শিরোনাম:
পাইকগাছা, বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১

SW News24
বুধবার ● ১৯ মার্চ ২০২৫
প্রথম পাতা » পরিবেশ » বিজ্ঞাপনের জন্য পেরেকবিদ্ধ করায় গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে
প্রথম পাতা » পরিবেশ » বিজ্ঞাপনের জন্য পেরেকবিদ্ধ করায় গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে
৫৫ বার পঠিত
বুধবার ● ১৯ মার্চ ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বিজ্ঞাপনের জন্য পেরেকবিদ্ধ করায় গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে

    প্রকাশ ঘোষ বিধান ঃ  খুলনার সড়ক-মহাসড়কের পাশের গাছে গাছে পেরেক ঠুকে লাগানো হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও পন্যের বিজ্ঞাপন। প্রায় প্রতিদিনই পেরেক ঠুকে লাগানো হচ্ছে শুভেচ্ছা ব্যানার, ছাত্রভর্তি, চিকিৎসাসেবা, বাড়িভাড়া, হারবাল ওষুধ বিক্রির বিজ্ঞাপন। এতে সড়কের পাশের গাছগুলো ঝুকির মধ্যে রয়েছে। গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হচ্ছে, তাছাড়া মরে যাচ্ছে অনেক গাছ। গাছ পরিবেশ ও মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু হলেও মানুষের নিষ্ঠুরতার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না।

পাইকগাছা উপজেলার মেইন সড়কের দুই পাশের গাছে গাছে পেরেক ঠুকে টাঙ্গানো হয়েছে প্যানা-ফেস্টুনসহ নানা বিজ্ঞাপন। গাছের দিকে তাকালেই দেখা যায় হরেক রকম বিজ্ঞাপন। গাছে বিজ্ঞাপন লাগানো প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, কোচিং সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নানান অখ্যাত অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গদের প্যানা ফেস্টুন। রাস্তার পাশে গাছ থাকলেই তাতে টাঙানো হচ্ছে সাইনবোর্ড, ব্যানার কিংবা প্ল্যাকার্ড। বিনা খরচে, কোনো প্রকার বাঁধা ছাড়াই প্রাতিষ্ঠানিক পণ্যের প্রচারণার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে গাছ।

মানব জীবনে অক্সিজেন অপরিহার্য। আর এই অক্সিজেন আমরা গাছ থেকে পাই। বৃক্ষ মানুষের পরম বন্ধু। পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় গাছের বিকল্প নেই। গাছ তার সব কিছু বিলিয়ে দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচিয়ে রাখছে। আর এই গাছই মানুষের নির্মম অত্যাচার থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। কোন নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই যে যেখানে পারছে পেরেক বা তারকাটা ঠুকে গাছকে বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করছে। সড়কেও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গাছগুলোতে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর পেরেক বা তারকাটা ঠুকে বিজ্ঞাপন লাগানো হচ্ছে। ছোট থেকে এসব গাছ পেরেক লাগানো হতে হতে গাছটি পরিণত বয়েসে তার কান্ডে পাঁচশতাধিকেরও বেশি পেরেক লাগানো পড়ছে। গাছ বড় হচ্ছে আর পেরেকগুলি কান্ডের ভিতর অবস্থান করছে। এভাবে শত শত পেরেক যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে আর বিজ্ঞাপন ভরে ঝুকছে গাছগুলো। এভাবে দিনের পর দিন গাছকে অনেকটাই বিজ্ঞাপন বুথেরমত ব্যবহার করায় ক্ষুদ্ধ সচেতন নাগরিক ও  পরিবেশবাদীরা।---

গাছে পেরেক ঠুকে বিজ্ঞাপন লাগানো বিষয়ে খুলনার সরকারি ব্রজলাল কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যপক সেবানন্দ চক্রবর্তী বলেন, পেরেক ঠুকলে খাবার সংগ্রহের বাঁধা তৈরী হবে। গাছ শেকড়ের মাধ্যমে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করে। পেরেক ঠুকানো স্থানের জাইলেম ও ফ্লোয়ামটিশ্যূ ক্ষতিগ্রস্থ হলে মূলদিয়ে গৃহীত পুস্টি যেমন কান্ড ও শাখা প্রশাখায় সরবরাহে বাঁধা সৃষ্টি হয় তেমনি পাতায় প্রস্তুতকৃত শর্করাও গাছের অন্যান্য অংশে সরবরাহ বাঁধা গ্রস্থ হয়। গাছের জীবনী শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্থ অংশ দিয়ে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস, নেমাটোডসহ বিভিন্ন অনুজীব সহজে আক্রমন করতে পারে। এতে ধীরে ধীরে গাছ মারা যেতে পারে। নরমকান্ড বিশিষ্ট (আঠা বিশিষ্ঠ) গাছের আঠা ঝরে যায়। গাছেরও প্রাণ আছে। গাছ ব্যথা পায়, গাছ কাঁদে।

শহরের সৌন্দর্য রক্ষা ও পরিচ্ছন্নতা বিধানে সরকার ২০১২ সালে দেয়াল লিখন ও পোষ্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রন) আইন-২০১২ পাশ করেন। কিন্তু এই আইনের বাস্তবায়ন না হওয়ায় তা শুধু আইন নামে সিমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। উক্ত আইনের ধারা ৪ অনুযায়ী নির্ধারিত স্থান ব্যতিত অন্য কোন স্থানে দেয়াল লিখন বা পোষ্টার লাগানো যাবে না। কিন্তু এ আইনের তোয়াক্কা না করে গাছে গাছে পেরেক ঠুকে বিজ্ঞাপন লাগানোয় ঝুকি বাড়ছে। সামান্য ঝড়ে এসব বিজ্ঞাপন ছিড়ে পড়ায় পথচারীরা দূর্ঘটনার শিকারও হচ্ছে। দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রন) আইন ২০১২ মোতাবেক সকল সাইনবোর্ড ফেস্টুন, ব্যানার অপসারন করা প্রয়োজন। এই আইনের বাস্তবায়ন হলে বৃক্ষগুলো পেরেক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে পারে।

সড়কের পাশের গাছে গাছে যে সকল প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি এসব সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের প্যানা লাগিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন পাইকগাছার পরিবেশবাদী সংগঠন বনবিবি। তার জন্য প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ সচেতন মহলের সহযোগীতা প্রয়োজন।

ইতিমধ্যে গাছ সুরক্ষায় সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ মার্চ দেশের ২৮টি জেলায় মাসব্যাপী পেরেক অপসারণ কর্মসূচি পালন করে আসছে বন বিভাগ। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৯ মার্চ বুধবার সকালে উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ আয়োজনে পেরেক অপসারণ কর্মসূচি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন, গাছ আমাদের প্রকৃত বন্ধু। গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়। কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান গাছের গায়ে পেরেক দিয়ে বিলবোর্ড ও ফেস্টুন স্থাপন করছেন। গাছে পেরেক ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। এই মানসিকতা থেকে সরে আসতে হবে। এব্যাপারে তিনি সামাজিকভাবে সকলকে সচেতনতা বৃদ্ধি আহ্বান জানান।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)