সোমবার ● ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » কৃষি » শীমের গ্রাম লক্ষীকান্দর ; এ চাষে লাভবান শতাধিক কৃষক
শীমের গ্রাম লক্ষীকান্দর ; এ চাষে লাভবান শতাধিক কৃষক
শাহীন আলম তুহিন,মাগুরা থেকে : মাগুরা সদরের লক্ষীকান্দর গ্রাম শিম পল্লী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। লক্ষীকান্দর গ্রামের মাঠে মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে সবুজ সবুজ শিমের ক্ষেত। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এ শিম ক্ষেতে কাজ শতাধিক কৃষাণ-কৃষাণী। আর এ চাষে লাভ হচ্ছে শতাধিক কৃষক। সবুজ পাতার মধ্যে বেগুনি আর সাদা শিম ফুল দোলা খাচ্ছে। আবার অনেক শিম ক্ষেতে গোছায় গোছায় ধরেছে শিম আর শিম। বাতাসে দুলছে সেই শিম। যা দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে। শীত এলেই লক্ষীকান্দর গ্রামের নারীরা সকাল থেকে শিম তুলতে মেতে উঠে ক্ষেতে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শিম তোলা শেষ করে তা বাড়ীতে নিয়ে যায় কৃষক। পরের দিন সকালে সেই শিম পাইকেরী বাজারে আনা হয় বিক্রির জন্য।
লক্ষীকান্দর গ্রামের শিম চাষী ব্ষ্ণিু পদ বিশ্বাস জানান,আমি পনেরো বছর ধরে শিম চাষ করছি। প্রতি বছর এ চাষে পেয়েছি সাফল্য। শিম বিক্রি করে আশানুরুপ লাভ করেছি। এ বছর আমি ১৫ শতক জমিতে শিমের আবাদ করেছি। শ্রাবণ মাসের শেষে শিমের বীজ বুনতে হয়। শিমের বীজ বোনার আগে বাশঁ পাটকাটি দিয়ে উঁচু করে জাঙ্গলে তৈরি করতে হয়। শিমের বীজ বের হবার সাথে সাথে যতœ আরো বাড়াতে হয়। প্রতিটি শিম গাছের লতাগুলো পাটকাটির সাহায্যে উঁচু জাঙ্গলের সাহায্যে উঁঠাতে হবে। তারপর সময়মতো সার ও পানি দিতে হবে। শিমের ফুল আসার সাথে সাথে গাছের পরিচর্যা আরো বাড়াতে হবে। এরপর ফুল থেকে ফল আসার পর পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে কীটনাশক প্রযোগ করতে হবে। এ বছর ক্ষেত থেকে ২ বার শিম উত্তোলন করেছি। প্রথমবার বিক্রি করেছি ২০ হাজার টাকা। দ্বিতীয়বার বিক্রি করেছি ১৫ হাজার টাকা ।
একই গ্রামের শিম চাষী লক্ষণ চন্দ্র মন্ডল বলেন,আমার চাষ মুলত শিম চাষের উপর। প্রতি বছর ৩ বিঘা জমিতে আমি শিম চাষ করি । বারি-৩ জাতের শিম চাষে এ বছর পেয়েছি সাফল্য। আমার চলতি বছর এ চাষে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। এবার লক্ষাধিক টাকার শিম বিক্রি করবো বলে আশা রাখছি। শীতের শুরুতে প্রথম চালানে মাঠ থেকে ৬০ কেজি শিম উত্তোলন করে পাইকেরি বাজারে ৫৫-৬০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি করেছি। তারপর নভেম্বর মাঠে ২ বার মাঠ থেকে শিম উত্তোলন করেছি। এখন পাইকেরি বাজারে শিমের দর কমে গেছে। প্রতি কেজি শিম ২০-২৫ টাকা দরে পাচ্ছি। প্রতি দিনই আমার ক্ষেত থেকে শিম উওোলন হচ্ছে। ভোর থেকে শিম ক্ষেতে ৭-৮ জন নারী শ্রমিক কাজ করছে। জানুয়ারি মাস পর্যন্ত শিম উওোলন চলবে। তারপর শিমের গাছে আর ধর আসবে না। আমাদের লক্ষীকান্দর গ্রামের শিমের কদর রয়েছে। এ শিম জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। বাইরের অনেক শিম ব্যাপারীরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করে ক্ষেত থেকেই নিয়ে যাচ্ছে।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড.ইয়াসিন আলী বলেন, এ বছর জেলায় ৬৬ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। এবার জেলায় ইপসা-২,আরলি-৪৫ ও বারি-১ জাতের শিম চাষ বেশি হয়েছে। শিম চাষের জন্য জেলার কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শিম চাষে অনেক চাষীরা সাফল্য পাওয়ায় অনেকে এ চাষে ঝুঁকছেন। এ চাষে পরিশ্রম বেশি লাভ কম থাকার কারণে চাষী চাষ করতে চান না। শীতের শুরুতে শিম উঠলে ভালো অর্থ পাওয়া যায়। নানা জাতের শিম আছে। শিমের পুষ্টিগুণ ভালো। প্রতিদিন শিম খেলে অনেক রোগ প্রতিরোধ হয়। তাই এ চাষে আমরা জেলার কৃষকদের আরো উদ্ধদ্ধ করার চেষ্টা করছি।