বৃহস্পতিবার ● ২৪ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » কৃষি » ২৭৯ কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে…… কপোতাক্ষের ভেড়ি বাঁধের মাটি কেটে তৈরী হচ্ছে ফসলী জমি
২৭৯ কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে…… কপোতাক্ষের ভেড়ি বাঁধের মাটি কেটে তৈরী হচ্ছে ফসলী জমি
মো. রিপন হোসাইন,পাটকেলঘাটা ॥
কপোতাক্ষ নদের ভেড়ি বাঁধের মাটি কেটে তৈরী হচ্ছে ফসলী জমি । মেতে উঠেছে দুষ্কৃতিকারী ভূমি দস্যুরা। ফলে কপোতাক্ষ অববাহিকায় যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার ৯টি উপজেলার লক্ষ লক্ষ মানুষ আবারো পানিবন্দি হওয়ার আশঙ্খা করছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শস্যভান্ডার খ্যাত সাতক্ষীরা তথা দক্ষিণাঞ্চলের আশির্বাদ ছিল মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের দুগ্ধ¯্রােতরূপী কপোতাক্ষ নদ। কালের বিবর্তে সময়ের পরিক্রমায় এ নদের বুকে পলি জমে তলদেশ উচু হওয়ায় নদ অববাহিকার কয়েক লক্ষ মানুষ বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেছে। মানুষ, পশুপাখি একসাথে উচু রাস্তার ধারে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বারান্দায়, কালভার্টের উপরে খুপড়ি ঘর করে দীর্ঘ ৬ মাস জলাবদ্ধতার সাথে যুদ্ধ করেছে। এ অঞ্চলের মানুষের দুঃখ কষ্ট লাঘবের জন্য বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে ২৭৯ কোটি টাকা খননের জন্য বরাদ্দ করে। বর্তমান নদটির ভাটি অঞ্চলে প্রায় ৪০ কিঃমিঃ খনন কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। ড্রেজার দিয়ে খননকৃত মাটি নদের দু’ধারে ভেড়ি বাঁধ হিসেবে রাখা হলেও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তিরা দখল পূর্বক ফসল আবাদ করছে। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল সকাল ১০ টায় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতে তালা উপজেলার সীমান্ত কপোতাক্ষের ওপারে কেশবপুর উপজেলার কোমরপুর গ্রামে কৃষক হরষিদ দাস (৫৫), ভেড়িবাঁধের উপরে বসে ১৫-২০ জন শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে খননকৃত কপোতাক্ষ নদ ভরাটপূর্বক ফসলী জমি তৈরী করছে। ঘটনাস্থলের ছবি তুলতেই সাধারণ শ্রমিকরা সাংবাদিকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে তারা বলতে থাকে কোমরপুর গ্রামের ফজর আলীর পুত্র রানা, সুলতান, স্থানীয় আলাউদ্দীন, গফুর, গফ্ফার, লুৎফর, বাঁধের মাটি কেটে রীতিমতো ফসল চাষ করছে। তাহলে আমরা মাটি কাটলে দোষ কোথায়। হরষিদ দাস বলেন, রেকর্ডীয় সম্পত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড মাটি রেখেছে। যেকারণে মাটি কেটে অন্যান্যদের মত ফসলের ক্ষেত তৈরী করছে। কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালীপনায় কপোতাক্ষ পাড়ের তালা উপজেলার গোনালী নলতা, গঙ্গারামপুর, আচিমতলা, মাহমুদপুর, মেলেকবাড়ী, সেনপুর, বগা এলাকায় ইটভাটার মালিক সহ স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তালা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ হোসেন মাটি কাটার অপরাধে কয়েকজনকে জেল জরিমানা করলেও কপোতাক্ষের ভেড়িবাধ মাটি কাটায় এখন হুমকির মুখে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে তালা উপজেলার কাশিপুর ও কেশবপুর উপজেলার কোমরপুর এলাকায় ভেড়িবাধের মাটি কেটে কপোতাক্ষ নদ ভরাটপূর্বক শতাধিক বিঘা ফসলী জমি তৈরী করেছে । সবমিলিয়ে কপোতাক্ষের মাটি হরিলুট হলেও কর্তৃপক্ষ রয়েছে চরম উদাসীন। এবিষয়ে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর গোস্বামিকে অবহিত করা হলে তিনি কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও ফিরোজ রহমানকে গত রবিবার ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন। এবিষয়ে কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ১১ জন ব্যক্তি স্থানীয় সাগরদাঁড়ী ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উষ্কানিতে ভেড়িবাঁধের মাটি কেটে ফসলী জমি তৈরী করছে। তাদেরকে ৩ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুধে আইনুনগ ব্যবস্থ্য গ্রহন করা হবে জানান।