

শনিবার ● ৮ মার্চ ২০২৫
প্রথম পাতা » সুন্দরবন » সুন্দরবনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে হরিণ শিকারী চক্র
সুন্দরবনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে হরিণ শিকারী চক্র
প্রকাশ ঘোষ বিধান,(খুলনা) পাইকগাছা : সুন্দরবনে হরিণ শিকারী চক্রের দৌরাত্ম্য বেড়ে চলেছে। শিকারী আর পাচারকারীরা ফাঁদ পেতে ও গুলি করে শিকার হচ্ছে হরিণ। সুন্দরবনে থামছেই না হরিণ নিধন। কয়েক মাস ধরে প্রায় প্রতিদিনই হরিণ শিকার হচ্ছে। প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে হরিণের মাংস। মাংস ও চামড়াসহ ধরাও পড়ছেন শিকারিরা। সুন্দরবনের নদী ও খালগুলোয় বিষ দিয়ে মাছ শিকারেও মহোৎসব চলছে। অবাধে হরিণ শিকারের কারণে জীববৈচিত্র্যে প্রভাব পড়ছে।
শিকারী চক্র দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত দুই মাসে বনবিভাগ, পুলিশ ও কোস্ট গার্ড অভিযান চালিয়ে ২৭৪ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করেছে এবং ৩ ব্যক্তিকে আটক করেছে। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে ভালো নেই মায়াবী হরিণ। বন্য এ প্রাণীটি চোরা শিকারী ও পাচারকারীদের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রপ্তিক সময়ে সুন্দরবনে বনদস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলে-বাওয়ালীরা যেমন আতঙ্কে রয়েছে অপর দিকে বেড়েছে হরিণ শিকারী চক্রের দৌরাত্ম। হরিণ শিকারীচক্র ও বনদস্যুদের কাছ থেকে অন্যান্য বন্য প্রাণীও নিরাপদ নয়।
সূত্রে জানা গেছে, ৩ জানুয়ারি পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩৪ কেজি হরিণের মাংসসহ পাইকগাছা উপজেলার কাশিম নগর গ্রামের আমিন উদ্দিন মোড়লের ছেলে ইকবাল মোড়লকে মহারাজপুর ইউনিয়নের কালনা বাজার থেকে মোটরসাইকেলসহ আটক করে। ১৫ জানুয়ারি খুলনা রেঞ্জের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের বনরক্ষীরা সুন্দরবনের সত্যপিরের ভারানী খাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৮০ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করে। এ সময় একটি নৌকা ও হরিণ ধরার সরঞ্জাম জব্দ করা হলেও কাউকে আটক করতে পারেনি। ২০ ফেব্রুয়ারি খাসিটানা বন টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা অভিযান চালিয়ে সুন্দরবনের ছেড়ারখাল এলাকা হতে ৯০ কেজি হরিণের মাংস, ১টি নৌকা এবং হরিণ ধরার সরঞ্জাম জব্দ করে। ২২ জানুয়ারি বনবিভাগ ও কোস্টগার্ড অভিযান চালিয়ে ঘড়িলাল বাজার সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদ হতে ৬২ কেজি হরিণের মাংস ১টি নৌকা ও হরিণ ধরার সরঞ্জাম জব্দ করেছে। ৬ মার্চ পুলিশ অভিযান চালিয়ে আমাদী ইউনিয়নের হদুবুনিয়া গ্রামের প্রভাষ মন্ডলের বাড়ির সামনে থেকে প্রভাষ মন্ডল ও অসিত সানাকে ৮ কেজি হরিণের মাংসসহ গ্রেফতার করে।
প্রতিনিয়ত সুন্দবন থেকে হরিণ শিকার হলেও বন বিভাগের কর্মকান্ড নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলে বাওয়ালীরা জানান, সুন্দরবনে বনবিভাগের টহল থাকলেও অদৃশ্য কারনে হরিণ শিকার বন্ধ হচ্ছে না। শিকারীচক্র বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে। আবার কখনও তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করা হয়। যার কারণে সুন্দরবনে হরিণ শিকার বদ্ধ হচ্ছে না।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের কোবাদক, কাশিয়াবাদ ও বানিয়াখালী ফরেস্ট স্টেশন এলাকায় হরিণ শিকারীচক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। জানতে চাইলে কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা সাদিকুজ্জামান বলেন, সুন্দরবনের হরিণ নিধন ও বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্দের জন্য বনবিভাগ ৩ মাসের একটি প্যাকেজ নিয়ে কাজ করছে। খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষায় বন বিভাগের পাশাপাশি পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের নিয়মিত টহল অব্যাহত রয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এজেএম হাছানুর রহমান বলেন, সুন্দরবনের সম্পদ লুণ্ঠনকারীদের বিরুদ্ধে বনবিভাগ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অপরাধীরা যত শক্তিশালী হোক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।