মঙ্গলবার ● ১৬ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » কৃষি » পাইকগাছায় কলম তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছে নার্সারী মালিকরা
পাইকগাছায় কলম তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছে নার্সারী মালিকরা
প্রকাশ ঘোষ বিধান ॥
পাইকগাছায় গাছের চারা উৎপাদনে কলম তৈরী করতে ব্যস্ত সময় পার করছে নার্সারীর মালিক ও কর্মরত শ্রমিকরা। কলমের কথা শুনলে চোখে ভেসে ওঠে নানা ডিজাইনের বাহারী রঙ্গের লেখার কলম। তবে এ কলম লেখার নয়। গাছের চারা তৈরীর পদ্ধতির নাম কলম। এ কলম তৈরীতে রয়েছে নানা নাম ও পদ্ধতি। যেমন গুটি কলম, বাডিং বা চোখ কলম, গ্রাফটিং, জোড় কলম, কাটিং পদ্ধতি উল্লেখ যোগ্য। উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৫ থেকে ৬ শত নার্সারী গড়ে উঠেছে। যার উল্লেখ যোগ্য সংখ্যা রয়েছে গদাইপুর গ্রামে। বর্ষার মৌসুম শুরুতে চারা তৈরীর জন্য নার্সারী মালিক ও কর্মচারীরা ব্যস্ত হয়ে ওঠে। গুটি কলম তৈরী করতে তারা গাছের ডালের দুই ইঞ্চি মত ছাল পুরাটা গোল করে কেঁটে ফেলে জৈব সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে কাঁটা অংশ ভাল করে বেঁধে রাখে। ১ মাসের মধ্যেই মাটির ভিতর থেকে শিকড় বেড় হয়। পেয়ারা, লেবু, জলপাই সহ বিভিন্ন গাছে গুটি কলম তৈরী করা হয়। জোড় কলম তৈরী করতে গাছের ডালের সঙ্গে গাছের ডাল জোড়া লাগিয়ে জোড় করম তৈরী করা হয়। তেজপাতার সঙ্গে কাবাবচিনি, আম সঙ্গে আম, ছবেদার সঙ্গে খিরখাজুর, আতা সঙ্গে দেশী আতা জোড় দিয়ে জোড় কলম তৈরী করা হয়। কাঁটা জাতীয় কুল সহ বিভিন্ন ফলের চারা চোখ বসিয়ে বাডিং কলম তৈরী করা হয় এবং ফুল জাতীয় গাছের ডাল কেঁটে সরাসরি মাটিতে পুতে কমল তৈরী করা হয়। জানাগেছে উপজেলার বিভিন্ন নার্সারীতে চলতি মৌসুমে ৮০ লাখের উপরে কলম তৈরী হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নার্সারী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অশোক কুমার পাল জানান, তিনি প্রায় ২৫ লাখ কলম তৈরী করেছেন। এর মধ্যে গুটি কলম ১০ লাখ, জোড় কলম ৫ লাখ, গ্রাফটিং ৫ লাখ। এ সব কলমের মধ্যে থাই পেয়ারা, জামরুল, মালাটা, কদবেল, কমলালেবু, আম সহ বিভিন্ন জাতের কলম রয়েছে। তিনি আরো জানান, গদাইপুর এলাকার তৈরী কলম বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, রাজশাহী সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। তবে ঠিকমত বাজার দর না পাওয়ায় নার্সারী মালিকরা আশানারুপ ব্যবসা করতে পারছে না। গদাইপুর গ্রামের নার্সারী মালিক শামছুর রহমান জানান, গত বছর তার নার্সারীতে উৎপাদিত চারা বিক্রি করতে না পারায় ক্ষেতে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। নার্সারী ব্যবসায়ীরা জানান, চারা উৎপাদনে সরকারি ভাবে লোনের ব্যবস্থা করলে দেশের আত্ম-সামাজিক উন্নয়নে নার্সারী শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষি বিদ এএইচএম জাহাঙ্গীর আলম জানান, পাইকগাছার নার্সারী শিল্প খুলনা জেলা শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। নার্সারী ব্যবসায়ীরা চারা বিক্রি করার আশানারুপ বাজার ধরতে না পারায় তারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে নার্সারী মালিকদের বিভিন্ন সময় চারা তৈরী সহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে তদারকী ও পরামর্শ দিচ্ছে। নার্সারী ব্যবসা করে মালিক, ব্যবসায়ীরা সাবলম্বী হচ্ছে। তেমনি নার্সারীতে নিয়জিত হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। নার্সারীতে উৎপাদিত চারা সবুজ বননায়নে উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা রেখে পরিবেশের ভারশাম্য রক্ষা করছে। তেমনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রাখছে বড় অবদান।