মঙ্গলবার ● ২১ মার্চ ২০১৭
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » দেশের সার্বিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিন -প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
দেশের সার্বিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিন -প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
এস আলম তুহিন, মাগুরা ঃ
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের সার্বিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিন। তিনি গতকাল মঙ্গলবার মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজাজামান স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত জনসভায় তিনি আরো বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে দুর্নীতি,সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটে, পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, ১৯৯৪ সালের মাগুরা-২ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট চুরির কারণে জনগণ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করেছিল। সুতরাং আগামী নির্বাচনে এই ভোট চোরদেরকে আপনারা সমর্থন দেবেন না। বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তারা যে শুধু ক্ষমতায় থাকলেই সন্ত্রাস করে তাই নয়, বিরোধী দলে থেকেও তারা দেশে জালাও পোড়াও এর মাধ্যমে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন ঠেকাতে তারা আন্দোলনের নামে পেট্রোল বোমা হামলার মাধ্যমে সারা দেশে ১৩১ জন মানুষকে হত্যা করেছে। শুধু তাই নয় এই নির্বাচন ঠেকাতে তারা দেশের ৫৮২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তাদের হাতে পবিত্র কোরআন শরীফও নিরাপদ নয়। বিগত সময় আন্দোলনের নামে বায়তুল মোকাররম মসজিদে হামলাসহ কোরআন শরীফে আগুন দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের প্রতিটি তিনি ভালোবাসতেন। এই বাংলার দুখি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য আমার বাবা, মা, ভাইসহ অত্মীয় স্বজনদের হত্যা করে আমাকে এতিম করে দিয়েছে।
আমাকেও গ্রেনেড হামলাসহ বারবার হামলার মাধ্যমে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমি ভয় পাইনি। আমিও আমার বাবার আদর্শকে বুকে ধারণ করে বাংলার মানুষকে ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত করতে আমার জীবনকে উৎসর্গ করেছি। দেশের জনগণের জন্য আমি যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত।
আওয়ামীলীগ শাসনামলে দেশের উন্নয়নে চিত্র তুলে ধরে আওয়ামীলী সভানেত্রী বলেন, দেশের জনগণ আজ ১০ টাকা কেজি চাল কিনতে পারছে। মানুষের চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌছে দেয়ার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছিল। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে সেগুলো বন্ধ করে দিলেও বর্তমান সরকার সেগুলো চালু করেছে। সেখানে সাধারণ মানুষ ৩০ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে পাচ্ছে। বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় বিনা জামানতে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলাকে ভিক্ষুক মুক্ত করার কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। দেশের শিক্ষা বিস্তারে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদেরকে শিক্ষিত করে তুলতে মায়ের হাসি প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ৩০ লাখ শিশুকে উপ-বৃত্তি দেয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। শিশুদের উপবৃত্তির এই টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিটি শিশুর মায়ের কাছে পৌছে যাবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তানজেল হোসেন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বিশাল জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিল্প মন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পিযুষ কান্তি, আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি ও আব্দুর রহমান এমপি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মামুন এমপি, পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বিরেন শিদার এমপি, মাগুরা-১ আসনের এমপি মেজর জেনারেল (অবঃ) এটিএম আব্দুল ওয়াহ্হাব, প্রধানমন্ত্রীর সহকারি একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখর, মাগুরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পঙ্কজ কুন্ডু এবং মাগুরা পৌরসভার মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুল।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাগুরা বীরমুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানিকভাবে কয়েকটি ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানিকভাবে ১৫০ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যায়ে সম্পন্ন হওয়া ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ১৭৭ কোটি ব্যয়ে গৃহিত ৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
উদ্বোধনকৃত ১৯টি উন্নয়ন প্রকল্পসমুহ হচ্ছে ১৫০ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যায়ে সম্পন্ন হওয়া মাগুরা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মুক্তিযোদ্ধ কমপ্লেক্স ভবন, মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, শ্রীপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, মহাম্ম্দপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, সদর উপজেলার মঘি ইউপি অফিস হতে আন্দোলবাড়িয়া সড়কে ফটকি নদীর উপর ১০০.১০ মিটার ব্রীজ নির্মান, সদর উপজেলার কাটাখালী জিসি-ইছাখাদা আর এন্ড এইচ পর্যন্ত প্রায় ৯.৭১ কিলোমিটার সড়ক, ৩০.৫০ মিটার নতুন বাজার সেতু, ৩৫০ ঘনমিটার প্রতি ঘন্টা ক্ষমতা সম্পন্ন ভূগর্ভস্থ পানি শোধনাগার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়াম, সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রশাসনিক ভবন, সদর উপজেলার বেলনগর এলাকায় হেচারীসহ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার(তৃতীয় পর্যায়), আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণ ভবন ও অতিথিশালা, মাগুরা জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়, ৫০ শয্যার শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন, শালিখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ উদ্বোধন করেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনায় মাগুরা টেক্সটাইল মিল পুনঃ উৎপাদন কার্যক্রম, শালিখা উপজেলার আড়পাড়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং মাগুরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
একই সাথে তিনি ১৭৭ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে যে ৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সেগুলো হচ্ছেঃ মাগুরা আঞ্চলিক পার্সপোর্ট অফিস ভবন, শালিখা উপজেলাধীন বুনাগাতি হতে বৈরইল পলিতা সড়কে নালিয়া ঘাটে ফটকি নদীর উপর ৯৬ মিটার ব্রীজ নির্মাণ, শালিখা উপজেলাধীন বরইচারা আটিরভিটা-বরইচারা বাজার সড়কে ফটকি নদীর উপর ৬৬ মিটার ব্রীজ নির্মাণ, শালিখা উপজেলার বাউলিয়া-শরশুনা সড়কে চিত্রা নদীর উপর ৯৬ মিটার ব্রীজ নির্মাণ, জাতীয় মহাসড়কের (এন-৭) মাগুরা শহর অংশ ৪ লেনে উন্নিতকরণ, মাগুরা পৌরসভার তৃতীয় নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়), মাগুরা-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে পাঁচ একর জায়গার উপর শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিইবেশন সেন্টার, শ্রীপুর উপজেলা মিনি স্টেডিয়াম এবং শালিখা উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম।