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ, উপকূলের মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, উপকূলের সব সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক বিকাশের ধারা সুগম করা, উপকূলের দিকে দেশি-বিদেশি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার নজর বাড়ানো, উপকূলের ইস্যুগুলো জাতির সামনে সহজে তুলে ধরাসহ ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে উপকূল দিবস দাবি প্রাসঙ্গিক।

উপকূলের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ প্রতিনিয়ত বহুমুখী দুর্যোগের সঙ্গে বাস করেন। ঝড়-ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ এক জনপদের নাম উপকূল। বৈরী প্রতিকূলতা, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, লবণাক্ততার প্রভাব নিয়ে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে ফেরে উপকূলের শ্রমজীবী মানুষেরা। উপকূলীয় এলাকার মানুষেরা দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন। গণতন্ত্র, অর্থনীতি ও দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে উপকূলীয় অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষদের ভূমিকাও কম নয়। আর এসব খেটে খাওয়া মানুষদের কথা বিবেচনা করে সরকারকে এগিয়ে আসা উচিত। সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা, এনজিও, গণমাধ্যমসহ সবাই উপকূলের জন্য একটি দিবস প্রত্যাশা করবেন নিশ্চয়ই। উপকূলবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি দিবস ঘোষণা এখন সময়ের দাবি। উপকূল দিবস ঘোষণা করা হলে সরকার, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান, সংবাদ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে উপকূলের গুরুত্ব বাড়বে। এর মাধ্যমে উপকূলের সুরক্ষা ও সেখানকার জনগোষ্ঠীর অধিকার ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে।

প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের ৫৪ বছরে বাংলাদেশ। উপকূল দিবস পালন করা খুবই যৌক্তিক। এটি এখন সময়ের দাবি, ৭০-এর ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়টি   সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে। দিবসটি শুধু বাংলাদেশের নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই দিনটি ওয়ার্ল্ড কোস্টাল ডে তথা বিশ্ব উপকূল দিবস হওয়া উচিত। আমারা আশা করি, ৭০-এর ১২ নভেম্বর ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে উপকূল দিবস পালনের দাবি বাস্তবায়ন করবে।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)