বুধবার ● ১২ এপ্রিল ২০১৭
প্রথম পাতা » সাহিত্য » পহেলা বৈশাখ পালন ও পান্তা ইলিশ সংস্কৃতি
পহেলা বৈশাখ পালন ও পান্তা ইলিশ সংস্কৃতি
সেলিনা আখতার
বেশ অনেক বছর হলো আমরা পান্তা ইলিশ দিয়ে পহেলা বৈশাখ পালন করি। কিন্তু পান্তা ইলিশ কি আদৌ আমাদের বাংঙ্গালীর পহেলা বৈশাখে পালিত সংস্কৃতির কোনো অংশ? মোটেই নয়। ইলিশ আমাদের বৈশাখী মাছ নয়। বৈশাখে ইলিশ সহজলভ্য নয়। আর পান্তা কোন আর্থিক ভাবে সচ্ছল পরিবারের খাদ্য হিসেবে কখনোই আমাদের দেশে গ্রহণ যোগ্যতা পায়নি বা আদরনীয় ছিলোনা। নিতান্তই গরীব কৃষকের সকাল বেলায় মাঠে যাওয়ার আগের খাবার এই পান্তা। আমাদের শহুরে সন্তানেরা হয়তো বিষয়টি জানেইনা। তারা পান্তা ইলিশ বৈশাখের প্রথম দিনে খেয়ে নিজেদের বাঙ্গালীত্ব প্রকাশ করে, যা এক অর্থে দরিদ্র কৃষকের দারিদ্র্যকে উপহাস করা হয়। বৈশাখে কখনোই দরিদ্র কৃষকের পান্তার সাথে এক টুকরো পেঁয়াজ আর মরিচের অতিরিক্ত জোটেনি।
তাই এ কথা সত্য যে, এক সময় পান্তা আমাদের দরিদ্র কৃষকের খাদ্য ছিলো। অসহায় কৃষক এক টুকরা পেঁয়াজ আর কাঁচা মরিচ দিয়ে সকালের নাস্তা করেছে। তার মানে এই নয় যে সকল বাঙ্গালী একযোগে পান্তা খেয়েছে। এই দিনে খাওয়ার জন্য আমাদের.আরো অনেক খাবার আছে যা আমরা এখনো খেয়ে থাকি। আর ইলিশ মাছ চিরদিনই দরিদ্র কৃষকের অধরা। পহেলা বৈশাখের সকাল বেলায় নানা পদের ভরতা সরিষার তেলে, অথবা একটুখানি ঘি দিয়ে, গরম. ভাত — এটাও বাঙ্গালীর ঐতিহ্য। আরো আছে - মুগ, মসুর, ছোলা, মাসকলাই, মটর এই পাঁচ রকমের ডাল মিশিয়ে রান্না করা খিচুড়ির সাথে বেগুন ভাজি, ডিম ভাজির সাথে কালো জিরা, সরিষার আর পাঁচ রকমের ভরতা দিয়ে খেয়ে দেখুন অনেক অনেক ভালো লাগবে। আমি কথা দিলাম এই খাবার আপনাদের অবশ্যই ভালো লাগবে।
সব শেষে বলব আমাদের ঐতিহ্যের কথা ভুলে যেয়ে কে যে শেখাল পান্তা ইলিশ খাওয়া?
বন্ধ হোক পান্তা ইলিশের রসিকতা!!