সোমবার ● ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » অপরাধ » নড়াইলে নারী ইউপি সদস্যকে হত্যার অভিযোগে মামলা; বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
নড়াইলে নারী ইউপি সদস্যকে হত্যার অভিযোগে মামলা; বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
ফরহাদ খান, নড়াইল; নড়াইল সদরের মাইজপাড়া ইউনিয়নের (ইউপি) সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য বাসনা মল্লিককে (৫২) ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে দোষীদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাইজপাড়া ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে রোববার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে মাইজপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় বক্তব্য দেন-জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাহিদুর রহমান পলাশ, মাইজপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মিঠু, মাইজপাড়া ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির বেলাল হোসাইন, মানববন্ধনের আহবায়ক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অগ্রজ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক শিহাবুর রহমান শিহাব, জেলা ছাত্রঅধিকার পরিষদের সভাপতি আনিসুজ্জামান সোহাগ, সদর উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আল শাহারিয়ার আমিনসহ অনেকে।
বক্তারা বলেন, মাইজপাড়া ইউনিয়নে কখনোই এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেনি। এলাকাকে অশান্ত করার জন্য একটি মহল পরিকল্পিত ভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
পুলিশ জানায়, গত শনিবার রাতে গণধর্ষণ ও বিষ প্রয়োগে মাইজপাড়া ইউপি সদস্য বাসনা মল্লিককে হত্যার অভিযোগে নিহতের ছেলে রিংকু মল্লিক বাদী হয়ে চারজনের নামে নড়াইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এরা হলো-মাইজপাড়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের ফারুক মোল্যা (৫০), রজিবুল মোল্যা (৩০), চঞ্চল মোল্যা (৩৫) ও শফিকুল ইসলাম (৩৩)। অজ্ঞাত আসামি আরো দু’জন। এর মধ্যে গ্রেফতারকৃত আসামি ফারুক মোল্যার রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে পুলিশ। ৩ জানুয়ারি রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ২৪ ডিসেম্বর নারী ইউপি সদস্য বাসনা মল্লিক নড়াইলের মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে উপকারভোগীদের মাঝে টিসিবির পণ্য বিতরণ শেষে পোড়াডাঙ্গা গ্রামে বাড়িতে ফেরার পথে ওইদিন সন্ধ্যায় পাশের দৌলতপুর গ্রামের রজিবুল মোল্যা মোবাইলফোনে পাওনা টাকা দেয়ার কথা বলে ওই গ্রামের মুক্তার মোল্যার বাড়িতে বাসনাকে ডেকে নেয়। এ সময় মুক্তার মোল্যার বাড়িতে আটকিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে গণধর্ষণ করে আসামিরা। বাসনা বিষয়টি ফাঁস করে দেয়ার কথা বললে আসামিরা তাকে মারধর করে জোরপূর্বক মুখে বিষ জাতীয় কিছু ঢেলে দেয়। বাসনা রাত ৮ টার দিকে বাড়িতে এসে খাওয়ার পর বমি শুরু করেন। বেশি অসুস্থ হলে পড়লে ঘটনার পরেরদিন দুপুরে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বাসনাকে ভর্তি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার দিকে মৃত্যুর পর তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আ ন ম বজলুর রশীদ বলেন, ভুক্তভোগীর পাকস্থলিতে বিষের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাকে ধর্ষণের পর বিষ খায়লে দেয়া হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
বাসনার ছেলে রিংকু মল্লিক বলেন, মৃত্যুর আগে আমার মা তাকে ধর্ষণের কথা এবং বিষ জাতীয় কিছু খাওয়ানোর কথা বলে গেছেন। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। দোষীদের বিচার চাই।
এলাকাবাসী জানান, রজিবুলের সঙ্গে বাসনা মল্লিকের দীর্ঘদিনের পরকীয়া প্রেমের গুঞ্জন রয়েছে। এই সুবাদে পাওনা টাকা দেয়ার কথা বলে পরকীয়া প্রেমিক রজিবুল বাসনা মল্লিককে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেছে। অন্য আসামিরা রজিবুলকে এ কাজে সহযোগিতা করেছে এবং ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দু’দিন চিকিৎসাধীন থেকে বাসনা মারা গেছেন। আমরা এই হত্যাকান্ডের যথাযথ বিচার চাই।
নড়াইল সদর থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম বলেন, এ মামলার আসামি ফারুক মোল্যার রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আগামি ৩ জানুয়ারি রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।