মঙ্গলবার ● ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » আঞ্চলিক » কপিলমুনিতে পলাশ কর্মকার ও তার বাবার বিরুদ্ধে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন
কপিলমুনিতে পলাশ কর্মকার ও তার বাবার বিরুদ্ধে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন
সুকুমার কর্মকারের ছেলে পলাশ কর্মকার নিজ বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলনে করে সিআইডি কর্মকর্তা ও ছোট কাকা পঙ্কজসহ তার ছেলে সাংবাদিক রাম প্রসাদ কর্মকারকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও মনগড়া অভিযোগের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় কপিলমুনি প্রেসক্লাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন,পঙ্কজ কর্মকারের ছেলে সাংবাদিক রাম প্রসাদ কর্মকার।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ছোটভাই পঙ্কজ কর্মকারকে বঞ্চিত করে বড় ভাই সুকুমার কর্মকার কর্তৃক জাল-তঞ্চকতামূলক কাগজপত্র সৃষ্টি করে দোকান ঘর দখলের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বড় ভাই সুকুমার কর্মকার জেল-হাজতে রয়েছে। মামলায় আদালতের নির্দেশে সিআইডির তদন্তে বড়ভাই সুকুমার কর্মকারকে দায়ী করে প্রতিবেদন দাখিল ও পরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় পুলিশ সুকুমারসহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠায়। সুকুমার কর্মকার জেলে থাকায় তার ছেলে পলাশ কর্মকার বর্তমানে বেপরোয় হয়ে উঠেছে। বাড়িতে আয়োজিত কথিত সম্মেলনে মিথ্যাচারের পাশাপাশি তার ও তার পরিবারের সদস্যসহ মামলার স্বাক্ষীদের নানাবিধ হুমকি-ধামকি এমনকি জীবননাশের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে।
রামপ্রসাদ কর্মকার বলেন, তার দাদু উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়নের উত্তর সলুয়া গ্রামের মৃত গোষ্ট কর্মকার তার জীবদ্দশায় গত ১০/১২/৯৫ তারিখে নিয়মানুযায়ী এককালীণ ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়ে কপিলমুনি সহচরী বিদ্যা মন্দিরের মালিকানাধীন সম্পতিতে নির্মিত মার্কেটের (স্বর্ণ পট্টির) একটি পজিশন বন্দোবস্ত নেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৫০ টাকার ননজুডিশিয়াল একটি লিখিত চুক্তিপত্রের মাধ্যমে এককালীণ টাকা পরিশোধ ও মাসিক ভাড়া চুক্তিপত্রে গোষ্ট কর্মকার জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী নিজ নাম স্বাক্ষর করেন। এরপর ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারী গোস্ট কর্মকারের মৃত্যু হলে তার বড় ছেলে সুকুমার কর্মকার বাবার স্বাক্ষর জাল করে ব্যাগডেটে ১৬/০৯/৯৯ তারিখে একটি তঞ্চকতাপূর্ণ হস্তান্তর পত্র প্রস্তুত করে ঐ দোকান ঘরের দখল নিয়ে সেখানে ছেলে পলাশ কর্মকারকে দিয়ে জুয়েলারীর ব্যবসা শুরু করান।
প্রকাশ থাকে যে, মালিকানা হস্তান্তরে স্কুল কর্তৃপক্ষের দেওয়া শর্তাবলীর ৫নং শর্তানুযায়ী পজিশন বা দোকান ঘর হস্তান্তরে প্রথম পক্ষ অর্থাৎ স্কুল কতৃপক্ষকে জানিয়ে নতুন ভাড়াটিয়া উদ্বৃত্ত এগ্রিমেন্টবাবদ আরো ১০ হাজার টাকা প্রদানপূর্বক স্কুল কতৃপক্ষের সাথে নতুন চুক্তিপত্রে আবদ্ধ হবেন। তবে তঞ্চকতাপূর্ণ হস্তান্তর পত্রে স্কুল কতৃপক্ষের শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। এছাড়া গোষ্ট কর্মকারের নিকট থেকে স্কুল কতৃপক্ষ ২০০৬ সাল পর্যন্ত ভাড়া গ্রহন করে রশিদ প্রদান করেন। যদি ৯৯ সালে গোষ্ট কর্মকার সুকুমারকে দোকান হস্তান্তর করেন তবে, ২০০৬ সাল পর্যন্ত স্কুল কতৃপক্ষ গোষ্ট কর্মকারের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে রশিদ দেন কিভাবে? হস্তান্তর পত্র বৈধ হলে তো স্কুল কতৃপক্ষ সুকুমারের কাছ থেকে ভাড়া গ্রহন করবেন। এয়াড়া ৯৯ সালের হস্তন্তরপত্রে ৩ জন স্বাক্ষীর ২ জনের স্বাক্ষরে পৃথক তারিখ উল্লেখ থাকে যথাক্রমে ২০/৯/৯৯ ও ২৫/৯/৯৯। ইতোমধ্যে ৩ জন স্বাক্ষীর একজন ধনঞ্জয় সাধু নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করেন যেখানে তিনি উল্লেখ করেন, সুকুমার কর্মকারের ছেলে পলাশ কর্মকার একটি স্ট্যাম্প নিয়ে তাতে স্বাক্ষর করতে বলায় তিনি স্বাক্ষর করেছিলেন তবে সেখানে গোষ্ট কর্মকার উপস্থিত ছিলেননা।
অভিযোগে আরো বলা হয়, গোষ্ট কর্মকার তার নিজ নাম স্বাক্ষরে বরাবর আইডি অনুযায়ী গোষ্ট কর্মকার লিখলেও তঞ্চকতাপূর্ণ চুক্তিপত্রে তার স্বাক্ষর হিসেবে গোষ্ট বিহারী কর্মকার দেখানো হয়েছে। এছাড়া চুক্তিপত্রের ১০০ ও ৫০ টাকার স্ট্যাম্প দুটি পাশাপাশি সিরিয়াল অনুসরণ না করে যথাক্রমে ১৫৩৮৬১৫ ও জ ৫৫৫৮৪৩২ দেখানো হয়েছে।
এসব বিষয়ে ঘরের অর্ধেক মালিকানা দাবি করে কপিলমুনি সহচরী বিদ্যা মন্দির বরাবর একটি আবেদন করলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তার কাকাতো ভাই পলাশ কর্মকার গত আওয়ামীলীগ সরকারের শাষনামলে সাবেক সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবুর প্রভাব কাজে লাগিয়ে তাকে দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রভাবিত করে ১০/৮/২২ সালে সুকুমার কর্মকারের পক্ষে একক মালিকানার প্রতিবেদন নেন। এরপর স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি খুলনা জেলা প্রশাসক বরাবর বিষয়টি নিয়ে আবেদন করলে তিনি বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। এসময় পলাশ কর্মকার একই প্রভাব খাটিয়ে তার বাবা সুকুমার কর্মকারের পক্ষে প্রতিবেদন নেন।
তিনি আরো বলেন, তার পিতা পঙ্কজ কর্মকার গত ৩০/১১/২২ তারিখে পাইকগাছা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সুকুমারকে প্রধান করে তিনজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। যার নং ১৩২৩/২২। আদালত মামলায় ৮/১২/২২ তারিখে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডি খুলনাকে নির্দেশ দেন। যার স্মারক নং-৬৭০/২২।
যার প্রেক্ষিতে সিআইডি মেট্টো এন্ড জেলা মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১/১/২০২৩ তারিখে এসএস/খুলনা/কোর্ট/১৭১- ২০২২/৫/১(৩) নং স্মারকে সিআইডির উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নি:) অমিতাভ সন্যাসীকে তদন্তকারী অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেন। তিনি গত ২৪/১০/২৪ তারিখে ৩০৪১ নং স্মারকে সরেজমিন তদন্ত, ফরেনসিক বিভাগের সহযোগীতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। যেখানে বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি সুকুমার কর্মকার নিজে আতœসাৎ করতে মিথ্যা স্বাক্ষী প্রস্তুত ও জালিয়াতির মাধ্যমে তঞ্চকতাপূর্ণ কাগজপত্র সৃষ্টি করে বলে উল্লেখ করেন।
মামলায় সিআইডির প্রতিবেদন বিপক্ষে চলে যাওয়ায় জালিয়াতির মূল হোতা সুকুমার কর্মকার ও হস্তান্তর চুক্তিপত্রের কথিত স্বাক্ষী গোপাল চন্দ্র দাশসহ আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারী হলে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাতে থানা পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। যাদের একজন গোপাল চন্দ্র দাশের জামিন হলেও সুকুমার এখনো জেলে রয়েছে।
এদিকে ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সুকুমার কর্মকারের ছেলে পলাশ কর্মকার নিজেকে বিশেষ ব্যক্তি হিসেবে জাহির করে শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) নিজ বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। যেখানে পঙ্কজ কর্মকার ও তার ছেলে সাংবাদিক রামপ্রসাদ কর্মকারসহ সংশ্লিষ্ট সিআইডি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মনগড়া কল্পকাহিনী মঞ্চস্থ করেন। এমনকি সিআইডি কর্মকর্তা অমিতাভ সন্নাসীকে তদন্ত প্রতিবেদন পক্ষে নেওয়ার জন্য নগদ ৪৫ হাজার টাকা ঘুষ দেন বলে দাবি করেন। এরপর তিনি আরো ৩০ হাজার টাকা দাবি করলে দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি সুকুমারের বিরুদ্ধে ঐ প্রতিবেদন দাখিল করেন বলে অভিযোগ করা হয়।
সম্মেলনে রাম প্রসাদ আরো বলেন, সুকুমারের পক্ষে সকল কাগজপত্র বৈধ হলে তিনি সিআইডি কর্মকর্তাকে ৪৫ হাজার টাকা ঘুষ দিলেন কেন। তাছাড়া কোন কর্মকর্তা কারো কাছ থেকে ঘুষ নিলে কারো সামনে নিবেন কেন। তিনি আরো দাবি করেন, পলাশ নিজেকে একজন প্রভাবশালী সাংবাদিক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হিসেবে জাহির করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠান প্রধানকে প্রভাবিত করেন। তিনি বলেন, পলাশ তাকে (রামপ্রসাদ কর্মকারকে) ছাত্রলীগের ক্যাডার হিসিবে অভিহিত করেছেন। তিনি দাবি করেন, বিষয়টি নিতান্তই হাস্যকর। মূলত তিনি কোন দিন কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। বর্তমানে তিনি দৈনিক চৌকস পত্রিকার কপিলমুনি প্রতিনিধি ও কপিলমুনি প্রেসক্লাবের সদস্য। তাছাড়া তিনি নিজে ছাত্রলীগের ক্যাডার হলে আওয়ামী লীগের শাষনামলে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রতিবেদন তার বাবার (পঙ্কজ) পক্ষে না দিয়ে জ্যাঠার (সুকুমারের) পক্ষে দিয়েছিল কেন।
অভিযোগে বলা হয়, পলাশ কর্মকার ও তার পিতা সুকুমার বরাবরই সুযোগ সন্ধানী ও পরসম্পদলোভী। স্বীয়স্বার্থ হাসিলের জন্য পলাশ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকারের জনপ্রতিনিধিদের সাথে হাত মিলিয়ে চলে। বিশেষ করে গত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে সে স্থানীয় এমপি আক্তারুজ্জামান বাবুর চিহ্নিত দোসর হিসেবে চিহ্নিত ছিল। এরপরও তার নেতৃত্বে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সুযোগ নিয়ে ঐদিন বিকেল ৪ টার দিকে পঙ্কজের লোহার দোকান লুট করিয়ে দেয়। যাতে তার প্রায় ৮ লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন হয়। বর্তমানে রাতারাতি ভোলপাল্টে আওয়ামী বিরোধী হওয়ার ভান ধরছে।