শনিবার ● ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » ইতিহাস ও ঐতিহ্য » মাগুরার রায় গ্রামে নকশি কাঁথায় ভাগ্য ফিরেছে নারীদের
মাগুরার রায় গ্রামে নকশি কাঁথায় ভাগ্য ফিরেছে নারীদের
এস আলম তুহিন ,মাগুরা থেকে :
মাগুরা সদরের রায় গ্রামে নারীদের জীবন-জীবিকা এখন নকশি কাঁথায় । গ্রামীন নারীদের নিপুন হাতে সেলাই নকশি কাঁথা এখন সারাদেশে সমাদৃত ।
সদরের রায় গ্রামে শতাধিক নারী বাড়ির কুঠিরে বসে অবসর সময়ে এ নকশি কাঁথা সেলাই করছেন ।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ব্র্যাকের আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন গ্রামীণ নারীদের আতর্œনির্ভরশীল ও স্বাবলম্ভী করতে ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এ কাজ করছে ।
গ্রামীণ নারীদের এ নকশি কাঁথা সেলাইয়ের বিভিন্ন রঙিন সূতা ,সূচ , কাপড় ও অন্যান্য উপকরণ এ ফাউন্ডেশন সরবরাহ করে থাকে । দীর্ঘদিন ধরে রায় গ্রামের প্রায় শতাধিক দু:স্থ নারী এ পেশায় যুক্ত হয়ে জীবন জীবিকার উপর নির্ভর করছে । এ পেশা থেকে অর্জিত অর্থ নিয়ে তাদের সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছে ।
কাঁথার কারিগররা ৪-৫ জনের একটি দলে বিভক্ত হয়ে বাড়ির কুঠিরে ১ সপ্তাহে একটি নকশি কাঁথা সম্পূণরুপে তৈরির্ করে । নকশি কাথাঁ সেলাইয়ের জন্য বিভিন্ন রঙের রঙিন সূতা ব্যবহার করা হয় । প্রতিটি কাঁথায় সূচ-সূতার সুন্দর বুননের মধ্যে ফুটে ওঠে ফুল-পাতা ,লতা গাছ ,চাঁদ-তারা ,পশু-পাখির সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের আল্পনার বাহারী কাজ । এই কাঁথা বিক্রির জন্য কাঁথা কারিগরদের বাইরে যেতে হয় না
কাঁথার কারিগর নুরজাহান জানান , তিনি দুই বছর যাবৎ আমি এই নকশি কাঁথা শিল্পের সাথে জড়িত । নকশি কাঁথাথেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে তিনি ঘর-সংসার চালাচ্ছেন । তাছাড়া এ অর্থ দিয়ে তিনি ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচও বহন করছেন ।
কাঁথা তৈরির সাথে জড়িত জোৎসা বেগমসহ শাহিদা জানান , ঘর-সংসারের কাজ সামলিয়ে অবসর সময়ে আমরা নকশি কাঁথাসেলাই করছি । কাঁথা তৈরির বিভিন্ন উপকরণ ও অন্যান্য জিনিস ব্র্যাকের আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন সরবরাহ করে থাকে । । কাঁথা প্রস্তুত হবার পর তা বিক্রির জন্য আমাদের বাইরে যেতে হয় না । ফাউন্ডেশনই নগদ অর্থ দিয়ে আমাদের কাছ থেকে ক্রয় করে নিয়ে যায় । কাঁথা প্রতি আমরা ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে ৪ হাজার ৫ শত টাকা করে পেয়ে থাকি । উক্ত টাকা পাওয়ার পর আমরা ভাগ করে নিয় । অর্থের উর্পাজন ভাল থাকায় বর্তমানে আমাদের পাশাপাশি এই গ্রামের অনেক নারীরা এই পেশাকে বেছে নিয়েছে ।
ব্র্যাকের কর্মকর্তা নুর কামাল জানান , এই পেশা গ্রামে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে । গ্রামীণ নারীদের স্বাবলম্বী করতে ব্র্যাক নানামুখি কাজ করছে । তার মধ্যে নকশি কাঁথা তৈরির কাজ ব্র্যাক ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় করছে । গ্রামীণ নারীদের নিপুন হাতে তৈরি এই নকশি কাঁথা আমরা গ্রাম থেকে ক্রয় করে ঢাকার অভিজাত দোকান আড়ং সহ বিভিন্ন আধুনিক শপিং মলের দোকানের মালিকদের নিকট বিক্রি করি । বর্তমানে এটি চাহিদা বেড়েছে । আমরা ঢাকার পাশাপাশি বাইরের জেলা গুলোতে নকশি কাঁথা বিক্রির কাজ শুরু করেছি ।
মাগুরা জেলা ব্র্যাক প্রতিনিধি রোকেয়া বেগম জানান , ব্র্যাক যেসব সৃজনশীল কাজ করে তার মধ্যে নকশি কাঁথা সেলাই অন্যতম । গ্রামীণ নারীরা অনেক পরিশ্রম করে এই নকশি কাথাঁ সেলাই করেন । এরা সবাই আমাদের ব্র্রাকের পল্লী সমাজের সদস্য । মাগুরার রায় গ্রামের অনেক নারী এ পেশাকে বেছে নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে । আমরা আশা করি ভবিষতে আরো নারীরা এ পেশায় এগিয়ে আসবে ।