শিরোনাম:
পাইকগাছা, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫, ১৬ ফাল্গুন ১৪৩১

SW News24
সোমবার ● ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » দেশের শান্তি শৃংখলা রক্ষায় পুলিশের ভুমিকা
প্রথম পাতা » মুক্তমত » দেশের শান্তি শৃংখলা রক্ষায় পুলিশের ভুমিকা
৮৭ বার পঠিত
সোমবার ● ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

দেশের শান্তি শৃংখলা রক্ষায় পুলিশের ভুমিকা

---প্রকাশ ঘোষ বিধান

একটি গণতান্ত্রিক সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি দক্ষ পুলিশ বাহিনী অপরিহার্য। পুলিশ বাহিনী দেশের নিরাপত্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা এবং তাদের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জনগণ এখন বুঝতে পারছে যে, দেশের উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার জন্য একটি শক্তিশালী ও দক্ষ পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত জরুরি।

পুলিশকে নির্মমভাবে নির্যাতন ও হত্যা করায় আইন-শৃঙ্খলায় স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরে আসেনি। দেশে স্থিতিশীল পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে তেমন দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রিসি ক্ষমতা দেয়ার পরও দেশে আজ অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অথচ পাড়া মহল্লা থেকে শুরু করে পুরোদেশে পুলিশ বাহিনী যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করে রাখে তা অন্যকোন বাহিনীর দ্বারা সম্ভবপর নয়। দেশে অপরাধীদের আতঙ্ক পুলিশ ও সাংবাদিক। এটা যতক্ষণ ব্যাক্তি স্বার্থ এবং দলীয় স্বার্থ বাদ দিয়ে দেশের স্বার্থ চিন্তা না করা হবে, ততক্ষণে দেশে স্থিতিশীল পরিস্থিতি ফিরে আসবে না।

নানা চ্যালেঞ্জ ও সংকট মোকাবিলায় পুলিশের আত্মত্যাগ এবং মানবিক অগ্রগতি ভোরের আলোয় মতন উদ্ভাসিত। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে পুলিশের ভূমিকা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখা, অপরাধ প্রতিরোধ এবং সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা অপরিসীম।

দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশৃঙ্খলা ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি দেখা যাচ্ছে। পুলিশের অনুপস্থিতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা এই সময়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অপরাধীরা পুলিশের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রম করছে। যা দেশের সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি সৃষ্টি করছে। এছাড়াও, জনগণের মাঝে এক ধরনের ভীতির সঞ্চার ঘটে, যা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে। এই পরিস্থিতিতে, জনগণ পুলিশের অভাব গভীরভাবে অনুভব করে এবং তাদের অপরিহার্যতা উপলব্ধি করে।

দেশে অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা মানুষের ন্যায়বিচারের অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই, ডাকাতি, খুন এবং ধর্ষণের মতো ঘটনা বাড়ছে, যেখানে পুলিশ কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায়,অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হচ্ছে বরং সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার পাওয়ার পথও বন্ধ হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতায় অপরাধীরা অপরাধে যুক্ত হয়ে সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তা নষ্ট করছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের এক দফা দাবির সময় অগাস্টের প্রথম সপ্তাহে সারা দেশে কয়েকশ থানায় হামলা এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এই প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানের ঘোষণা দেয়া হয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় বেশ কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে তাদের পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এসব মৃত্যুতে কোন ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগও উঠেছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই তথা আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে জনজীবন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, ছিনতাই, ডাকাতি ও চাঁদাবাজি বেড়েই চলেছে। প্রশাসনের আরো বেশি তদারকি বাড়ানোর জন্য সারা বাংলাদেশ বিভিন্ন স্কুল কলেজ ভার্সিটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীরা মানববন্ধন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।

বর্তমানে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা উভয় সংকটে পড়েছে। মানুষ হিসেবে কর্মক্ষেত্রে কিছু ভুল হতে পারে। সেই ভুলের কারনে পুলিশের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া। পুলিশের উপর সংঘবদ্ধ মারমুখী আচরণ পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে পড়েছে। সেটা ফিরে আসতে সময় লাগবে। মানুষ যে কর্ম করে তার ফল ভোগ তাকেই করতে হয়। প্রতিটি কর্মেরই একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে যদি স্থান-কাল-পাত্র অপরিবর্তিত থাকে। মানুষ ভাল বা মন্দ যে ধরণের কর্মই করুক না কেন, তার মনে এক ধরণের বিকৃতি তৈরী হয়। মন এই বিকৃতি সরিয়ে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতে চায়। কর্মের মাধ্যমে মনে নতুন নতুন সংস্কার তৈরী হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশের সমাজের নিয়ন্ত্রণ ভার বিএনপি-জামাতের নিয়ন্ত্রণে হাতে, আর সরকারের দায়িত্বভার উপদেষ্টাদের উপর এবং রাষ্ট্রের দায়িত্বভার সামরিক বাহিনীর উপর প্রয়োজনের তাগিদে বর্তিত হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি কারণে যে যেমন পারছে ক্ষমতা দেখাচ্ছে, ছিনতাই, লুট, ধর্ষণ ও খুনও করছে। বাংলাদেশের সকল গ্রামে বিএনপি-জামাত-হেফাজতের নেতাকর্মী ও তাদের কমিটির নেতা কর্মী আছে। তারা যেহেতু সমাজ নিয়ন্ত্রণ করছে, তারা কেন আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে ভূমিকা নিতে পারছে না। তার কারণ খুজে বের করতে হবে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোন এলাকায় যদি মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এর জন্য প্রধানত দায়ী হচ্ছে দলীয় নেতারা। কারন তারাই হচ্ছে সমাজের মূল নেতা। সমাজে  ছিনতাইকারী ও মাদকব্যবসায়ীরা আক্রমণ করার সাহস পাচ্ছে জনগণের অনৈক্য, অসহযোগী মনোভাব ও অসচেতনতা কারণে। পুলিশকে সাহসে ফিরে আসতে হবে। আর জনগণ পুলিশের পাশে দাড়ালে আইনশৃঙ্খলা ঠিক হবে।

সবাই বলে পুলিশ ঘুষ খায়, আপনারা টাকার বিনিময়ে চাকরি দেয়া বন্ধ করুন। পুলিশ ঘুষ খাবে না। জমিজমা বিক্রি করে বা লোন তুলে যে টাকা চাকরি নেওয়ার সময় দিতে হয়। সেই টাকা তারা কত বছর চাকরি করার পর পোষাতে পারবে। চাকুরি দেওয়ার সময় তাদেরকে অসদ পথ দেখানো হচ্ছে। এরপর বাংলাদেশে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে তারাই নিজেদের মত করে পুলিশকে ব্যবহার করবে। হুকুম না মানলে নির্যাতিত হতে হবে, বদলি হতে হবে, চাকরি থাকবেনা। আবার দলীয় সরকারের হুকুম মানলে বিরোধী দলের হাতে পুড়িয়ে, নির্যাতন করে, নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করতে হবে।

রাষ্ট্রপতির অধীনে পুলিশ বাহিনীর জন্য নিরেপক্ষ একটি কমিশন হওয়া দরকার। যাতে তারা ক্ষমতাসীন সরকারের হুকুমের গোলাম হতে না হয়। তারপর চাকরি দেয়ার সময় ১৫-২০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়া বন্ধ করতে হবে। কোটায় নয় মেধায় চাকরি দিতে হবে। সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে জনগণের সেবায় নিয়োজিত করতে পুলিশকে সক্রিয় রাখতে হবে।

ব্যক্তির চেয়ে সমাজ বড়। সমাজ টিকে না থাকলে ব্যক্তির সত্তা হারাবে এবং রাষ্ট্র অকার্যকর হয়ে পড়বে। সকল মতের ও পেশার লোকের সমন্বিত ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কে সুস্থ সমাজ গড়ে উঠবে। হিংসা আর বিভাজনের সুযোগে দুষ্কৃতকারীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অপরাধ জনক অপকর্ম করেই যাবে। পুলিশকে ভালোবাসতে হবে এবং সহযোগিতা করতে হবে। ব্যক্তি পর্যায় থেকে নিজেকে আইন মেনে চলতে হবে এবং সংঘবদ্ধ হয়ে অপরাধ দূর করতে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল আত্মত্যাগ ও বীরত্বের স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস। পুলিশ বাহিনীর জন্য দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সবসময়ই স্থিতিশীল থাকে। পুলিশ বাহিনী দেশের নিরাপত্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা এবং তাদের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জনগণ এখন বুঝতে পারছে যে, দেশের উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার জন্য একটি শক্তিশালী ও দক্ষ পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত জরুরি। পুলিশ বাহিনীর জন্য দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সবসময়ই স্থিতিশীল থাকে। পুলিশের অনুপস্থিতি দেশের জন্য কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তা দেশের মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। দেশের পুলিশ বাহিনীকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন ও সমর্থন করা দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।

লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)