শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

SW News24
বুধবার ● ২৩ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » মাইক্রোপ্লাস্টিক হতে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে
প্রথম পাতা » মুক্তমত » মাইক্রোপ্লাস্টিক হতে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে
১৫ বার পঠিত
বুধবার ● ২৩ এপ্রিল ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

মাইক্রোপ্লাস্টিক হতে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে

 --- প্রকাশ ঘোষ বিধান

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে পলিথিন ও প্লাস্টিক দূষণ। বনের মাটি ও পানিতে উদ্বেগজনক হারে মিলছে  প্লাস্টিকের অত্যন্ত ক্ষুদ্র অংশ মাইক্রোপ্লাস্টিক। প্লাস্টিক ও পলিথিন হুমকি বাড়াচ্ছে জলজ ও স্থল বন্যপ্রাণী এবং গাছপালার। মাঝে মধ্যে বানর পলিথিন খেয়ে ফেলছে। শুশুক-ডলফিন চোখে ভালো দেখে না। তারাও পলিথিন পেলে জেলিফিশ মনে করে খেয়ে ফেলে। গায়ে পলিথিন জড়িয়ে মারা যাচ্ছে কচ্ছপ। অন্যান্য জলজ প্রাণীও প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ খেয়ে ফেলছে। গাছের শ্বাসমূলের ওপর পলিথিন ও প্লাস্টিকসামগ্রী পড়ে ক্ষতি হচ্ছে। প্লাস্টিক দূষণের কারণে বনের স্থল ও জলজ প্রাণী এবং গাছপালার হুমকি বাড়ছে। প্লাস্টিক আজ বিশ্বব্যাপী এক মহা আতঙ্কের নাম।

আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে সুন্দরবনের অবদান অপরিসিম। এখান থেকে প্রতিবছর প্রায় ৪৬০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে সরকার যা স্থানীয় জনগণের জীবিকা এবং দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখে। কিন্তু প্লাস্টিক দূষণ সুন্দরবনের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুন্দরবনের ৫৪টি নদীতে প্রতিদিন প্রায় ৫০ টন পলিথিন ও প্লাস্টিক জমা হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য হারাচ্ছে। সুন্দরবনের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে।

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে সারা বছরই কম-বেশি দর্শনার্থী থাকেন। দীর্ঘক্ষণ বনের মধ্যে অবস্থান করায় বিভিন্ন ধরনের খাবার ও পানির জন্য অনটাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার করেন তারা। ব্যবহার শেষে এসব প্লাস্টিকের মোড়ক এবং খালি বোতল সুন্দরবনে ফেলে দেওয়া হয়। সুন্দরবনের মধ্যে পর্যটক ও বনজীবীরা যেখানে সেখানে পলিথিন, চিপস, চানাচুর, বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল, একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের থালা ও কাপ ফেলে থাকে। বনের যেসব এলাকায় মানুষের যাতায়াত বেশি, সেখানে প্লাস্টিক দূষণও বেশি। তবে পর্যটক ও বনজীবীরা শুধু সুন্দরবনের ভেতরে গিয়েই দূষণ ঘটাচ্ছেন না, বনসংলগ্ন লোকালয় থেকেও এগুলো জোয়ার-ভাটায় নদীর পানিতে ভেসে বনে যায়। বনসংলগ্ন ৮০টি গ্রাম থেকে ৫২টি নদী-খাল হয়ে জোয়ারের সময় একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের থালা ও কাপ বনের মধ্যে চলে যাচ্ছে। ফলে প্লাস্টিক বর্জ্যে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সুন্দরবনের প্রাণিকূলের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

সুন্দরবন ও উপকূলীয় এলাকা এখন প্লাস্টিকে সয়লাব। একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের তিনটি প্রধান নদীর অন্তত ১৭ প্রজাতির মাছ ও ৩ প্রজাতির শেলফিশ মাইক্রো-প্লাস্টিকে সংক্রমিত। প্রতি বৎসর গড়ে প্রায় ১৩ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক খাচ্ছে একজন মানুষ। দেশের ৭৩ শতাংশ মাছে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণার অস্তিত রয়েছে। শুধু মাছ নহে, পানি, লবণ, চিনি, আটা, বাতাস প্রভৃতিতেও মিশে যাচ্ছে। এসব মাছ খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের খাদ্যশৃঙ্খলে প্লাস্টিক কণা প্রবেশ করছে। পাচনতন্ত্র, লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি মাতৃদুগ্ধ ও মানবভ্রূণ-শুক্রাণুতেও এর অস্থিত মিলছে। নারীদের বন্ধ্যাত্বের কারণও হতে পারে এ প্লাস্টিক কণা। তাই এখনই সময় সুন্দরবন ও উপকূলীয় এলাকায় একবার ব্যবহার্য সব ধরনের প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার।

অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিকের বর্জ্য প্রতিনিয়ত জলাভূমি, নদনদীতে গিয়া পড়ছে। আর জোয়ার ভাটার টানে সুন্দরবন ও সমুদ্রে গিয়ে স্থিতি হচ্ছে। ডাস্টবিন, ড্রেনসহ নানা স্থানে ফেলে দেওয়া পলিথিন বিভিন্নভাবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। পলিথিন নদীর তলদেশে জমা হয়ে নদীর তলদেশও ভরাট করে ফেলে। শুধু ভরাট হওয়া নয়, নদীর তলদেশে বর্জ্য ও প্লাস্টিকের আস্তরণ এতটাই পুরু হয়েছে যে, ভাটার তোড়েও সেসব অপসারিত হতে পারে না। অনেক সময় ভারী নৌযান পর্যন্ত আটকে যায়। নদীর নাব্য ঠিক রাখতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ নিয়মিত খনন করে থাকে। কিন্তু পলিথিন ও প্লাস্টিকের আস্তরণের কারণে সেই খননকাজও চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। নদী থেকে সাগর ও মহাসাগরেও প্রতিনিয়ত জমছে বহু প্লাস্টিক-বর্জ্য। এই জঞ্জাল নদীর তলদেশের প্রাণিসম্পদ ও উদ্ভিদ তথা সার্বিকভাবে জীববৈচিত্র্যেরও অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করছে।

শুধু সুন্দরবনে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করলে হবে না। সুন্দরবনসংলগ্ন নদ-নদী ও উপকূলীয় এলাকায়ও প্লাস্টিক বন্ধ করতে হবে। প্লাস্টিক দূষণ ও শিল্প দূষণে সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। গ্রিনহাউস গ্যাসের একটি কারণ প্লাস্টিক। এটি তৈরিতে প্রায় ৩৮ ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে ১২ থেকে ১৮ ধরনের কেমিক্যাল অত্যন্ত ক্ষতিকর। পলিথিনও একবার ব্যবহার্য পণ্যের মধ্যে পড়ে। এটা কোনোভাবে রিসাইকেল হয় না, বরং বর্জ্য উৎপন্ন করে। এখনই পলিথিন ও প্লাস্টিক বন্ধ করতে হবে। প্রতিবছর সুন্দরবনের প্রায় দেড় লাখ হেক্টর বনভূমি দূষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই সুন্দরবন রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া খুবই প্রয়োজন। তা না হলে সুন্দরবনের ক্ষতি বাড়তে থাকবে। প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রভাবে পরিবেশ বিপর্যয় হতে সুন্দরবনকে রক্ষা করাতে আমাদের প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহার বন্ধ করতে করে।

লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)