

শুক্রবার ● ২৮ মার্চ ২০২৫
প্রথম পাতা » কৃষি » মাগুরায় পেঁয়াজ চাষে বাজিমাত দীপক লস্করের
মাগুরায় পেঁয়াজ চাষে বাজিমাত দীপক লস্করের
শাহীন আলম তুহিন, মাগুরা থেকে : চলতি বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকার এবার জেলায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে । এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকার কারণে জেলায় পেঁয়াজ চাষীরা আলোর মুখ দেখেছেন। ঝড়,বৃষ্টিসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ চাষে ক্ষতি হয় বেশি। কিন্তু এবার জেলায় তেমন ঝড়,শিলাবৃষ্টি না হওয়ায় সঠিক সময়ে পেঁয়াজ চাষীরা পেঁয়াজ তুলছেন এবং পাইকারি বাজারে বিক্রি করছেন । বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাগুরায় পেঁয়াজের চাষ না হলেও এ জেলার পেঁয়াজ চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় যাচ্ছে।
কৃষি বিভাগ বলছে ,চলতি বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকার কারণে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। চৈত্র মাসের শুরুতে জেলার ৪ উপজেলার পেঁয়াজ চাষীরা ইতিমধ্যে পেঁয়াজ তুলতে শুরু করছেন। আবহাওয়ার ভাষ্যমতে,গত এক সপ্তাহ আগে দেশে ঝড়,শিলাবৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা ছিল । কিন্তু এবার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে তেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব না থাকার কারণে পেঁয়াজের তেমন কোন ক্ষতি হয়নি । দেশের উত্তরাঞ্চলে কিছুটা ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এবার আমাদের অঞ্চলে শিলাবৃষ্টি হলে জেলার অনেক পেঁয়াজ চাষী ক্ষতির মুখে পড়তো। অনেক পেঁয়াজ চাষী তার ভালো ফলন পেতো না । চলতি বছর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় সবচেয়ে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে । শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া,গোয়ালদহ,মালন্ধ,গাংনালিয়া,চর গোয়ালদহ গ্রামে এবার পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে । পাশাপাশি সদরের বাঁকা হরিশপুর,চেঙ্গারডাঙ্গা গ্রামে পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে ।
মাগুরা সদরের কুচিয়ামোড়া ইউনিয়েনের বাঁকা হরিশপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষী দীপক লস্কর এবার পেঁয়াজ চাষে বাজিমাত করেছেন । উৎপাদন খরচের বেশি এবার তার ফলন ভালো হওয়াতে সে আলোর মুখ দেখছেন ।
সরজমিন সদরের বাঁকা হরিশপুর গ্রামের চেঙ্গারডাঙ্গা মাঠে গিয়ে কথা হয় তার সাথে । সে জানায়, চলতি বছর সে ৬০ শতক জমিতে তার পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। এবার ৬০-৭০ মণ পেঁয়াজ ঘরে তুলবেন বলে তিনি আশা করছেন। ইতিমধ্যে তিনি পেঁয়াজ তুলতে শুরু করেছেন। পৌষ মাসের শুরুতে জমিতে সেচ নিয়ে দিয়ে তিনি পেঁয়াজের বীজ রোপন করেন। সেচ দেওয়ার পর নিয়মিত সার ও ঔষধ দেন। পেঁয়াজ গাছের চারা একটু বড় হলে তিনি জমিতে আরো পরিচর্যা বাড়ান। ৩ মাস পর পেঁয়াজ পরিপক্ক হলে তা তুলে ঘরে তোলা হয়। এবার শিলাবৃষ্টি নিয়ে আমরা খুবই শঙ্কার মধ্যে ছিলাম । কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না থাকার কারণে পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। যদি এবার শিলাবৃষ্টি হতো হলে আমাদের পেঁয়ার সব নষ্ট হয়ে যেতো । কারণ পেঁয়াজের ক্ষেতে পানি জমলে পেঁয়াজের গোড়া থেকে নষ্ট হয়ে যায়। এবার আমার এ চাষে উৎপাদন খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। এবার পেঁয়াজ লক্ষাধিক টাকার বিক্রি আশরা আছে আমার । প্রতি বছর অনেক মহাজনরা আমাদের মাঠ থেকেই পাইকেরি হিসেবে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যায়। এবারর অনেক মহাজন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে। আশা রাখছি ভালো অর্থ পাব ।
একই গ্রামের পেঁয়াজ চাষী হরবিলাস বলেন,আমাদের গ্রামের বরাবরই পেঁয়াজের চাষ ভালো হয়। এবার কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না থাকায় আমরা পেঁয়াজের ভালো ফলন পেয়েছি। আমি ২০ শতক জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছি । ইতিমধ্যে জমি থেকে পেঁয়াজ উত্তোলন শুরু হয়েছে । চৈত্র মাসের শেষ পর্যন্ত পেয়াঁজ উত্তোলনের কাজ চলবে ।
অন্য পেঁয়াজ চাষী সুনির্মল,বিদ্যুৎ বিশ্বাস বলেন, এবার আমরা লাল তীর কিং পেয়াঁজের জাত বেশি আবাদ করেছি। পাশাপাশি বারি জাতের পেঁয়াজও আমাদের মাঠে ভালো হয় । এবার আমরা শিলাবৃষ্টি শঙ্কায় ছিলাম কিন্তু কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকার কারণে আমরা ভালো ফলন পেয়েছি ।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক বিষ্ণুপদ সাহা বলেন ,এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় জেলায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে । আমরা জেলার পেঁয়াজ চাষ উদ্ধুদ্ধ করণের জন্য ৮শ’ পেঁয়াজ চাষীকে জেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। এবার জেলায় ১২ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ করা হয়েছে । তার মধ্যে সদরে ১হাজার ৩৩০ হেক্টর,শ্রীপুরে ৭৫৪৫ হেক্টর,শালিখায় ৭৩৫ হেক্টর ও মহম্মদপুরে ৩ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। এ চাষে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য আমাদের মাঠকর্মীরা কাজ করছে। কৃষিমাঠ কর্মীরা বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে পেঁয়াজ চাষে চাষী পরামর্শ প্রদান ও ভালো ফলনের জন্য কী কী করনীয় সে বিষয়ে কৃষকদের অবগত করেছে। এবার জেলা কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না থাকায় আমরা এ চাষে ভালো ফলন পেয়েছি ।