শিরোনাম:
পাইকগাছা, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১

SW News24
বুধবার ● ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » পাতা ঝরার আগে শোভন বৃক্ষ কাঠ বাদাম আলো ছড়াচ্ছে
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » পাতা ঝরার আগে শোভন বৃক্ষ কাঠ বাদাম আলো ছড়াচ্ছে
৪৭ বার পঠিত
বুধবার ● ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

পাতা ঝরার আগে শোভন বৃক্ষ কাঠ বাদাম আলো ছড়াচ্ছে

 --- প্রকাশ ঘোষ বিধান

শোভন বৃক্ষ হিসেবে পরিচিত কাঠ বাদাম পাতা ঝরার আগে আলো ছড়াচ্ছে। পাতা ঝরার মৌসুমে শুরু হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে কিছু কিছু গাছের পাতা ঝরে যায়। ঋতুরাজ বসন্তের শুরুতে কাঠ বাদাম গাছের সবুজ পাতায় রঙ লেগেছে। বাদাম গাছ রক্তিম রঙে সেজেছে। পাতায় শোভায় এক রঙিন রূপে। ঝরার আগে পাতাগুলো গোলাপী-লাল বা হলদেটে-খয়েরি রঙের হয়ে যায়। প্রকৃতিকে যেন এক নতুন রূপে সাজিয়েছে। বাতাসে দোল খাচ্ছে বাদাম পাতার রক্তিম আভা। গাছের ডালে বাদাম পাতার রক্তিম রঙে  মানুষের মনকেও রাঙিয়ে তুলেছে। সবুজের মাঝে বাদাম পাতার রক্তিম আলোর ঝলকানি। ফাল্গুন মাসে পাতার এ সৌন্দর্য মনকে রাঙ্গীয়ে দেয়। দূর থেকে হঠাৎ দেখলে ঠিক মনে হবে,গাছের তলায কেউ যেন লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছেন।

দেশি বাদাম বা কাঠ বাদাম শোভন বৃক্ষ হিসেবেই বেশি পরিচিত। বিশেষ আঙ্গিক বৈশিষ্ট্যের কারণে গ্রামে অনেক দূর থেকেই এ গাছ চোখে পড়ে।    সুশৃঙ্খল বিন্যাসের এমন সুউচ্চ বৃক্ষ খুব কমই দেখা যায়। মূলত কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের কারণে এই গাছ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। ডালপালা বিন্যাসে এই গাছটির একটি বিশেষ কৌশল আছে। নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপরই চারপাশে একসঙ্গে অনেক ডালপালা গজায়। সেই ডালপালা আবার ছাতার মতো চারপাশে ছড়িয়ে থাকে।
কাঠবাদামের গাছের আদি নিবাস কোথায় তা জানা যায় না। এটি আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া সহ অস্ট্রেলিয়া অবধি উষ্ণ অঞ্চলে জন্মে থাকে। সাম্প্রতিক কালে আমেরিকা মহাদেশেও এই গাছটি বিস্তার লাভ করেছে। একে নানা নামে বিভিন্ন স্থানে ডাকা হয়, যেমন বেঙ্গল আখরোট, সিঙ্গাপুর আখরোট, ইবেলবো, মালাবার আখরোট, নিরক্ষীয় আখরোট, সমুদ্র আখরোট, ছাতা গাছ, আব্রোফো ন্‌কাটি, জানমান্দি ইত্যাদি। আমাদের আবহাওয়ায় অভিযোজনা চমৎকার বলেই ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। গাছটি এখন আমাদের দেশে কাঠ বাদাম নামে পরিচিত।

কাঠ বাদাম একটি বৃহদাকৃতির গাছের ফল। ফলের নাম অনুযায়ি এই গাছকে কাঠ বাদাম গাছ ডাকা হয়। এটি নিরক্ষীয় অঞ্চলে জন্মানো লেডউড জাতীয় পরিবারের একটি বৃক্ষ। কাঠ বাদামের গাছ প্রায় ৩৫ মিটার বা ১১৫ ফুট উঁচু হয়। গাছটির উপরের দিক থেকে আনুভূমিকভাবে ডালপালা বের হয়। এর ফলটি রসালো প্রকারের ও ভেতরের প্রকোষ্ঠে বিচি থাকে। ফল পাকলে এই বিচিগুলো খাবার যোগ্য হয়। বিচিগুলো খেতে অনেকটা আখরোটের মতো। এ গাছের রসালো ফলের অভ্যন্তরে ৩-৪ সেন্টিমিটার দীর্ঘ কয়েকটি বীজ থাকে যা পরিপক্ব ফল থেকে বের করে নিয়ে সরাসরি বা ভেজে খাওয়া হয়। এই বিচিগুলিই কাঠবাদাম নমে পরিচিত। বিচিগুলো বাদামের গন্ধ যুক্ত।

দেশি বাদাম গাছ বেশ উঁচু ধরনের বৃক্ষ। কাণ্ড দীর্ঘ, গাঁটযুক্ত ও গাঢ় ধূসর। ঘূর্ণিত শাখাবিন্যাস এর আকর্ষী বৈশিষ্ট্য। একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে উদ্গত বিশাল দীর্ঘ ভূসমান্তরাল শাখারা গুচ্ছে প্রায় সমদূরত্বে কাণ্ডে বিন্যস্ত। এর পাতার গড়ন কাঁঠাল পাতার মতো হলেও আকারে বেশ বড়। ঝরে পড়ার আগে সবুজ পাতাগুলো গাঢ়-রক্তিম বর্ণের হয়ে ওঠে। শীতের প্রথমভাগে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সব পাতা ঝরে পড়ে। তারপর বসন্তের মাঝামাঝি সময়ে অল্প সময়ের মধ্যে সব নতুন পাতা গজিয়ে ওঠে এবং অল্প দিনেই সারা গাছ কচি পাতার উজ্জ্বল সবুজে ভরে ওঠে। পাতাগুলো শাখা-প্রান্তিক এবং বিন্যাস ঘন-একান্তর। পাতা গজানোর পরপরই ফুল আসে। বেশ ছোট ধরনের এই ফুলগুলো দেখতে অনেকটা ম্লান-হলুদ রঙের। ফল কাষ্ঠ-কঠিন, ডিম্বাকৃতির, ঈষৎ চাপা এবং কৌণিক ধরনের। বীজের শাঁসটুকু বেশ সুস্বাদু হওয়ায় ফলগুলো বাদাম নামে পরিচিত। ফল পাকে শরতে। এই ফল টিয়া পাখির বেশ প্রিয়। ফল খেতে প্রায় সারাদিনই ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়া পাখি আসে। বাদুড় ফলের খোসা খেতে পছন্দ করে। তবে শিশুরাও গাছতলা থেকে ফল কুড়িয়ে ভেতরের শাঁসটুকু খায়।

বাদামের কাঠ শক্ত, কিন্তু ব্যাপক ব্যবহারের অনুপযুক্ত। অপরিণত গাছ নরম ঝড়ে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে খানিকটা দূরত্বে এ গাছ লাগাতে হয়। গাছের বয়স বাড়লে এর উপরের দিকের ডালপালা অনেকটা চ্যাপ্টা হয়ে যায়, দেখতে ফুলদানীর মতো লাগে। শাখাপ্রশাখাগুলো স্তরে স্তরে সাজানো থাকে। পাতাগুলো আকারে বেশ বড়ো, ১৫-২৫ সেমি বা ৫.৯ - ৯.৮ ইঞ্চি দীর্ঘ, এবং ১০-১৪ সেমি বা ৩.৯-৫.৫ ইঞ্চি চওড়া, ডিম্বাকার, এবং চকচকে সবুজ বর্ণের হয়। শুষ্ক মৌসুমে পাতা ঝরে যায়। ঝরার আগে পাতাগুলো গোলাপী-লাল বা হলদেটে-খয়েরি রঙের হয়ে যায়। ভায়োলাক্সান্থিন, লুয়েটিন ও যিক্সান্থিন নামের রঞ্জক পদার্থ এর কারণ রঙ বদলায়। এগাছের বীজ থেকে তৈরি হয় তেল, পাতা এবং বাকল থেকে বানানো যায় কালো রং। গাছে তসর পোকারও চাষ হয়। পাতার রস চর্মরোগের ওষুধ, বাকল অরেচক ও আমাশয়ে সেবন করলে ভালো হয়। মস্তিষ্কে উন্নতিতে বাদামে রয়েছে উপকারিতা। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করার সাথে সাথে জ্ঞান এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতেও সহায়তা করে।

লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)