

শনিবার ● ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » বিশেষ সংবাদ » ফসলের ক্ষেতে বৈদ্যুতিক তারের মরণ ফাঁদ
ফসলের ক্ষেতে বৈদ্যুতিক তারের মরণ ফাঁদ
পাইকগাছায় ইদুর নিধনে কৃষকরা ক্ষেতের ফসল রক্ষায় ক্ষেতে বৈদ্যুতিক তার দিয়ে মরন ফাঁদ ব্যবহার করছে। এই ফাদে পড়ে কৃষকের ফসল রক্ষাকারি ইঁদুরভোজী প্রাণী পেঁচা, শিয়াল, বেজি, বন বিড়াল, সাপ, গুঁইসাপ জাতীয় প্রাণী মারা যাচ্ছে। ইদুর নিধনের এই ফাঁদে পড়ে অসাবধানতাবসত কৃষকদের যেমন মৃত্যু হচ্ছে, তেমনি সাধারণ মানুষও মারা যাচ্ছেন। এমনকি পোল্ট্রি ফার্মের চারিপাশে রাতে শিয়াল তাড়াতে তারে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে রাখছে খামার মালিকরা। যাহা খুবই ঝুকিপূর্ণ। পূর্বে ফসলের ক্ষেতে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে ইঁদুর নিধন তেমনটা না থাকলেও বর্তমানে কৃষকের ক্ষেতে ইঁদুরের অত্যাচার দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় নিরুপায় হয়েই কৃষকরা ক্ষেতে বিদ্যুত সংযোগ দিয়ে ইঁদুর নিধন করছেন।
সূত্রমতে, বিগত কয়েক বছরের ব্যবধানে সারাদেশের ন্যায় পাইকগাছা উপজেলায় বোরো ও আমন মৌসুমে ফসলের ক্ষেতের ইঁদুর নিধন করতে গিয়ে কৃষকের পাশাপাশি ফসল ক্ষেতে রাখা বৈদ্যুতিক তারে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও এ মরন ফাঁদ ব্যবহার করায় পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ২০২৩ সালে পাইকগাছায় বোরো ধান ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব ঠেকাতে পাতা বৈদ্যুতিক ফাঁদে বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে নজরুল ইসলাম গাজী (৩৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। নজরুল ইসলাম গাজী উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের দেবদুয়ার গ্রামের ফুলতলা এলাকার ইয়াকুব গাজীর ছেলে। সম্প্রতি উপজেলার কপিলমুনি এলাকায় গমের ফসল ক্ষেতে রাখা বৈদ্যুতিক তারে একটি শিয়াল মারা গেছে।
ইঁদুর দমন জৈবিক পদ্ধতি হলো অন্য জীবের সাহায্যে ইঁদুর দমন। এসব ইঁদুরভোজী প্রাণীদের রক্ষা এবং বংশবিস্তারের যথাযথ ব্যবস্থা করলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ ইঁদুর সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। পেঁচা, শিয়াল, বেজি, বন বিড়াল, সাপ, গুঁইসাপ জাতীয় প্রাণীর প্রধান খাদ্য হচ্ছে ইঁদুর। পেঁচা প্রাকৃতিক পরিবেশকে সংরক্ষণের পাশাপাশি এর প্রজনন ও প্রতিপালন কার্যক্রমকে কৃষক পর্যায়ে উৎসাহিত করে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, একজোড়া পেঁচা চার মাসের একটি প্রজনন চক্রে চার থেকে ছয়টি বাচ্চার লালন-পালনে ৫০-৭০ গ্রাম ওজনের প্রায় ৩হাজার থেকে ৫হাজার পর্যন্ত ইঁদুর ভক্ষণ করতে পারে।
পেঁচাসহ নিশাচর প্রাণী নীরবে-নিভৃতে ইঁদুর দমন করে মাঠের ফসলের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করছে। তাই জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের সংরক্ষণ ও বংশবিস্তারের সুযোগ করে দিতে পারলে ইঁদুরের বংশবিস্তার থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। কৃষক পর্যায়ে পরামর্শ ও যথাযথ বাস্তবায়ন করতে পারলে প্রান্তিক কৃষকরা ফসলের ক্ষেতে আর বৈদ্যুতিক মরন ফাঁদ ব্যবহার করবেনা। ফলে রক্ষা পাবে কৃষকসহ সাধারণ মানুষের জীবন। এবিষয় উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ একরামুল হোসেন জানান, পেঁচাসহ নিশাচর প্রাণী মাঠের ফসল ক্ষেতের ইঁদুর শিকার করে ফসল রক্ষা করছে। কৃষকরা ক্ষেতের ফসল রক্ষায় ক্ষেতে বৈদ্যুতিক তার ব্যাবহার না করে তার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে।