শিরোনাম:
পাইকগাছা, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১

SW News24
শুক্রবার ● ১১ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » দুর্যোগ আসার আগেই বেড়িবাঁধ মেরামতে ব্যবস্থা নিন
প্রথম পাতা » মুক্তমত » দুর্যোগ আসার আগেই বেড়িবাঁধ মেরামতে ব্যবস্থা নিন
৪৮ বার পঠিত
শুক্রবার ● ১১ এপ্রিল ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

দুর্যোগ আসার আগেই বেড়িবাঁধ মেরামতে ব্যবস্থা নিন

  ---   প্রকাশ ঘোষ বিধান

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূল অঞ্চলের মানুষের সুরক্ষা নির্ভর করে উপকূলীয় বেড়িবাঁধের ওপরে। বাঁধ ভালো থাকলে তারা দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবে। আর বাঁধ ভেঙে গেলে তাদের ঘরবাড়ি, ফসলের খেত, রাস্তাসহ সবকিছু পানিতে ভেসে যায়। নিঃস্ব হয়ে পড়ে মানুষ। বর্ষাকাল শুরু হওয়ার আগেই নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলঞ্চলের মানুষের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলোচ্ছ্বাস বা সাগরের জোয়ারে নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় দিন দিন ছোট হয়ে আসছে উপকূল এলাকার বসতি।

বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় এলাকা। ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল যা জঙ্গল, সমতলসহ বিভিন্ন পরিবেশ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ইন্টারফেসের সমন্বয়ে গঠিত। উপকূলীয় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালি, ঝালকাঠি, বরগুনা, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং বাগেরহাট জেলার বিস্তৃত এলাকাজুড়ে সমুদ্র উপকূলীয় বেড়িবাঁধ প্রকল্প রয়েছে। বাঁধ নির্মাণ এবং পানি নিষ্কাশনে এই প্রকল্পে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয় স্লুইস গেইট বা জলকপাট দ্বারা।

টেকসই বাঁধ ছাড়া উপকূলীয় এ সংকটের মোকাবিলা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সেটি সবাই বুঝে থাকেন, নীতিনির্ধারকেরাও। কিন্তু কাজের কাজ কতটুকু হয়, এ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। একের পর এক প্রকল্প হয়, বিপুল অর্থ খরচ হয় কিন্তু উপকূলের মানুষের দুশ্চিন্তা দিনে দিনে আরও বেশি গাঢ় হয়। খুলনা জেলার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি, তালা ও শ্যামনগরে নদী ভাঙ্গন লেগেই আছে। সেখানে কোথাও বাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে, কোথাও বাঁধ ভেঙে গিয়ে ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে জনপদ। ইতোমধ্যে দুর্বল বাঁধ ভেঙে আশাশুনির আনুলিয়া ইউনিয়নের অন্তত ৬টি গ্রাম বিধ্বস্ত হয়েছে। বাঁধ ভাঙার ক্ষত শুকানোর আগেই তালা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ৪পয়েন্টে ভাঙন ধরেছে। তালার খেশরা ইউনিয়নের শাহাজাতপুর অঞ্চলে কপোতাক্ষ নদের ৪টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাইকগাছার কপোতাক্ষ নদের  বোয়ালিয়া মালোপাড়া, রাড়ুলী মালোপাড়ায় নদের ভাঙ্গনে বিস্তীর্ণ এলাকা বেড়ি বাধ নেই। আমন ক্ষেতের পাকা ধান ঘরে তোলার আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত অতিবাহিত করছেন এলাকাবাসি। যেকোনো মুহূর্তে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে।

উপকূলীয় বেড়িবাঁধের অধিকাংশই দূর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ। আইলা, বুলবুল, সিডর, ইয়াসের মতো ঘুর্নিঝড়ে এসব বাঁধগুলো বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। কয়েকমাস আগে বেতনা নদীর ভাঙনে আশাশুনি উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। সেখানে আবারও বাঁধে ধসের আশঙ্কায় তাদের জীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। সঠিক সময়েই যদি বাঁধ মেরামত না হয় এবং সেটি কাজে না লাগে। ভাঙ্গন শুরু হলে বাধ সঠিক ভাবে মেরামত করা যায় না। তখন দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।

পশ্চিম উপকূলে খুলনার পাইকগাছা, কয়রা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, তালা, আশাশুনির জনপদে কান পাতলে এখন ভেসে আসে বাঁধ ভাঙার খবর। বাঁধ ভেঙে গ্রামের মানুষের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। লক্ষ মানুষ প্রতিবছর নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা, নদী ভাঙন, জলাবদ্ধতার কবলে থাকে। মানুষজন জান ও মালের অনিশ্চয়তার মাঝে বসবাস করে আসছে বছরের পর বছর। উপর মহল এটা জানেন; তবুও কোন কাজ হয় না।তাই উপকূলবাসীর দূর্ভোগও শেষ হয় না।

 ষাটের দশকে নির্মিত পশ্চিম উপকূলের বাঁধগুলো ক্রমেই ক্ষয়ে যাচ্ছে। আশির দশকে এই এলাকায় চিংড়ি চাষের শুরুতে বাঁধ আরও নড়বড়ে হয়ে পড়ে। এরসঙ্গে লবণপানির ধাক্কা, জোয়ারের পানির প্রবল চাপ এই বাঁধকে নাজুক করে তোলে। বিভিন্ন সময়ে এইসব বাঁধ মেরামতের কাজ হলেও যথাযথভাবে কাজ না হওয়ায় বাঁধের এই বেহাল দশা। অস্বাভাবিক জোয়ার কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাস ঠেকানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। উপকূলের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ও চরাঞ্চল জুড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ এবং পুরনো বাঁধ সংস্কার প্রয়োজন।

 উপকূল অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকা নির্ভর করে বাঁধের ওপর। বাঁধের ক্ষতি হলে তাদের সব ভেসে যায়। ফসল নষ্ট হয়, বাড়িঘর নষ্ট হয়। জরুরি খাবার না দিয়ে বাঁধটা শক্ত করে বানিয়ে দেওয়ার দাবিটাই তাদের কাছে প্রধান। সামনের দিনে আর একটি দুর্যোগ আঘাত হানার আগেই উপকূল রক্ষা বাঁধ মেরামত করা জরুরি প্রয়োজন।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)