

শনিবার ● ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বেতার এখনও অন্যতম জনপ্রিয় গণমাধ্যম
বেতার এখনও অন্যতম জনপ্রিয় গণমাধ্যম
প্রকাশ ঘোষ বিধান
বিশ্বে বেতার এখনও অন্যতম জনপ্রিয় গণমাধ্যম। বেতারের রয়েছে পৃথিবীর দুর্গম স্থানে পৌঁছানোর শক্তি। তবে তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রসারের ফলে সম্প্রচার জগতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতে শতাব্দী-প্রাচীন এ গণমাধ্যমের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম প্রান্তে জরুরি বার্তা, নানামুখী সংবাদ ও অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে জনমত গঠনেও বেতার সহায়ক ভূমিকা রাখে।
১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বেতার দিবস হিসাবে পালন করা হয়। এ দিবসের লক্ষ্য হচ্ছে জনসাধারণের মাঝে সংবাদমাধ্যম হিসাবে বেতারের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, বেতারের মাধ্যমে তথ্যের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা। ২০১০ সালে স্পেন রেডিও সংস্থার পক্ষ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বেতার দিবস উদযাপন করার প্রস্তাব আসে। এরপর ২০১১ সালে এটি ইউনেস্কোর সদস্য দেশগুলো ঘোষণা করে এবং ২০১২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়। প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ রেডিওর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হওয়ায় ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কো এই দিনটি বিশ্ব বেতার বা রেডিও দিবস হিসাবে পালন করা শুরু করে।
২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে বিশ্ব বেতার দিবস পালিত হয়ে আসছে। এতে অংশ নেয় বাংলাদেশ বেতার, প্রাইভেট এফএম এবং কমিউনিটি রেডিওগুলো। সরকার এর মধ্যে ২৮টি প্রাইভেট এফএম এবং ৩২টিরও বেশি কমিউনিটি রেডিওর অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া, বাংলাদেশ বেতার ১২টি আঞ্চলিক বেতার কেন্দ্র এবং ৩৫টি এফএম পরিচালনা করছে। সারা দেশে পাঁচ হাজার শ্রোতা ক্লাব গঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ বেতার দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীনতম গণমাধ্যম। বাংলাদেশ বেতারের জন্মকালের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে এক ঐতিহাসিক মিল। বাংলাদেশে বেতারের যাত্রা শুরু ১৯৩৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এর ঠিক ৩২ বছর পর এ দিনটিতেই চূড়ান্ত বিজয় লাভের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয় বাংলাদেশ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ বেতার ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অপরিহার্য সঙ্গী। বাংলাদেশ বেতার মুক্তিযুদ্ধে দেশে বীর সেনাদের অন্যতম এক অনুপ্রেরণার মাধ্যম ছিল।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ঢাকা বেতার কেন্দ্র। যুদ্ধের সময় এটি হয়ে যায় স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র। আর সাফল্যের পর সাফল্যের খবর শুনিয়ে সহজেই কেড়ে নেয় মুক্তিকামী মানুষের মন। মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট নামে খ্যাত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ছিল বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের এক বলিষ্ঠ প্রচার কাণ্ডারি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত কালজয়ী গান ও অনুষ্ঠানগুলো একদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবলকে শক্তিশালী করেছে, অন্যদিকে দেশের জনগণকে স্বাধীনতার দিকে অনুপ্রাণিত করেছে।
দেশের সবচেয়ে পুরোনো ও বৃহত্তম গণমাধ্যম বাংলাদেশ বেতার। একবিংশ শতাব্দীর আকাশছোঁয়া প্রযুক্তির বিস্তারের পরও বেতার সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজ করছে। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রসারের ফলে সম্প্রচার জগতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিযোগিতাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। ইন্টারনেটের অগ্রযাত্রার রেডিও তার গুরুত্ব হারিয়েছে। এমন ধারণা সঠিক নয়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রচারণার ধরনও বদলে গেছে। এখনো বহু মানুষ বেতার শোনে, বেতারের ওপর নির্ভর করে। সারা বিশ্বে বেতার এখনো অন্যতম জনপ্রিয় গণমাধ্যম। বেতারের রয়েছে দুর্গম স্থানে পৌঁছানোর শক্তি। গ্রামগঞ্জ ও দুর্গম এলাকায় এখনো বেতার তথ্য আদান-প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম।
বাংলাদেশ বেতার একটি ইতিহাস। বেতার আজ শাখা-প্রশাখা, পত্র-পল্লবে সুশোভিত এক বিশাল মহীরুহ। এই ইতিহাস একদিনে রচিত হয়নি। কালক্রমে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন, সর্ববৃহৎ ও শক্তিশালী গণমাধ্যমে পরিণত হয়েছে। জনগণের কাছে তথ্য ও বিনোদন পৌঁছে দিতে বেতার বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় গণমাধ্যম। সবচেয়ে প্রাচীন, সহজলভ্য ও শক্তিশালী গণমাধ্যম হিসাবে বেতার পৃথিবীব্যাপী বহুল পরিচিত। প্রযুক্তিনির্ভর বর্তমান সমাজে বেতারও তার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা ধরে রেখে এগিয়ে চলছে।
লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট