

রবিবার ● ২৩ মার্চ ২০২৫
প্রথম পাতা » ব্যবসা-বাণিজ্য » মাগুরায় জমে উঠেছে ঈদ বাজার
মাগুরায় জমে উঠেছে ঈদ বাজার
শাহীন আলম তুহিন,মাগুরা থেকে : আর মাত্র ৭-৮ দিন পরই হবে ঈদুল ফিতর । ঈদ মানেই আনন্দ । আর সেই আনন্দকে সাথী করতে প্রত্যেক মানুষ পছন্দের সুন্দর জিনিসটি কিনতে করতে ছুটছেন বিভিন্ন মার্কেটে । কেউ কিনছেন,শাড়ী ,কেউ পাঞ্জাবী,কেউ বেবি ড্রেস,কেউ থ্রি-পিচ আবার কেউ বাহারী কসকেটিকস কিনে আনন্দ বোধ করছেন ।
সরজমিন রবিবার মাগুরায় বিভিন্ন সপিং মল ও বিপনী বিতানগুলো ঘুরে দেখা গেল এ চিত্র । ঈদকে সামনে রেখে শহরের বিপনী বিতানগুলো জমে উঠেছে। প্রতি বছর ঈদকে সামনে রেখে মানুষ ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে ওঠে । শহরের বেবী প্লাজা,নুরজাহান প্লাজা,সুপার মার্কেট,কাজী টাওয়ার মার্কেট,জমজম মার্কেট,জুতাপট্টি,সমবায় মার্কেট,শাহিদা মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে । ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে বিভিন্ন মার্কেটে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। পাশাপাশি ফুটপাতের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায় । শহরের মানুষের ভিড়েও গ্রামের মানুষেরা ঈদের কেনাকাটার জন্য ফুটপাতের দোকান গুলোতে আসে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১৫ রোজার পর থেকে দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। আমরা সারা বছর ঈদকে লক্ষ্য রেখে বসে থাকি। ঢাকা থেকে ভালো ভালো পণ্য ক্রয় করি। রমজানের শুরুতে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে টেইলার্সের দোকান গুলোতে। রমজানের শুরুতে তরুনী ও নারীরা আগেই টেইলার্স ও ছিট কাপড়ের দোকানে গিয়ে পছন্দের দেশী-বিদেশী থ্রি-পিচ পছন্দ করছেন । নিজের পছন্দের উপর ভিত্তি করে তারা সেই তৈরি করতে দিচ্ছেন।
মাগুরা শহরের হাজী কমপ্লেক্স এর দোয়েল ফেবিক্স এ সত্ত্বাধিকারি আলাউদ্দিন হোসেন বলেন,রমজানের শুরুতে আমি ঢাকা থেকে ভালো ভালো থ্রি পিচ ,ছিট কাপড়,পাঞ্জাবীর কাপড়,প্রিন্টের গজের কাপড়সহ নানা ধরণের বিদেশী থ্রি-পিচ নিয়ে এসেছি। ১০ রমজানের পর থেকেই দোকানে নানা বয়সী কিশোরী,তরুনী,মহিলাদের ভিড় বাড়ছে। অর্ডার পাচ্ছি। অনেকে কাপড় পছন্দ করে বানাতে দিচ্ছে। বিশেষ করে মেয়েদের থ্রি-পিচের অর্ডার আমরা বেশি পাচ্ছি । রমজানের শুরুতে আমাদের দোকানের কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। আগে কাপড়ের অর্ডার হলে আমরা ভালো ভাবে সেটি তৈরি করতে পারি । আগামী বাইশ রমজান পর্যন্ত কাপড়ের অর্ডার নেব। তারপরে আর অর্ডার নেব না। কারণ ভালো কাপড় তৈরিতে বেশ সময় লাগে। আমরা গ্রাহকের ভালো মানের জিনিস দিতে বিশ্বাসী। তরুণদের পাশাপাশি অনেক পুরুষও আগেই পাঞ্জাবী তৈরি করতে আসছেন । তাই আমরা গ্রাহকদের আগে আসার আহবান করছি । ভালো মানে কাপড় তৈরির জন্য ঈদের ১৫ দিন আগে আসলে আসলে আমরা ভালো মান দিতে পারবো বলে আশা রাখছি । তিনি আরো বলেন,এবার ঈদে দেশী সুতি থ্রি-পিচ বেশি চলছে । পাশাপাশি দেশি প্রিন্টের থ্রি-পিচ ভালো চলছে। পাকিস্তানী থ্রি-পিচ বিন-সাঊদ,সাদা বাহার,আঘানুর,তাওয়াকাল,গুলজি ও গুলবানু বেশ ভালো চলছে। এ থ্রি-পিচ কারুকাজ সুন্দর থাকায় মানুষের চাহিদা খুবই বেশি। এ থ্রি-পিচ গুলোর দাম ২৫শ’ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। আধুনিক ও রুচিশীল তরণী ও নারী এ থ্রি-পিচ বেশি বানাচ্ছে। অপরদিকে ,দেশি প্যাটেল,জয়পুরা বিক্রি হচ্ছে ৬শ’ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। ইন্ডিয়ান ভিপুল,ভিনয় থ্রি-পিচের এবার কদর কম। তবুও অনেকে কিনছে। এ গুলো ১৫শ’ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে । শহরের বেবী প্লাজার শিকদার বস্ত্রালয়ের উজ্জল শিকদার বলেন,এবারের ঈদে শাড়ীর বাজার খুবই মন্দা। তেমন ভিড় নেই দোকানে । সন্ধ্যার পর একটু বেশি ভিড় থাকলেও ক্রেতাদের শাড়ী কেনার প্রতি আগ্রহ কম। শহরের অনেকে এখন বাহারি সব থ্রি-পিচ পড়ছে। তাই শাড়ী কিনছে কম। দেশি শাড়ীর প্রিন্টের কাপড় ভালো চলছে । পাশাপাশি টাঙ্গাইল,তাঁত,জজের্ট,সিল্ক মোটামুটি চলছে। আমরা আশাবাদী ২০ রমজানের পর ক্রেতাদের ভিড় থাকবে। শহরের নুরজাহান প্লাজার রাসেল বস্ত্রালয়ের রাসেল হোসেন বলেন,আমাদের দোকান মুলক শাড়িই বেশি বিক্রি হয়। এখানে শাড়ির পাশাপাশি বিদেশী নানা ধরণের মান সম্পন্ন থ্রি-পিচ রয়েছে । এবার ঈদে ইন্ডিয়ান শাড়ীর মধ্যে রয়েছে জিমি চুপ,রাজস্তানী কাতান, দেশি আড়ং এর কাতান,তাঁত ,টাঙ্গাইল,জর্জেট ও হাইসিল্কের বাহারী সব শাড়ি। এবার দেশি শাড়ির কদর বেড়েছে । বিশেষ করে প্রিন্টের শাড়ী বেশি চলছে। এখন দোকানে মোটামুটি ভিড় বাড়ছে। আশারাখি কয়েকদিনের মধ্যে ক্রেতাদের আরো ভিড় লক্ষ্য করা যাবে ।
শাড়ী কিনতে আসা ডালিয়া পারভীন জানান,ঈদে এবার দেশি প্রিন্টের একটি শাড়ি কিনেছি। আমার মায়ের জন্য টাঙ্গাইল শাড়ি কিনেছি। পাশাপাশি অন্যান্যের জন্য তাঁত ,সিল্ক শাড়ি কিনেছি । থ্রি-পিচ কিনতে আসা সোনিয়া আক্তার বলেন,এবার আমি দেশি সুতি থ্রি-পিচ কিনেছি। কারণ সামনে গরম তাই সুতি থ্রি-পিচ পড়ে খুবই আরাম বোধ করি। পাশাপাশি দেশি আড়ং এর প্রিন্টের থ্রি-পিচ আমার খুবই পছন্দের। সেটিও আমি বানাতে দিয়েছি ।
পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন রাস্তার পাশে ফুটপাতের দোকান গুলোতেও উপচে পড়া ভিড় দেখা। আবার নানা ধরনের চড়ি-মালা,কসমেটিকস নিয়ে বসে আসেন মহিলারা। ফুটপাতের চুড়িমালা বিক্রেতা খদেজা বেগম বলেন,সকাল ৯টায় আমি শহরের এম আর রোগের সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে দোকান সাজিয়ে বসি। বেচা-কেনা খুবই ভালো । বেলা বাড়ার সাথে দুপুর ১২ টার খুব ভিড় থাকে। আবার সন্ধ্যার পর রাত ৯টা পর্যন্ত আমার দোকানে প্রচন্ড ভিড় থাকে। এবারের ঈদে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী বাহারী বিভিন্ন কসমেটিকস পাওয়া যাবে আমার দোকানে।