বুধবার ● ৯ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » ইতিহাস ও ঐতিহ্য » বঙ্গোপসাগর মোহনায় ১২ থেকে ১৪ নভেম্বর থেকে রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হবে
বঙ্গোপসাগর মোহনায় ১২ থেকে ১৪ নভেম্বর থেকে রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হবে
এস ডব্লিউ নিউজ ঃ
১২ নভেম্বর থেকে বঙ্গোপসাগর মোহনায় দুবলার চরে ৩ দিন ব্যাপী রাসমেলা শুরু হতে যাচ্ছে। ভারত বর্ষের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ প্রাচীন রাসমেলা সুন্দরবনের সাগরদুহিতা দুবলারচরে অনুষ্ঠিত হবে। কথিত মতে ১৯২৩ সালে গোপালগঞ্জে ওড়াকান্দির হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুসারী হরিভজন নামে এক সাধুৃ সুন্দরবনের দুবলাচরে রাস পূর্ণিমায় পূজা-পাবর্নাদি ও অনুষ্ঠান শুরু করেন। এরপর থেকে প্রতিবছর শুরু হয় রাসমেলা।
শত বছরের এ ঐতিহ্যবাহী রাসমেলা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বন বিভাগ, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, আয়োজক কমিটি সহ বিভিন্ন সংস্থা নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় সুন্দরবনের দুবলা ও আলোকোল চর সমুহে রাস পুর্ণিমায় রাধাকৃষ্ণের পুজা, পুর্ণ øান উপলক্ষ্যে ৩ দিন ব্যাপী রাসমেলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলার অনুষ্ঠান মালার মধ্যে রয়েছে ১২ নভেম্বর সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ১৩ নভেম্বর উদ্বোধনী পর্ব, পূজা, কীর্ত্তন, লালন ও হাসানের সংগীত অনুষ্ঠান ও ১৪ নভেম্বর সমুদ্র øানের মধ্যদিয়ে রাসমেলা শেষ হবে। সাগর মোহনা সুন্দরবন দুর্বলার চরে ও আলোরকোল সহ বিভিন্ন চরে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব নিয়ে উপকূলবাসী সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের মাঝে সাজ সাজ রব পড়েছে। রাসমেলায় যাওয়ার জন্য পুর্ণার্থী, দর্শনাথী ও পর্যটকদের মাঝে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে।
৩ তিন ব্যাপী রাসমেলায় পুর্ণিমা তিথিতে চরে নির্মিত মন্দিরে রাধাকৃষ্ণ, কমল কামিনি ও বনবিবির পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পুর্ণিমার পুর্ণ তিথিতে সকালে সাগর ঢেউয়ে পুর্ণ øানের জন্য লক্ষাধিক নারী পুুরুষ বিভিন্ন ধরনের প্রসাদ নিয়ে মানত ও মনোবাসনা পুর্ণের জন্য চরে সারীবদ্ধ হয়ে বসবে। সাগর ঢেউয়ে øান শেষে পুর্ণাথিরা বাড়ী ফেরা শুরু করে। অটুট বিশ্বাস আর পুর্ণ ভক্তিতে কমল কামিনীর দর্শন মেলে। পুর্ণাথিরা কমল কামিনী দর্শনের আশায় নিলকোমলের সাগর মোহনায় সাগর ঢেউঢেয় øান করে। রাস পুর্ণিমায় প্রথম আসা সমুদ্র ঢেউকে নিলকোমলের ঢেউ বলা হয়। এই প্রথম ঢেউয়ে পুর্ণাথিরা তাদের হাতে ধরে রাখা প্রসাদ ঢেউয়ে উৎসর্গ করে øান সেরে শেষ করে। রাস পুর্ণিমা উ্পলক্ষ্যে ৩ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে পুজা, সারারাম ব্যাপী নাম কীর্ত্তন, ছাড়াও আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর ১৩৩ তম রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানাগেছে, এবার মেলা বেশ জমজমাট ভাবে উদযাপনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সুন্দরবনের দুর্বলার চর, আলোরকোল সহ বিভিন্ন চরে অবস্থিত মৎস্যজীবী সহ রাসপুর্ণিমা উপলক্ষ্যে আগত পুর্ণিার্থী, দর্শনার্থী ও পর্যটক মিলে বিশাল জন সমুদ্রে পরিণত হয়। মেলায় প্রায় ৮/১০ লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে। রাসমেলায় তীর্থযাত্রীদের নিরাপদে যাওয়ার জন্য সুন্দরবন বিভাগ যাওয়ার ও আসার পথ নির্ধারণ করেছে। এ সকল পথে বন বিভাগ, পুলিশ, র্যাব ও কোষ্টগার্ড, তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের জানমালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। রাসমেলায় যাওয়ার জন্য অনুমতি নিয়ে প্রবেশ পথে এন্ট্রিফি প্রদান করতে হবে। যাত্রীরা নির্ধারিত পথে দিনের বেলায় চলাফেরা করতে পারবে। বনবিভাগ চেকিং পয়েন্ট ছাড়া যাত্রীরা অন্য কোথাও নৌকা, ট্রলার, লঞ্চ থামাতে পারবে না। এ ব্যাপারে সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের নলিয়ান ষ্টেশন কর্মকর্তা রীফি-উদ-দৌলা জানান, রাস মেলায় তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীরা যাতে নির্বিঘেœ যেতে পারে তার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সুন্দরবন বন বিভাগের পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ সাঈদ আলী জানান, রাসমেলা উপলক্ষে মেলায় আগত তীর্থযাত্রী, দর্শনার্থী ও পর্যটকদের আস যাওয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশা-পাশি হরিণ শিকাররোধে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। প্রতি বছর কার্তিক মাসের শেষ বা অগ্রহায়ণ মাসের ১ম দিকে পুর্ণিমা তিথিতে এ রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকেরা পুর্ণিমার প্রথম প্রহরে সাগর জলে øান করে মনোবাসনা পুর্ণ ও পাপমোচন হবে এ বিশ্বাস নিয়ে রাসমেলায় যোগদিলেও সময়ের ব্যবধানে এ উৎসব নানা ধর্ম ও বর্ণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এ সময় অসংখ্যক বিদেশী পর্যটকদেরও আগমন ঘটে। আবাল বৃদ্ধ বনিতা, নির্বিশেষে সাগর চর এলাকায় উপস্থিতিতে কোলাহল, পদচালণায় মুখরিত হয়ে উঠবে। প্রতি বছর রাস উৎসব মানুষের মিলন মেলায় রুপ নেয়। সাগরপাড়ে দুবলা ও আলোরকোল চর সমুহে অনুষ্ঠিত রাস উৎসব সুন্দরবনের ঐতিহ্যকে আরো সমৃদ্ধ করেছে।