![দোল পূর্ণিমা](https://www.swnews24.com/cloud/archives/2021/03/download4-micro.jpg)
![SW News24](https://www.swnews24.com./cloud/archives/fileman/logo.jpg)
মঙ্গলবার ● ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » সুন্দরবন » প্রজনন মৌসুম সুন্দরবনে অসাধু ব্যক্তিরা কাঁকড়া শিকার করায় কাঁকড়া বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে
প্রজনন মৌসুম সুন্দরবনে অসাধু ব্যক্তিরা কাঁকড়া শিকার করায় কাঁকড়া বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে
প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরায় নিষেধাজ্ঞা এক মাসের বেশ সময় পার হয়েছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম। এ সময় সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ। তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বনের বিভিন্ন নদী ও খালে অসাধু ব্যক্তিরা ডিমওয়ালা কাঁকড়া শিকার করছে। প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা কাঁকড়া শিকার করায় সুন্দরবনে কাঁকড়া বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার যেমন আশঙ্কা রয়েছে। তেমনি সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশ। আর জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। সুন্দরবনের জলভাগে ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া ও ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ আছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এ দুই মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম হওয়ায় ৫৯ দিনের জন্য জেলেদের সুন্দরবনে প্রবেশ করে কাঁকড়া ধরার অনুমতি বন্ধ রাখে বন বিভাগ।
বিশ্বের অন্যতম মৎস্য সম্পদ কাঁকড়ার প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র হলো ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। আর ম্যানগ্রোভ এলাকা হলো সুন্দরবনসহ দেশের উপকূলীয় এলাকা। এখান থেকে আহরিত কাঁকড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা ও দাম বেশি থাকায় প্রজনন মৌসুমের নিষেধাজ্ঞা মানছেন না কাঁকড়া আহরণকারী ও ব্যবসায়ীরা। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এই ২ মাস জুড়ে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, হংকং, চীনসহ বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। আর এসব উৎসবের খাদ্য তালিকায় ডিমওয়ালা কাঁকড়ার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে ডিমওয়ালা কাঁকড়া ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এভাবে প্রজননকালীন কাঁকড়া শিকার চলতে থাকলে বাগদা ও গলদা চিংড়ির চেয়েও উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় এ সম্পদ অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশ্বখ্যাত শিলা কাঁকড়ার প্রধান উৎস সুন্দরবন। এই বনে রয়েছে প্রায় ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া। প্রজনন বাড়ানোর লক্ষ্যে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ। কিন্তু অসাধু জেলেরা তোয়াক্কা না করে সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগের বিভিন্ন স্টেশনের নদী ও খালে অবাধে ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া শিকার করছেন। ১ জানুয়ারি থেকে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি ও জেলেদের কাঁকড়া ধরার পাস বন্ধ রাখা হয়েছে।
জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই দুই মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের লোনাপানিতে কাঁকড়া ডিম ছাড়ে। তবে মাঘ মাসের প্রথম অমাবস্য বা পূর্ণিমায় সুন্দরবনের শিলা কাঁকড়া সব থেকে বেশি ডিম ছেড়ে থাকে। ডিম ছাড়ার সময় নদ-নদী ও খালের কূল দিয়ে বিচরণ করে ডিমওয়ালা কাঁকড়া। এ সময় ডিমওয়ালা কাঁকড়া কিছুটা শান্ত ও স্থির থাকে। সুন্দরবন ও উপকূলসংলগ্ন নদনদী খালে বন বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ডিমওয়ালা কাঁকড়া ধরা হচ্ছে। ডিম ছাড়ার মৌসুমে অবাধে কাঁকড়া ধরায় কাঁকড়ার প্রজনন ও উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় ধারণা করছে বিশেষজ্ঞরা। ডিসেম্বর থেকে কাঁকড়ার ডিম হওয়া শুরু করে এবং জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস কাঁকড়ার ডিম ছাড়া শুরু করে। তাই প্রজনন মৌসুমে সরকারিভাবে কাঁকড়া ধরার ওপর এই দুই মাস নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তারপরও বন বিভাগের নির্দেশ অমান্য করে সুন্দরবন এলাকায় সারা বছরের মতো কাঁকড়া ধরা অব্যাহত রয়েছে।
উপকূল এলাকার মৎস্য লিজ ঘেরগুলোতে প্রচুর পরিমাণ কাঁকড়া পাওয়া যায়। তবে এ সময় মৎস্য লিজ ঘেরগুলো আগামী মৌসুমের জন্য পানি নিষ্কাশন করে ঘের প্রস্তুত করায় ঘেরে কাঁকড়ার সংখ্যা কমে গেছে। ঘের এলাকায় কাঁকড়া না পাওয়ায় জেলেরা সুন্দরবন ও উপকূলসংলগ্ন নদনদী খাল থেকে কাঁকড়া শিকার করছে। বনের আহরণকৃত কাঁকড়া আড়ত বা বাজারে পৌঁছাতে পারলে সেটি হ্যাচারি কাঁকড়া বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শীত মৌসুমে কাঁকড়ার ডিম হওয়ায় কাঁকড়া খেতে খুব সুস্বাদু হয়। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁকড়ার চাহিদা ও দাম বেশি থাকায় জেলেরা মাছ ধরার পাস নিয়ে বনে ঢুকে কাঁকড়া শিকার করছেন।
বন বিভাগের দাবি মতে, শুধু সুন্দরবনের নদনদীতে প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ থাকলেও লোকালয়ের জলাভূমিতে এ আইন কার্যকর না থাকায় তেমন কোনো সফলতা আসছে না। তবে বন বিভাগের বিভিন্ন রেঞ্জ অফিস নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সুন্দরবন থেকে অবৈধভাবে কাঁকড়া শিকারের দায়ে জেলেদের আটক করে আদালতে সোপর্দ করছে।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নুরুল করিম জানান, প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া রক্ষা করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতি বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি- এই দুই মাস কাঁকড়া সুন্দরবনের নদী-খালে ডিম পাড়ে। সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয়। এই সময়কালে কাঁকড়ার প্রজনন নির্বিঘ্ন রাখতে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
প্রজনন মৌসুমে শিকার নিষিদ্ধ সময়ে ডিমওয়ালা অন্যসব প্রজাতির পাশাপাশি শিলা কাঁকড়া প্রজনন মৌসুমে নির্বিচারে আহরণ করার ফলে কাঁকড়া ভাণ্ডার খ্যাত সুন্দরবনে অচিরেই এ কাঁকড়ার বিলুপ্তি ঘটবে। প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনে কাঁকড়ার শিকার বন্ধ ও মূল্যবান এ মৎস্য সম্পদ রক্ষায় অভয়াশ্রম ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনসহ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সুন্দরবনের প্রজনন মৌসুমে শিকার নিষিদ্ধ কাঁকড়া আহরণ সম্পূর্ণ বন্ধ করতে সরকার ও বন বিভাগকে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।