বৃহস্পতিবার ● ৩ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » সু-সাহিত্যিক কাজী ইমদাদুল হকের ১৩৪তম জন্মবার্ষিকী
সু-সাহিত্যিক কাজী ইমদাদুল হকের ১৩৪তম জন্মবার্ষিকী
এস ডব্লিউ নিউজ ॥
সু-সাহিতিক্যের ১৩৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কাজী ইমদাদুল হক স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে শুক্রবার সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রতিকৃতিকে পূষ্পমাল্য অর্পন, আলোচনা সভা, পদক বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কাজী ইমদাদুল হক ১৮৮২ সালের ৪ ঠা নভেম্বর খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। (বর্তমান মেলেকপুরাইকাটী) কাজী ইমদাদুল হকের পিতামহ ছিলেন কাজী মেহেদী বিল্লাহ ও পিতা আতাউল হক। কাজী আতাউল হক ১৮৪৪ সালে গদাইপুর জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি প্রথমে আসামে জরিপ বিভাগে চাকুরী করতেন। পরে তিনি মুক্তরি পাশ করে খুলনা আদালতের আইনব্যবসা শুরু করেন। কাজী ইমদাদুল হক ছিলেন পিতার একমাত্র সন্তান। কাজী ইমদাদূল হকের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় গ্রামের স্কুলে ও পারিবারিক পরিবেশে। বন্ধুবর প্রফুল্য চন্দ্র রায়ের উৎসাহ ও পরামর্শে কাজী ইমদাদুল হককে ১৮৯০ সালে খুলনা জেলা স্কুলে ৫ম শ্রেনীতে ভর্তি করেন। ১৮৯৬ সালে খুলনা জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রাস পাশ করেন। ১৮৯৮ সালে কলকাতা মাদ্রাসা থেকে এফ, এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি, এ পাশ করেন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন তিনি পদার্থ বিদ্যা ও রাসায়ন শাস্ত্রে অনার্স নিয়ে ডিগ্রী কাসে ভর্তি হন। কিন্তু পরীক্ষার আগে অসুস্থতার কারণে অনার্স পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিষয়ে এম,এ, ওবি,এল শ্রেণীতে পড়েছিলেন। কিন্তু তিনি পরীক্ষার আগেই বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে নির্বাচিত হয়ে ১৯০৩ সালে কলকাতা মাদ্রাসার অস্থায়ী শিক্ষক পদে নিয়োগ লাভ করেন। এরপর পূর্ববঙ্গ ও আসান প্রদেশ গঠিত হওয়ায় ১৯০৬ সালে আসামে শিলংয়ে শিক্ষা বিভাগে ডিরেক্টরের অফিসে উচ্চমান সহকারী পদে চাকুরী গ্রহণ করেন। ্আত্মীয় স্বজন ছেড়ে সুদর প্রবাশে তিনি নিজেকে মানিয়ে নিতে না পেরে এবং স্বাস্থ্যহীনতার কারণে দেশে ফিরে আসেন। এ সময় পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশে শিক্ষা বিভাগে ডিরেক্টর ছিলেন মিঃ শার্প। কাজী ইমদাদুল হক শার্প সাহেবের স্নেহ দৃষ্টি লাভ করেন এবং ১৯০৭ সালে ঢাকা মাদ্রাসার শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন। তখন তার মাসিক বেতন ছিল ৫০ টাকা। পূর্ববঙ্গ আসাম প্রদেশের শিক্ষা বিভাগের শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল সংস্কার সাধনে নতুন শিক্ষা প্রণালী প্রবর্তনে উদ্যোগী হন। কিছুকাল পরে এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ১৯১১ সালে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভুগোলের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। তিনি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ মিঃ বিস এর আগ্রহে বি, টি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে বি, টি ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯১৪ সালে তিনি প্রদেশিক এডুকেশন সার্ভিসে উন্নতি হয়ে ঢাকা বিভাগের মুসলিম শিক্ষার সহকারী স্কুল ইসপ্টেরের পদে ময়মনসিংহে অবস্থিত কার্যালয়ে নিযুক্ত হন। ১৯১৭ সালে কলকাতা টিচার্স ট্রেনিং স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯২১ সালে ঢাকা মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি প্রথম কর্মদ পদে নিযুক্ত হন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন। ১৯০৪ সালে খুলনা শহরে মৌলভী আব্দুল মকসুদ সাহেবের জৈষ্ঠ্য কন্যা সামসন্নেসা খাতুনকে বিয়ে করেন। কাজী ইমদাদুল হকের পাঁচ পুত্র ও ২ কন্যা কাজী আনারুল হক, কাজী সামছুল হক, কাজী আল্উাল হক, কাজী নুরুল হক, কাজী টুকু আঠারো মাস বয়েছে মারা যান এবং কন্যা ২ জন জেবুন্নেছা ও লতিফুন্নেছা। কাজী ইমদাদুল হকের পুত্র কাজী আনারুল হক শিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৯১৮ সালে মুত্রাশায় (কিডনি জনিত) পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার একটি কঠিন অস্ত্রপাচারের ফলে কাজী ইমদাদুল হককে দীর্ঘ ৬ মাস হাসপাতালে থাকতে হয়। সে সময়ে তিনি আব্দুল্লাহ উপন্যাস রচনা শুরু করেন। এর ২ বছর পর মোজাম্মেল হক ও আফজালুল হক মোসলেম ভারত পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই পত্রিকায় ‘‘আব্দুল্লাহ’’ উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। প্রায় দেড় বছর কাল মোসলেম ভারত ‘‘আব্দুল্লাহ’’ প্রকাশিত হয়। উপন্যাসের ত্রিশটি পরিচ্ছেদ কাজী ইমদাদুল হক রচনা করেন এবং অবশিষ্ট্য ১১টি পর্ব তিনি খসড়া রেখে গিয়েছিলেন। ৩১থেকে শেষ ৪১ পর্যন্ত অংশের খসড়া ইমদাদুল হক রেখে গিয়েছিলেন তা অবলম্বনে উপন্যাসটি সম্পন্ন করার দায়িত্বপান কাজী আনোয়ারুল কাদির রেখে যাওয়া ১১টি পরিচ্ছেদের খসড়া অবলম্বন করে কাজী আনোয়ারুল কাদির উপন্যাসটি শেষ করেন। ১৯৬৮ সালে কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড থেকে আব্দুল কাদিরের সম্পাদনায় কাজী ইমদাদুল হক রচনাবলী প্রকাশিত হয়। ১৯২৩ সালে তিনি আবার গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক সময় সকলেই তার জীবনের আশা ছেড়ে দেন। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে সুস্থ্য হয়ে উঠেন। ১৯২৬ সালে তিনি কিডনি রোগে আবার আক্রান্ত হন। স্থানীয় চিকিৎসার কোন প্রতিকার না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার করার জন্য দিল্লীর উদ্দেশ্য কলকাতা গমন করেন। কলকাতার অবস্থান করা কালীন ১৯২৬ সালে ২০ মে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে পরলোগমন করেন। কাজী ইমদাদুল হককে কলকাতার গোবরা কবরস্থানে তার মাতার কবরের পাশে দাফন করা হয়। কাজী ইমদাদুল হকের প্রায় সমগ্র কর্ম জীবনই কেটেছে সরকারী চাকুরীতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষা বিভাগে বিভিন্ন কাজে অসামান্য দক্ষতা, গভীর দায়ীত্ববোধ ও উদ্ধাবনী শক্তির স্বীকৃতি স্বরুপ তৎকালীন ব্রটিশ সরকার তাকে ১৯১৯ সালে খান সাহেব উপাধীতে ভুষিত করেন ও ১৯২৬ সালে তাকে খান বাহাদুর উপাধীতে ভুষিত করে তাকে সম্মানিত করা হয়।