বুধবার ● ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » পরিবেশ » শীতে পরিযায়ী পাখির আগমনে পাইকগাছায় শিকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে
শীতে পরিযায়ী পাখির আগমনে পাইকগাছায় শিকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে
প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছাঃ শীত মৌসুম পাইকগাছার বিভিন্ন বিলে পাখি শিকারীরা ফাঁদ পেতে দেশি ও পরিযায়ী পাখি শিকারের উৎসবে মেতে উঠেছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শীতের শুরুতে শীতপ্রধান দেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খাল-বিল ও জলাশয়ে আসতে শুরু করেছে। এলাকার বিভিন্ন ধানক্ষেত, খাল-বিল, জলাশয় ও চিংড়ি ঘের থেকে শিকারীরা এসব পাখি শিকার করছে। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিকারীদের বিরুদ্ধে দু’একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও যথাযথ তদারকি না থাকায় শিকারীরা তৎপর রয়েছে পাখি শিকারে।
উপজেলার পুরাইকাটি, বয়রা, কচুবুনিয়া, বাসাখালী, বাইসারাবাদ,বেতবুনিয়া তেঁতুলতলা, লতা, হানিমুনকিয়া, বাহিরবুনিয়া, দেলুটি, সোলাদানা, চকবগুড়া, খড়িয়া, অকাইবাসী, ঠাকুনবাড়ী, আমিরপুর, বাইনবাড়ীয়া, কুমখালী ও পৌরসভা সহ বিভিন্ন এলাকায় ধানের ক্ষেত, খাল-বিল, জলাশয় ও চিংড়ি ঘের থেকে পাখি শিকার করা হচ্ছে। এ সব খাল বিলে শীত মৌসুমের শুরুতে পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে। পাখিরা এসব বিলের ধান ক্ষেত থেকে পোকা মাকড়সহ খাদ্য সংগ্রহ করে। এ সময় ঘেরে এলাকার লোকজনসহ শিকারীরা পূর্ব থেকেই ওই সব স্থানে বিভিন্ন মাছ ও ফড়িং জাতীয় প্রাণীতে বিষ মিশিয়ে ফাদ পেতে রাখে। তাছাড়া শিকারীরা পাখি শিকারে অভিনব পদ্ধতি বের করেছে। ইন্টারনেট থেকে পাখির ডাক রেকর্ড করে সেই পাখির স্বর ধান ক্ষেতে সাউন্ড বক্সের মাধ্যমে বাজিয়ে পাখি শিকারে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করছে। সাউন্ড বক্সে পাখির ডাক শুনে পরিযায়ী ও স্থানীয় পাখিরা ফাঁদে গিয়ে ধরা পড়ছে। তাছাড়া দুই/তিন একর জুড়ে বাঁশ পুতে কারেন্ট জালের ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করছে। এভাবেই শিকারীরা প্রতিদিন ফাঁদ ও বিষ টোপ দিয়ে পাখি শিকার অব্যাহত রেখেছে।
পাখি শিকার নিষিদ্ধ হলেও শীতের সময়ে রাতের বেলা পাখি শিকারে নেমে পড়ে শিকারিরা। প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে স্থানিয়দের ম্যানেজ করে নির্বিঘ্নে তারা পাখি শিকার করে চলেছে। রাত যত গভীর হয়, ততই পাখি শিকারিদের পাখির কণ্ঠ নকল কণ্ঠের ডাক সাউন্ড বক্সে একটানা বাজতে থাকে। কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না এই শিকারিদের।
পাখি বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের সৃষ্ট নানা করণে পাখিরা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পরিবেশ বিপর্যয় ও খাদ্যের অভাবের কারণে পাখিরা প্রতিবছর শীতকালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওর ও জলাশয়ে আশ্রয় নেয়। পরিযায়ী পাখির নিরাপদ জীবন যাপন ও পরিবেশ অনিরাপদ হয়ে উঠছে। শীত মৌসুমে অনেকে শখ মেটাতে পাখি শিকার করেন। আবার অনেকে শীত মৌসুমটাকে পাখি শিকার পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন। পাখি শিকারীরা ফাঁদ, বিষটোপ, জালপেতে ও গুলি করে পরিযায়ী পাখি শিকারে মেতে ওঠেন। বাজারেও পাখি বিক্রয় করতে দেখা যায়। অনেকেই রসনা তৃপ্তি মেটাতে পাখি কিনে বাড়ি নিয়ে যান। কেউ শখের বসেই পাখি শিকার করুক, আর কেউ অসচেতনতার কারণে শিকার করুক; পাখি শিকার আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
এ ব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র রক্ষায় পাখিদের ভূমিকা অপরিসিম। পরিবেশবান্ধব এই প্রাণীরা মানুষের সুস্থ্য জীবনধারাকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে। পাখি শিকার বন্ধে প্রশাসন সব সময় তৎপর রয়েছে এবং পাখি শিকারীর বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাখি শিকার বন্ধে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য সচেতন এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।