সোমবার ● ১১ নভেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বর্ষার এক অনন্য সৌন্দর্য কলাবতী ফুল
বর্ষার এক অনন্য সৌন্দর্য কলাবতী ফুল
প্রকাশ ঘোষ বিধান :
বর্ষার এক অনন্য ফুল কলাবতী। কলাবতী যে কোনও পরিবেশে বেশ স্বাচ্ছন্দে বেড়ে উঠতে পারে। গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে কিংবা শহরের বিলাসী বাগানে লাল-হলুদ এবং লাল ও হলুদ মেশানো কলাবতী ফুল সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এটি বাগানের সৌন্দর্য-ফুল হিসবেও ব্যাপকভাবে লাগানো হয়।
বাগানের সৌন্দর্য বর্ধনকারী বহুবর্ষজীবি কন্দজ উদ্ভিদ এই সর্বজয়া। কলাবতী বা সর্বজয়া হচ্ছে কানাসি পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ। ক্যারিবীয় ও আমেরিকার ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে এসে আমাদের দেশে স্থান করে নিয়েছে সর্বত্র। এটি বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ। লম্বায় এই গাছ জাত ভেদে ২ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কলাবতী গাছের পাতা স্থুল, দীর্ঘ, খশখশে, অনেকটা কলাপাতা কিংবা হলুদ পাতা বা শটি পাতার মতো। তাই এর নাম কলাবতী।
বর্ষায় এদের প্রচুর ফুল ফুটলেও সারা বছর ধরেই অল্পবিস্তর ফুল ফুটে। একসাথে না ফুটে বার বার, ধীরে ধীরে ফুল ফোটে বলে অনেকদিন এর সৌন্দর্য দেখার সুযোগ হয়। ফুলের রং সাদা, হলুদ, লাল, কমলা, হালকা হলুদ, হলদে সবুজ, গোলাপী, গাঢ় লাল, কমলা লাল ইত্যাদি নানান রং এর হয়। ফুলে উল্লেখযোগ্য কোনো সুগন্ধি নেই। লম্বা পুষ্পদন্ডের অগ্রভাগে গুচ্ছাকারে ৬-২০টি ফুল ফোটে। ফুলের আকৃতি গোড়ার দিকে সরু অগ্রভাগ ছড়ানো। ফুলে ৫টি পাপড়ি দেখা গেলেও সেগুলি আসল পাঁপড়ি নয়। পুংকেশর পরিবর্তিত হয়ে ছদ্ম পাঁপড়ির রূপ নেয়। আসল পাঁপড়ির সংখ্যা ৩টি, ছোট পাতার মত দেখতে, ৪-৬ সেমি লম্বা। ফুল ক্লীব জাতীয়। ফুল শুকিয়ে গেলে গোলাকার সবুজ বা বেগুনি রঙের ১.৫-৩ সেমি দীর্ঘ ফল ধরে। ফল পরিণত হলে বাদামি বর্ণের হয় ও তা ফেটে ভেতর থেকে কালো, মসৃন গোলাকার বা ডিম্বাকার বীজ বেরিয়ে আসে। কন্দ ও বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার। গাছ শুকিয়ে গেলেও মাটির নিচে কন্দ সতেজ থাকে। এ কারণে শীতঘুম শেষে কিংবা কোনো প্রতিকুল অবস্থায় নিজেকে রক্ষা করতে পারে কলাবতী। টবেও চাষ করা যায়।
এ ফুলের রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ। ঘা শুকানো এবং দেহে শক্তি ও স্ফুর্তি সৃষ্টির জন্য এর বীজ উপকারী। মহিলাদের বিভিন্ন চিকিৎসায়, ব্যথা উপশমে এবং বিরেচক হিসাবে এর ব্যবহার রয়েছে। এছাড়া মূল খাদ্য এবং পাতার তন্তু কাগজ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট