মঙ্গলবার ● ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » ইতিহাস ও ঐতিহ্য » মাগুরায় হারিয়ে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমি
মাগুরায় হারিয়ে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমি
শাহীন আলম তুহিন,মাগুরা থেকে : যথাযথ সংরক্ষনের অভাবে মাগুরার বধ্যভূমি গুলো হারিয়ে যাচ্ছে। পাক বাহিনী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নিরীহ অসহায় মানুষদের ধরে বধ্যভূমিতে নিয়ে আসে। তারপর চোখ বেধে অর্তকিত গুলি করে হত্যা করা হয় তাদের। পাকিস্তানীদের নিমর্মতার শিকার হয় এ দেশের হাজারো মুক্তিকামী মানুষ। ঠিক তেমনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযদ্ধ চলাকালিন সময়ে মাগুরার ৮টি বধ্যভূমিতে চলে এ নির্মম হত্যাযজ্ঞ। ৩০ লক্ষ শহীদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি লাল সবুজের পতাকা। শহিদের প্রাণ ও মা বোনের সভ্রমের বিনিময়ে আজকের এই বাংলাদেশ। বিজয়ের এ মাসে মাগুরা বধ্যভূমি ও গণকবরের তেমনই কিছু চিত্র তুলে ধরা হলো :
পাকা ব্রিজ বধ্যভূমি : মাগুরার বধ্যভূমি গুলোর মধ্যে ঢাকা-মাগুরা মহাসড়কের পাকা ব্রিজটি ছিল অন্যতম। এই ব্রিজেই হত্যা করা হয়েছে নিরীহ অসংখ্য বাঙালিকে। পাক হানাদাররা বিভিন্ন গ্রাম থেকে যুবক, কিশোর, জনতাকে ধরে এনে তাদের গলায় রশি বেঁধে ঝুলিয়ে দিত। তারপর গুলি করে পানিতে ফেলে দেওয়া হতো ।
পারনান্দুয়ালী ক্যানেল : মাগুরা শহরতলীর পারনান্দুয়ালী ক্যানেল এলাকা বর্তমান পল্লী বিদ্যুতের অফিসের অদূরে। এটি ছিল মূলত ৭১ সালের সংগঠিত হত্যাযজ্ঞের মুলস্থান।এখানে মাগুরা শহরের মুক্তিকামী সাধারন মানুষ ও অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়।
পিটি আই বধ্যভূমি : মাগুরা শহরের সাতদোহা নবগঙ্গা নদীর ঘাট ও পিটি আই স্কুলের বর্তমান মহিলা ছাত্রীবাসের অদূরে রয়েছে এ বধ্যভূমি। যুদ্ধকালিন সময়ে এখানে এলাকার নিরীহ সাধারন মানুষকে ধরে নিয়ে হত্যা করে পাক বাহিনীরা। হত্যার পর সেই লাশ মাটিতে পুতে রাখে তারা।
কাঠের পুল বধ্যভূমি : মাগুরা শহরের পাশদিয়ে বয়ে গেছে নবগঙ্গা।এ নদীর একটি শাখা নদী হলো কালিগাঙ।এ কালিগাঙ নদীর উপর নির্মিত হয় কাঠের পুল সংলগ্ন এলাকা ছিল পাকবাহিনীর বধ্যভূমি। যুদ্ধকালিন সময়ে পাকবাহিনী এ স্থানে হত্যাযজ্ঞ চালায়।
দিনান্ত ক্লাব বধ্যভূমি ও নোমানী ময়দান আনসার ক্যাম্প : মাগুরা শহরের নোমানী ময়দান সংলগ্ন দিনান্ত ক্লাব এলাকা ছিল পাক বাহিনীর অন্যতম বধ্যভূমি। মাগুরার দূর-দূরান্ত অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষদের ধরে এনে এখানে পুঁতে রাখা হতো। নোমানী ময়দান আনসার ক্যাম্পের এখানে পাক বাহিনীর স্থাপিত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী বাঙালীদের ধরে এনে অত্যাচার করা হতো।
শালিখার হাজরাহাটি : শালিখার হাজরাহাটি গ্রামে চিত্রানদীর পাড়ে ৮ ব্যক্তির গণকবর রয়েছে। এরা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালির সময়ে সকাল ৭ টায় ডিসেম্বর মাসে ভারত থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে শহিদ হন।
ছয়ঘরিয়ার গণকবর : শালিখা উপজেলার ছয় ঘরিয়াতে দুটি গণকবরের ৬ জন শায়িত আছে। এরা ৯ ডিসেম্বর ভারত থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় তারা রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে শহিদ হন।
তালখড়ি গণ কবর :মুক্তিযুদ্ধে নভেম্বর মাসের দিকে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ এলাকা ফরিদপুর যাওয়ার পথে শালিখার তালখড়িতে রেঞ্জার পুলিশ ও রাজাকারদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে সাতজন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন।
মাগুরা ইতিহাস গবেষক ডাক্তার কাজী তাসুকুজ্জামান জানান,১৯৭১ সালে পাক বাহিনী বাঙালির উপর অমানষিক অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে মাগুরার বধ্যভূমি গুলোতে চলেছে পাক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ। তারা মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় নিরীহ অসহায় মানুষদের ধরে এনে তাদের হত্যা করে। আমাদের বাড়ির একটু অদূরে ছিল পিটিআই স্কুল। এখানে ছিল পাক বাহিনীর বধ্যভূমি। এখানে মানুষকে নির্যাতনের পর হত্যা করতো তারা। তারপর লাশগুলো মাটিতে পুঁতে রাখা হতো।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আব্দুর রহমান বলেন,জেলায় বেশ কিছু মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমি রয়েছে। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে এ বধ্যভূমি গুলো হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা ইতিপূবে সংশ্øিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে সংরক্ষণের জন্য অবহিত করেও কোন সাড়া পায়নি। আমরা চাই এ বধ্যভূমি গুলো আমাদের সম্পদ। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির উদ্দেশ্য এ বধ্যভূমি গুলো সংরক্ষণ করা উচিত।