শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
বুধবার ● ৯ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » পরিবেশ » রাস মেলায় যেতে উপকূলবাসীর মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি; হরিণ শিকারীরা তৎপর হচ্ছে
প্রথম পাতা » পরিবেশ » রাস মেলায় যেতে উপকূলবাসীর মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি; হরিণ শিকারীরা তৎপর হচ্ছে
১১৬৬ বার পঠিত
বুধবার ● ৯ নভেম্বর ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

রাস মেলায় যেতে উপকূলবাসীর মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি; হরিণ শিকারীরা তৎপর হচ্ছে

---

এস ডব্লিউ নিউজ ॥

প্রতি বছরের ন্যায় এ বারও রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে সুন্দরবনের দুবলার চরে ঐতিহ্যবাহী রাস পূর্ণিমা পুণ্যøান ও ৩ দিন ব্যাপী মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে রাস পূর্ণিমার পূর্ণøানে অংশগ্রহণ করতে উপকূল অঞ্চলের পূর্ণার্থী, তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। এর পাশাপাশি সুন্দরবনে প্রবেশে কড়াকড়ির মধ্যেও রাস পূর্ণিমার মেলাকে ঘিরে  শিকারীদের হরিণ নিধন যজ্ঞের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। সুন্দরবন সংলগ্ন  উপজেলার শিকারীরা রাসমেলার আড়ালে হরিণ শিকারের ফাঁদ, জাল, বরশি সহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। হরিণ শিকারী চক্রের দৌরত্ব আশংখাজনক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় পরিবেশবিদরা ধারণা করছেন, সারা বছর সুন্দরবনে শিকারী চক্রের হাতে যে পরিমাণ হরিণ শিকার হয় রাসমেলার সুযোগে সেই সমপরিমাণ হরিণ শিকারের আশংখা রয়েছে।

সুন্দরবন সংলগ্ন ৮টি উপজেলার প্রায় শতাধিক অবৈধ শিকারী চক্র সক্রিয়। এসব শিকারী চক্র হরিণ নিধনের পর মাংস, চামড়া, হাঁড়, শিং বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। লন্ডন ভিত্তিক ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাষ্ট অফ বাংলাদেশ ও জুলজিক্যাল সোসাইটির তথ্য মতে সুন্দরবনে বছরে প্রায় ১০ হাজারের বেশী হরিণ শিকারীদের হাতে মারা পড়ে। সুন্দরবনের বন বিভাগের হিসাব মতে সুন্দরবনের বাংলাদেশের অংশে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার চিত্রা হরিণ রয়েছে। বনের আয়তন খাদ্য, ও পরিবেশের উপর এর সংখ্যা নির্ভর করে। প্রতিবছর কয়েক হাজার হরিণ মারা পড়ে। আবার কয়েক হাজার হরিণ জন্ম নেয়। সুত্রমতে ৮/১০ বছরের ব্যাবধানে বনে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হরিণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

পূণ্যøানে নিরাপদে যাতায়াতের জন্য দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের জন্য সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ আটটি পথ নির্ধারণ করেছে। এ সকল পথে বন বিভাগ, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টকার্ড বাহিনীর টহল দল তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়জিত থাকবে। অনুমোদিত আটটি পথ হলো বুড়িগোয়ালিনী, কোবাদক থেকে বাটুলানদী-বলনদী-পাটকোষ্টা হয়ে হংসরাজ নদী হয়ে দুবলারচর। কদমতলা হতে ইছামতি নদী, দোবেকী হয়ে আড়পাঙ্গাসিয়া-দোবেকী হয়ে দুবলার চর। কৈখালী স্টেশন হয়ে মাদার গাং, খোপড়াখালী ভাড়ানী, দোবেকী হয়ে আড়পাঙ্গাসিয়া-দোবেকী হয়ে দুবলার চর। কয়রা, কাশিয়াবাদ, খাসিটানা, বজবজা হয়ে আড়–য়া শিবসা নদী হয়ে দুবলার চর। নলিয়ান স্টেশন হয়ে শিবসা নদী হয়ে দুবলার চন। ঢাংমারী/চাঁদপাই স্টেশন হয়ে পশুর নদী দিয়ে দুবলার চর, শরণখোলা স্টেশন হয়ে বগী-বলেশ্বর-শুপতি-কচিখালী-শেলারচর হয়ে দুবলার চর। দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীরা ১২ হতে ১৪ নভেম্বর এ তিন দিনের জন্য অনুমতি প্রদান করা হবে এবং প্রবেশের সময় এন্ট্রি পথে নির্দিষ্ট ফি প্রদান করতে হবে। যাত্রীরা নির্ধারিত রুটের পছন্দমতো একটি মাত্র পথ ব্যবহারের সুযোগ পাবেন এবং দিনের  বেলায় চলাচল করতে পারবেন। বনবিভাগের চেকিং পয়েন্ট  ছাড়া অন্য কোথাও নৌকা, লঞ্চ বা ট্রলার থামানো যাবে না। প্রতিটি ট্রলারের গায়ে রং দিয়ে বিএলসি/সিরিয়াল নম্বর লিখতে হতে প্রাপ্ত সনদপত্র সাথে রাখতে হবে। পরিবেশ দূষণ করে এমন বস্তু, মাইক বাজানো, পটকা ও বাজি ফোটানো, বিস্ফোরক দ্রব্য, দেশীয় যে কোন অস্ত্র এবং আগ্নেয়াস্ত্র বহন থেকে যাত্রীদের বিরত থাকতে হবে। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাঈদ আলী স্বাক্ষরিত পত্রে এ সকল তথ্য জানানো হয়েছে।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের ফাক ফোকর দিয়ে শিকারী চক্র বার বার আটক হলেও মুক্তি পাওয়ায় শিকারী চক্রের তৎপরতা বেড়ে গেছে। অভিনব কায়দায় তারা হরিণ শিকার করে। শিকারী সুত্রে জানা গেছে, লাইলনের তৈরী ফাদ,জাল পেতে, স্পিং বসানো ফাঁদ, বিষটোপ, তীর, গুলি করে, কলার মধ্যে বরশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা ফাঁদ ও ঘাস পাতার উপর চেতনা নাশক ঔষধ দিয়ে হরিণ নিধন করা হয়। ফাঁদ পেতে শিকারীরা লাঠি নিয়ে আশে পাশে লুকিয়ে থাকে। হরিণ ফাদে আটকা পড়লে তারা ছুটে গিয়ে হরিণকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এক পর্যায়ে হরিণ দুর্বল হয়ে পড়ছে নৌকায় করে সুবিধামত স্থানে বা মাটির গর্তে লুকিয়ে রাখে। পরে সময় ও চাহিদামত হরিণ জবাই করে মাংস, চামড়া, শিং ও হাঁড় ক্রেতাদের কাছে পৌছে দেয়। রাসমেলাকে সামনে রেখে পেশাদার শিকারীরা বনজীবী সেজে বন বিভাগ থেকে মাছ ও কাঁকড়া ধরার পাশ মারমিট নিয়ে মেলা শুরুর পুর্বেই হরিণ শিকারের উ্পকরণ নিয়ে বনের মাঝে লুকিয়ে রেখে আসে। রাস মেলা উপলক্ষ্যে ব্যাপক নিরাপত্তা গ্রহণ করা হলেও শ্যামনগর, কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, মংলা, রামপাল, সহ উ্পকুলীয় এলাকার শিকারীরা মেলা শুরু হওয়ার ১০/১৫ দিন আগে বনের মধ্যে প্রবেশ করে রেখে আসা শিকারী উ্পকরণ দিয়ে হরিণ শিকার করে। আবার রাস মেলা শুরু হলে বিশেষ কায়দায় উ্পকরণ নিয়ে যাওয়া শিকারীরা তীর্থ যাত্রীদের সাথে একত্রিত হয়ে মিশে যায়। মেলার আনন্দে মেতে উঠা দর্শনার্থী ও নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাকি দেয় এ ফাদ দিয়ে হরিণ নিধন যজ্ঞে মেতে উঠে। রাসমেলার সময় হিরণপয়েন্ট, দুর্বারচর আলোর কোল সহ বিভিন্ন চর ও সুন্দরবন সাগর মোহনায় পুর্ণার্থী, দর্শনার্থী ও পর্যাটক সহ লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে। এ সময় জনসমুদ্রে শিকারী চক্র মিশে গিয়ে চোখ ফাকি দিয়ে হরিণ নিধনে মেতে উঠে। ব্যাপক নজরদারী থাকা স্বত্বেও শুধুমাত্র হরিণ শিকারের উদ্দেশ্যে এ বিশাল মেলায় দর্শনার্থীরুপে আগত শিকারীদের কোনভাবে আটকে রাখা সম্ভব হয় না। এ ব্যাপারে সুন্দরবন বন বিভাগের পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহির উদ্দীন আহম্মেদ জানান, বন বিভাগের জনবল ও লজিষ্টিক সংকট দীর্ঘদিনের। এ সমস্যা নিরসন না হলে শিকারী দমনে কাংখিত ফল পাওয়া সম্ভব নয়। তবে রাস মেলার সময় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও টহল জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি র‌্যাব, পুলিশ, কোষগার্ড ও বনরক্ষীদের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের নলিয়ান ষ্টেশন কর্মকর্তা রীফি-উদ-দৌলা জানান, রাস মেলায় তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীরা যাতে নির্বিঘেœ যেতে পারে তার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সুন্দরবন বন বিভাগের পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ সাঈদ আলী জানান, রাসমেলা উপলক্ষে মেলায় আগত তীর্থযাত্রী, দর্শনার্থী ও পর্যটকদের আস যাওয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশা-পাশি হরিণ শিকাররোধে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।

প্রতি বছর রাস মেলার সময় কয়েক হাজার হরিণ নিধনের আশংকা রয়েছে। তাছাড়া প্রতিনিয়ত হরিণ নিধন হচ্ছে। এভাবে হরিণ নিধন হলে হরিণের সংখ্যা আশংখাজনক হারে হ্রাস পাবে। বিপন্ন হবে চিত্রাহরিণ। বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন হারাবে তার ঐতিহ্য।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)