

শনিবার ● ১ মার্চ ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » ঝরা পাতা কুড়িয়ে রান্নার জ্বালানি ও বিক্রি করে বাড়তি আয়
ঝরা পাতা কুড়িয়ে রান্নার জ্বালানি ও বিক্রি করে বাড়তি আয়
প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছা: শীতের বিদায় নেওয়ার পালা আসতেই গাছ থেকে ঝরে পড়ে পাতা। শুকনো পাতা কুড়িয়ে নিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন। গ্রামের নিন্ম আয়ের মানুষ রান্নার জ্বালানী হিসাবে বনের ঝরা পাতা কুড়িয়ে আনেন এবং মজুত করে রাখেন। বাগান থেকে সংগ্রহ করা শুকনো ঝরাপাতা বস্তায় ভরে সেগুলো ভ্যান, কিংবা মাথায় করে মধ্যবিত্ত, নিম্ন–মধ্যবিত্ত কৃষক ও বিভিন্ন পেশার মানুষের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে বাড়তি টাকা আয়ের সুযোগ হয় তাদের। নিম্ন আয়ের মানুষের ফাল্গুন-চৈত্র মাসে ঝরাপাতা শুধুই আনন্দ নিয়ে আসে। এ সময়টা তাদের ঝরাপাতা কুড়িয়ে বিক্রি করে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন বাগানের গাছের পাতা ঝরে পড়ছে। মাঘ মাস থেকে পাতা ঝরা শুরু হয়। গাছের পুরাতন পাতা ঝরে পড়ে। কিছু গাছের সব পাতা ৩-৪ দিনের মধ্যে ঝরে পড়ে। বাদাম,পলাশ,দেবদারু, মেহগনি, শিরিষসহ বিভিন্ন গাছের ঝরে গাছ নাড়া হয়ে যায়। তার আগে পৌষে ইউক্যালিপটাস পাতা ঝরা শুরু হয়ে যায়। নতুন পাতা গজানোর আগে এ সব গাছের পুরোনো পাতা ঝরে যায়। এই সব গাছের পাতার আগুনের আঁচ বেশ তীব্র। শীতের শুষ্কতা থাকে, সাধারণত রৌদ্রোজ্জ্বল দিন হয় এবং বিশেষ করে ঝড়-বৃষ্টি থাকে না তাই গ্রামের প্রান্তিক পরিবারের বধূরা মাঠের কাজ এবং গেরস্থালির কাজ সেরে বনের ঝরা পাতা কুড়োতে যান, শুকনো ঝরা পাতা বস্তা ভর্তি করে ঘরে ফিরেন। অনেক গরীব মানুষ এই শীতের দিনে জঙ্গল থেকে ঝরা পাতা কুড়িয়ে এনে বেচে কিছু অর্থ উপার্জন করে থাকেন। গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে গাছের ঝরা যেন আর্শীবাদ স্বরূপ।
গাছের পাতা ঝরার সঙ্গে জড়িয়ে আছে শত শত শ্রমিক আর নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন-জীবিকা। নিম্ন আয়ের এসব মানুষ পাতা ঝরার এ মৌসুমের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন। উপজেলার গোপালপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন নারী বাগানে গাছের ঝরা পাতা ঝাড়ু ব্যবহার করে একত্রিত করে স্তূপ করে রাখছেন। পরে বস্তায় ভরে ভ্যান গাড়ি করে বাড়িতে নিয়ে যাবেন। গোপালপুর গ্রামের আলেয়া বেগম (৫০) বলেন, পাতা কুড়ালে ৪-৫ বস্তা হয়। প্রতি বস্তা ২০ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি করা যায়। প্রতিবছর এ সময়টার জন্য আমরা অপেক্ষা করি। অন্য কাজের পাশাপাশি পাতা কুড়িয়ে বাড়তি টাকা পাওয়া যায়। জামিলা খাতুন জানান, কিছু পাতা আমরা বিক্রি করি আর বাকি ঝরা পাতাগুলো আমরা সারা বছর নিজেদের রান্নার জন্য সংরক্ষণ করে রাখি।
উপজেলা বন কর্মকর্তা প্রবির দত্ত বলেন, গ্রামের নিন্ম আয়ের মানুষ ঝরাপাতা কুড়িয়ে রান্নার জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার ও বিক্রি করে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। তবে ঝরা পাতা বর্ষাকালে পচে জৈব সারে পরিণত হয় যাহা বাগানের গাছের জন্য উপকার। গাছের তলায় ঝরা পাতা কুড়াতে না দিলে গাছ প্রাকৃতি জৈব সার পাবে। এবিষয় ব্যক্তিগত বাগান মালিকদের উদ্ভুব্ধ করতে পারলে ঝরা পাতা থেকে জৈব সারে গাছের খাদ্য চাহিদা প্রাকৃতিক ভাবে পূরণ হবে। বাগানের গাছ দ্রুত বেড়ে উঠবে।