রবিবার ● ২৩ এপ্রিল ২০১৭
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » ধরিত্রী সুরক্ষায় পরিবেশ সচেতনতা দরকার
ধরিত্রী সুরক্ষায় পরিবেশ সচেতনতা দরকার
প্রকাশ ঘোষ বিধান
বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলাবায়ূ পরিবর্তনের সার্বিক চিত্র বিশ্বব্যাপী এ সময়ে সব চেয়ে উদ্যোগের বিষয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সাথে আবহাওয়া ও জলবায়ুর নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। পৃথিবীর উষ্ণতা মুলত দুটি কারণে বৃদ্ধি পেতে পারে, প্রাকৃতিক কারণ ও মনুষ্য জনিত কারণ। প্রাকৃতিক কারনের মধ্যে জৈব প্রক্রিয়া সমূহ পৃথিবীর অক্ষ রেখার পরিবর্তন, সূর্য্য রশ্মির পরিবর্তন আগ্নেয়গীরির অগ্নুৎপাত মুলত দায়ী। মনুষ্যজনিত কারণে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণকে গ্যাস নিঃস্বরনের পরিমাণ বৃদ্ধিকে বর্তমান কালের উষ্ণতা বৃদ্ধির মুল কারণ হিসাবে বিজ্ঞানীরা অবিহিত করেছেন।
বিশ্বের প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে ২২ এপ্রিল বিশ্ব ধরিত্রী দিবস পালিত হলো। বিশ্বের প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনার ও ভালবাসার সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ধরিত্রী দিবস পালিত হয়। ১৯৭০ সালের ২২ এপ্রিল মার্কিন সিনেটর গেলর্ড নেলসন ধরিত্রী দিবসের প্রচলন করেন। ১৯৯০ সাল থেকে আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্ব ধরিত্রী দিবস পালিত হচ্ছে। সিনেটর গেলর্ড নেলসন ১৯৭০ সালে যে পরিবেশ আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন তার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘এনভায়রণমেন্টল টিচ ইন’ পৃথিবীর অনেক দেশ সরকারিভাবে এই দিবসটি পালন করে। উত্তর গোলার্ধের দেশগুলো বসন্তকালে আর দক্ষিন গোলার্ধের দেশগুলোতে শরতে ধরিত্রী দিবস পালিত হয়। পৃথিবীর পরিবেশ দিন দিন দূষিত হয়ে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আর এর জন্য মূলত মানুষই দায়ী।
১৮০০ সালের আগে থেকে ইউরোপের পুঁজিপতিরা কলকারখানা গড়ে তুলতে থাকে। এরপর বিশ্বজুড়ে কলকারখানার বিস্তার লাভ করে। দ্রুত ও যথেচ্ছার শিল্পায়ন করতে গিয়ে বনাঞ্চল ধংস ও অপরিকল্পিত নগরায়নের হিড়িক পড়ে। কলকারখানায় ব্যবহৃত তেল, গ্যাস, কাঠ, কয়লা, কৃষিকাজে মাত্রারিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার ও জীবাশ্ন জ্বালানী পোড়ানোর ফলে কার্বনডাই-অক্সাইড সহ অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাস বায়মন্ডলে নির্গত হচ্ছে। এতে মাটি পানি ও বাতাস দুষিত হচ্ছে। জরসংখ্যার বিস্ফোরণ মাত্রারিক্ত দূষন প্রকৃতির নির্দিষ্ট সহ্যক্ষমতা ছাড়িয়ে গিয়েছে। মানুষের অপরিনামদর্শি কর্মকান্ডে প্রকৃতি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। আর আমাদের সবুজ ধরিত্রীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে মাত্রারিক্ত কার্বনডাই-অক্সাইডসহ অন্যান্য গ্যাস নির্গমনের কারনে দ্রুত বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঘটেছে। কার্বডাই-অক্সাইড ছাড়া আরও যেসব গ্যাস বায়ু মন্ডলের উষ্ণায়তা বাড়ানোর জন্য দায়ী সেগুলো হলো- হাড্রোকার্বন, কার্বন মনোঅক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড, মিথেন, সিএফসির হ্যলন, ক্লোরোফার্ম, মিথাইন ইত্যাদি। বায়ুমন্ডল থেকে কার্বনডই অক্সাইড সহ যাবতীয় গ্যাস শুষে নিয়ে বাতাসকে দূষণ মুক্ত রাখে বৃক্ষ। কিন্তু মানুষ নির্বিচারে পৃথিবী থেকে বৃক্ষ ধ্বংস করে ফেলছে। এর ফলে পৃথিবী থেকে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর মানুষের হাতে পৃথিবী থেকে ৪১ লাখ হেক্টর বনাঞ্চল ধংস হয়ে যাচ্ছে। বৃক্ষ কমে যাওয়ায় বায়ুমন্ডলের স্বাভাবিক মাত্রা কমে যাচ্ছে। আর বায়ুমন্ডলে কার্বনডাই অক্সাইড সহ যাবতীয় বিষাক্ত গ্যাস ও মনুষ্য সৃষ্ট সিএফসি গ্যাস বায়মন্ডলে অব্যহতভাবে বেড়ে যাওয়ায় বৈষ্ণিক উষ্ণতা পরিবেশকে বিপর্যস্থ করে ফেলেছে। বৈষ্ণিক উষ্ণায়নের বিরুপ প্রভাবে মেরুঅঞ্চল সহ হীমবাহ দ্রুত গলে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের আশংকা, এভাবে বরফ গলা অব্যহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের অনেক উপকূলীয় নিুভূমি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। বিশ্বের ২২ শতাংশ পরিবেশ উদ্বাস্তু হবে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারনে জলবায়ু পরিবর্তনে বিরুপ প্রভাবে পৃথিবী থেকে বহু প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে ও যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত পরিবেশ বিপর্যের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর ৭০ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে এশিয়ায় ১০ লাখ মানুষ মারা যায়। মানুষের প্রকৃতি বিরোধী কর্মকান্ডে বৈষ্ণিক উষ্ণায়ন হচ্ছে। মাত্রাতিক্ত দূষন প্রকৃতির নিদিষ্ট সহ্যক্ষমতা ছাড়িয়ে ধরিত্রী বিষাক্ত গ্যাসে ভরে গেছে। এখানে মানুষ সহ সকল প্রাণীর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
গ্রীনহাউজ গ্যাস নিঃসরণে বৈষ্ণিক উষ্ণায়ন সৃষ্টির মূল কারন। আর শিল্পোন্নত দেশগুলি এ জন্যে দায়ী। জাতিসঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৯০ সালে ইন্টারগভারমেন্টাল নেগোসিয়েটিং গঠন করে (আইএনসি)। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিওডি জেনিরোতে ধরিত্রী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আইএনসি, ক্লাইমেন্ট চেঞ্জ এর খসড়া প্রনণয়ন ধরিত্রী সম্মানে গৃহিত হয়। এ সম্মেলনে গ্রীনহাইজ গ্যাস নিঃসরণের জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলিকে দায়ী করা হয়। গ্রীনহাউজ গ্যাসে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে তাদের এগিয়ে আসার কথা গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করা হয়। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে গ্রীনহাউজ গ্যাসের সিংহভাগই আসে উন্নত দেশ সমূহ থেকে। ধনী দেশের গ্যাস নির্গমণ জনিত কারনে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলির ক্ষতি কাটিয়ে উঠার ব্যয় উন্নত দেশগুলির বহন করা উচিত। প্রকৃতি বিরোধী অব্যহত আতœঘাতি তৎপরাতা বন্ধ করা না গেলে প্রাণীকুলসহ ধরিত্রী ধংস হয়ে যাবে। বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এই ধরিত্রীকে বাসযোগ্য করে রাখতে হবে। কোন দেশের কর্মকান্ডে যাতে অন্য দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি না হয় তাহা লক্ষ রাখার দায়িত্ব সে দেশের। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে দেশ বাঁচাতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে জোটবদ্ধ আন্দোন গড়ে তোলা দরকার। আর এ ব্যাপারে দেশের সকল নাগরিককে সচেতন করে তুলতে হবে।
লেখকঃ সাংবাদিক