বৃহস্পতিবার ● ৯ এপ্রিল ২০১৫
প্রথম পাতা » পরিবেশ » সুন্দরবনের মধু আহরণের মৌসুম শুরু হয়েছে : দস্যু আতঙ্কে মৌয়ালরা পশ্চিম বন বিভাগে ২২৫০ কুইন্টল মধু ও ৬৬৫ কুইন্টল মোম আহরণের ল্যমাত্রা
সুন্দরবনের মধু আহরণের মৌসুম শুরু হয়েছে : দস্যু আতঙ্কে মৌয়ালরা পশ্চিম বন বিভাগে ২২৫০ কুইন্টল মধু ও ৬৬৫ কুইন্টল মোম আহরণের ল্যমাত্রা
প্রকাশ ঘোষ বিধান ঃ সুন্দরবনের মধু আহরনের মৌসুম শুরু হয়েছে। মৌয়ালরা মধু সংগ্রহের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সুন্দরবনে প্রবেশ শুরু করেছে। চলতি মৌসুমে বাঘের আক্রমনের ঝুঁকির পাশাপাশি বনদস্যুদের হামলার ভয় মাথায় নিয়ে তাদের বনে যেতে হচ্ছে। বনে ঢোকার আগেই বনদস্যুদের নৌকা প্রতি ২০ হাজার করে টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে মৌওয়ালদের। তবে বন বিভাগের দাবী মৌওয়ালরা কোন অভিযোগ না করায় এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।
সুন্দরবনের মধু সু-মিষ্টি, এ বনের মধু মহাঔষধ ও প্রাকৃতিক সম্পদ। মধু দেশের চাহিদা মিটিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে মৌয়ালরা মধু আহরণ করতে গিয়ে বাঘ, সাপ, কুমিরের সাথে জীবন বাজি রেখে এবং ভয়ংকর বন দস্যুদের চাঁদা, মুক্তিপন মাথায় নিয়ে সুন্দরবনে মধু আহরণ করতে হচ্ছে। তা-ছাড়াও বন বিভাগ থেকে পাশ পারমিট নিতে তাদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১লা এপ্রিল থেকে মধু আহোরনের মৌসুম শুরু হয়েছে। ৩০ জুন পর্যন্ত মধু আহরণ চলবে। বন বিভাগের বিভিন্ন স্টেশন থেকে মৌয়ালরা পাশ পারমিট নিয়ে বনে যাচ্ছে। খুলনা, সাতীর সহ উপকূল এলাকার ১৯-২০টি উপজেলার মৌয়ালরা বিভিন্ন মহাজনের অধিনে মধু সংগ্রহ করতে বনে প্রবেশ করে। সুন্দরবন বনবিভাগে পশ্চিম বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে পশ্চিম বন বিভাগ থেকে মধু ২২৫০ কুইন্টল ও ৫৫৬ কুইন্টল মোম আহরণের ল্য মাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে খুলনা রেঞ্জে মধু ৭৫০ কুন্টল ও ১৯০ কুইন্টল মোম এবং সাতীরা রেঞ্জ থেকে ১৫০০ কুইন্টল এবং ৩৭৫ কুইন্টল মোম। এ বছর বড় ধরনের কোন বিপর্যয় না হলে ল মাত্রার চেয়ে বেশি মধু আহরণের আশা করছে বনবিভাগ।
মধু সংগ্রহের জন্য যে সব বনজীবি মাওয়ালীরা বনে প্রবেশ করেছে এবং প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের জন্য সব থেকে বড় আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। সুন্দরবনের মুর্তিমান আতঙ্ক বনদস্যু। মৌয়ালরা জানায়, সুন্দরবনের বাঘ, কুমিরের মুখ থেকে রেহাই পেলেও রেহাই পাওয়া যায় না মানুষ রুপী ভয়ংকর বনদস্যুদের হাত থেকে। বনদস্যুরা নৌকা প্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার পর্যন্তা চাঁদা মৌয়ালদের কাছ থেকে আদায় করছে। মৌয়ালরা আরো জানায় তারা মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে দাদন নিয়ে বনে মধু আহরণের জন্য প্রবেশ করেছে। বিভিন্ন স্থানে চাঁদা দেওয়ায় বন থেকে মধু সংগ্রহ শেষে হিসাব করে দেখা যায় তাদের আয়ের থেকে খরচ বেড়ে গেছে। তার পরও মৌয়ালরা নানা সমস্যা মাথায় নিয়ে সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ করছে। এ ব্যাপারে সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগীয় কর্মকর্তা জহির উদ্দীন আহম্মেদ জানান, ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মধু আহরণ চলবে। মৌয়ালদের নিরাপত্তার জন্য বনবিভাগের পাশাপাশি কোস্ট গার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে। সুন্দরবনে বনজীবি মৌয়ালরা মধু আহরণে বনের ভিতর নিবিঘেœ চলাচল করতে পারে তার জন্য প্রশাসনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করার জন্য বনবিভাগের নিকট দাবী করেছে।