মঙ্গলবার ● ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » পরিবেশ » পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বনবিবি
পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বনবিবি
পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাইকগাছার পরিবেশবাদী সংগঠণ বনবিবি পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় তৈরিতে গাছে গাছে কৃত্রিম বাসা স্থাপনের এক ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালন করেছে।
পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ানে পাখিদের অবাধ বিচরণ, নিরাপদ আশ্রয় তৈরি ও বংশবৃদ্ধির জন্য গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি, কাঠ-টিনের তৈরি বাসা ও বাঁশের তৈরি বাসা বসানো হয়েছে। এতে ঝড়, বৃষ্টি, রোদ থেকে বাঁচবে পাখিরা। পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়, রক্ষা ও তাদের বংশবৃদ্ধির জন্য উঁচু গাছগুলোতে আড়াই হাজার কৃত্রিম বাসা বসানো হয়েছে। হাঁড়িগুলোতে ছোট ছোট ছিদ্র করে দেওয়া হয়েছে। এতে বৃষ্টির পানি ঢুকলেও নিচের ছিদ্রগুলো দিয়ে পড়ে যাবে। তাছাড়া হাঁড়ির দুই দিকে বড় দুটি মুখ রাখা হয়েছে। ফলে হাঁড়ির মধ্যে ঢুকতে ও বের হতে পাখিদের কোনো সমস্যা হবে না।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকার বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ আছে। এ আইনে পাখি শিকার, হত্যা, আটক ও কেনা বেচা দন্ডনীয় অপরাধ। পাখি হত্যা করলে যার সর্বোচ্চ শাস্তি ২ বছর কারাদণ্ড এবং ২ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
পাখিদের নিরাপদ অভয়াশ্রম গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিবেশবাদী বনবিবি সংগঠনের উদ্যোগে ২০১৬ সাল থেকে পাখিদের নিরাপদ কৃত্রিম আবাসস্থল গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সে সময় গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি লাগানো হয়। কিন্তু দেখা যায়, ঝড়ের সময় কিছু গাছের ডাল ভেঙ্গে ও ডালে ডালে চাপ লেগে হাঁড়ি ভেঙে পাখির ছানাগুলো নিচে পড়ে মারা যাচ্ছে। তাই মাটির পাত্রের পাশাপাশি বাঁশ ও কাঠ দিযে তৈরি করা বাসা গাছে বাধা হচ্ছে, যাতে এগুলো নিরাপদ থাকে, ভেঙে না যায়। এই বাসাগুলো বসানোর মাধ্যমে পাখিরা আরও নিরাপদ আবাসস্থল পাবে। এসব মাটির হাঁড়ি ঝড়-বৃষ্টি ও শীত থেকে সুরক্ষিত থাকার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও প্রজননে পাখিদের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ উদ্যোগ ধীরে ধীরে জেলা-উপজেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। খুলনা জেলা সদর, ডুমরিয়া, পাইকগাছা, কয়রা ও তালা উপজেলার বিভিন্ন গাছে পাখির জন্য বাসা স্থাপন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার পাঁচশত পাখির জন্য বিভিন্ন প্রকার বাসা স্থাপন করা হয়েছে।
পাখি বাঁচাও, প্রকৃতি বাঁচাও এ শ্লোগানকে সামনে রেখে পাখির নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করার লক্ষে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বনবিবি পাইকগাছা উপজেলায় ২০১৬ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। পাখির অভয়ারণ্য তৈরির লক্ষে পাখির সুরক্ষা, নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিতে ২০২২ সাল থেকে খুলনা জেলার রেলওয়ে স্কুল মাঠের গাছে ডুমরিয়া উপজেলা চত্ত্বরসহ বিভিন্ন ইউনিয়ানে গাছে গাছে পাখির বাসার জন্য মাটির পাত্র, কাঠের বাক্স, ঝুড়ি, বাঁশের তৈরি বাসা স্থাপনসহ সচেতনতামূলক লিফলেট বিতারণ ও উদ্ভবকরণ সভা অব্যহত রয়েছে।
পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বনবিবি’র সভাপতি সাংবাদিক ও কলামিস্ট প্রকাশ ঘোষ বিধান বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে দারুণভাবে পরিবর্তিত হয়ে গেছে জলবায়ু, আবহাওয়ায় এসেছে পরিবর্তন। বিভিন্ন মৌসুমী বৈশিষ্ট্যের তারতম্য ঘটেছে। অসময়ে অতিবৃষ্টি, খরা ও ঝড়ের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাখির প্রধান প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি - জুন পর্যন্ত সময়ে অতি বৃষ্টি ও ঝড়ের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে পাখিদের বাসা বাঁধা, ডিমের সুরক্ষা ও সংখ্যা বৃদ্ধির কার্যক্রম। আর তাই অনেক সাধারণ পাখি প্রজননের সুযোগ না পেয়ে বংশ হ্রাসের কারণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। অথচ পাখিদের প্রজাতি বৈচিত্র ও সংখ্যার সাম্যাবস্থা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তাই পাখি সংরক্ষণে পরিবর্তিত পরিবেশে বাসা বাঁধার সুযোগ সৃষ্টি করে সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ খুবই দরকার।
পাখির বসবাস উপযোগী গড়ে তোলা পরিবেশ ধরে রাখার দায়িত্ব সকলের। এ জন্য সরকারি বিধি-নিষেধ সবাইকে মানতে হবে। পাখির অভয়ারণ্য নিশ্চিত করার স্বার্থে আরোপ করা এসব বিধি-নিষেধ মানে চলতে হবে। পাখির প্রতি সকলকে দায়িত্বশীল ও যত্নবান হতে হবে।