শিরোনাম:
পাইকগাছা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
মঙ্গলবার ● ২০ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » পরিবেশ » নড়াইলে ঈদযাত্রা বিপদজনক! সড়ক-মহাসড়কে অসংখ্য খানাখন্দক ও কাঁদার স্তূপ অবৈধ দখল করে ইট, বালি, বাঁশ ও গাছের গুড়ি রাখায় ঈদে যানজটের আশংকা একদিনের বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমে সপ্তাহজুড়ে, মরণফাঁদ ইটভাটার মাটি
প্রথম পাতা » পরিবেশ » নড়াইলে ঈদযাত্রা বিপদজনক! সড়ক-মহাসড়কে অসংখ্য খানাখন্দক ও কাঁদার স্তূপ অবৈধ দখল করে ইট, বালি, বাঁশ ও গাছের গুড়ি রাখায় ঈদে যানজটের আশংকা একদিনের বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমে সপ্তাহজুড়ে, মরণফাঁদ ইটভাটার মাটি
৫৬৩ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ২০ জুন ২০১৭
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

নড়াইলে ঈদযাত্রা বিপদজনক! সড়ক-মহাসড়কে অসংখ্য খানাখন্দক ও কাঁদার স্তূপ অবৈধ দখল করে ইট, বালি, বাঁশ ও গাছের গুড়ি রাখায় ঈদে যানজটের আশংকা একদিনের বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমে সপ্তাহজুড়ে, মরণফাঁদ ইটভাটার মাটি

---

ফরহাদ খান নড়াইল

নড়াইলের বেশির ভাগ সড়ক-মহাসড়ক ভেঙ্গে খানাখন্দকে পরিণত হয়েছে। শুধু পিচ নয়; অনেক সড়কে পাথর, খোয়া ও বালি পর্যন্ত উঠে গেছে। এসব ভাঙ্গাচেরা সড়কে বর্ষার পানি জমে একেবারে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কে বড় বড় গর্তের কারণে একদিন বৃষ্টি হলে প্রায় এক সপ্তাহ পানি জমে থাকে। এ কারণে সড়কগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া বেশির ভাগ সড়কের পাশে প্রয়োজনীয় জায়গা এবং মাটি না থাকায় দুর্ঘটনার শংকা বেড়ে গেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সড়কে ইট, বালি, বাঁশ, গাছের গুড়িসহ নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখায় যানবাহন চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। সবমিলে নড়াইলের সড়ক-মহাসড়কের বেহাল অবস্থায় ঈদে ঘরমুখো মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন যানবাহনের চালকসহ ভূক্তভোগীরা।

এদিকে, গ্রামীণ সড়কগুলোর অবস্থা বেশি খারাপ বলে জানা গেছে। এছাড়া সড়ক-মহাসড়কের গা ঘেষে গড়ে ওঠা ইট ভাটাগুলো আরো বিপদজনক হয়ে দেখা দিয়েছে। ভাটার কাঁদামাটি বৃষ্টিতে ধুয়ে প্রতিনিয়ত পড়ছে সড়ক-মহাসড়কের ওপরে। এতে যানবাহন চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন চালকেরা। এমনকি পায়ে হেঁটে চলাচল করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এ বছর ঈদুল ফিতর বর্ষাকালে হওয়ায় ইটভাটার কাঁদামাটিতে সড়কে দুর্ঘটনার আশংকা দেখা দিয়েছে। ভাটার কাঁদামাটিমাখা সড়ক-মহাসড়কগুলো দেখে হঠাৎ করে বোঝার উপায় নেই সড়কটি পাঁকা না কাঁচা ! তাই ভূক্তভোগীদের মন্তব্য-সড়কের পাশে ইটভাটার মাটি মানে বিপদজনক মাটি, মরণফাঁদের মাটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নড়াইলে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীনে ১৭০ দশমিক এক কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের (এলজিআই) আওতায় দুই হাজার ৯৫২ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা রয়েছে। এর মধ্যে এলজিইডির ৪৫২ কিলোমিটার এবং এলজিআই’র দুই হাজার ৫০০ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এলজিআই হচ্ছে-ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ। সেক্ষেত্রে এলজিআই’র রাস্তাগুলোর অবস্থা সবচেয়ে করুণ।

লোহাগড়া উপজেলার রাজপুরের বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক বেলাল সানি জানান, নাড়ির টানে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর থেকে লোকজন গ্রামের বাড়ি নড়াইলে আসতে শুরু করেছেন। দু’তিন দিনের মধ্যে এ সংখ্যা আরো বাড়বে। এক্ষেত্রে গ্রামীণ রাস্তাগুলো বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু, বেশির ভাগ রাস্তায় পিচ ও খোয়া উঠে চলাচল অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। ছোট-বড় গর্তে পানি জমে আছে। ঈদযাত্রায় মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। কালিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নড়াইল-গোবরা-ফুলতলা সড়কের অবস্থা খুবই করুণ। এই সড়কের বিড়গ্রাম বটতলা, গোবরা কলেজ ও বাজার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গেচুরে খান খান হয়ে গেছে। প্রায় চার বছর ধরে এ অবস্থা বিরাজমান। একদিন বৃষ্টি হলে এই সড়কের ভাঙ্গাচেরা অংশে সপ্তাহখানেক পানি জমে থাকে। কী যে দুর্ভোগ। গোবরা মিত্র মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক পিয়ূষ কান্তি রায় বলেন, রাস্তার এ সমস্যা দীর্ঘদিনের; কিন্তু সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। যাতায়াতে খুব কষ্ট পোহাতে হয়। ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে সড়কের এই ভোগান্তি আরো বেড়ে যায়। রূপগঞ্জ বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী মনসুর মোড়ল ও লোহাগড়ার ইমরুল হাসান জানান, ভাটিয়াপাড়া-গোপালগঞ্জ-কালনা-লোহাগড়া-নড়াইল-যশোর জাতীয় মহাসড়কটি মাঝে-মধ্যে একটু-আধটু সংস্কার করলেও বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে গর্তের সৃষ্টিতে হয়েছে। সড়কটির দুই পাশে নিচু থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। মোটরসাইকেলসহ ছোট যানবাহন চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়ে। পানি আর কাঁদায় একাকার হয়ে যায়। নড়াইলের মনিকা একাডেমির পরিচালক এম সবুজ সুলতান বলেন, জেলার অধিকাংশ সড়ক ভেঙ্গেচুরে যেমন চলাচল অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে; তেমনি অবৈধ দখলে আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নড়াইল-মাগুরা-মাইজপাড়া সড়কের প্রবেশমুখে এলজিইডি ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের মাঝামাঝি সড়কের ওপর দীর্ঘদিন ধরে ইট ও বালি কে বা কারা ফেলে রেখেছেন। এ কারণে চরম ঝুঁকি নিয়ে পথচারী এবং যাত্রীসাধারণ যাতায়াত করছেন। তবুও প্রতিবন্ধকতা অপসারণে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা  নিচ্ছে না। বাসচালক মুরাদ হোসেনসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকেরা জানান, ভাটিয়াপাড়া-কালনা-লোহাগড়া-নড়াইল সড়কের এড়েন্দা, চৌগাছা ও মাদরাসা বাসস্ট্যান্ড এবং লক্ষèীপাশা মোল্যার মাঠ এলাকায় বড় বড় গাছের গুড়ি ফেলে রাখা হয়েছে। এ কারণে রাস্তা সরু হয়ে গেছে। এছাড়া সড়কের ওপর ট্রাক দাঁড় করিয়ে প্রায় দিনই ঘণ্টার পর ঘন্টা গাছের গুড়ি উঠানো হয়। এতে যানবাহনে চলাচলে বিরাট সমস্যা হচ্ছে। সড়কে এ অবস্থার মধ্যে ঈদযাত্রায় যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

বাস, ট্রাক, কার ও মাইক্রোবাসের কয়েকজন চালক জানান, নড়াইল-কালনা-ঢাকা, নড়াইল-যশোর, নড়াইল-মাগুরা, লোহাগড়া-নহাটা-কালিশংকরপুর-মহম্মদপুর, নড়াইল-গোবরা-ফুলতলা, নড়াইল-কালিয়া, লোহাগড়া-নড়াগাতি, নড়াইল-তুলারামপুর-মাইজপাড়া, তেরখাদা-বড়নাল-কালিয়া সড়কের পাশে প্রয়োজনীয় মাটি এবং জায়গা না থাকায় দু’টি যানবাহন পাশ কাটতে গেলে খাদে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। গত ১২ জানুয়ারি নড়াইল-মাগুরা সড়কের ধোন্দা এলাকায় যাত্রীবাহী বাস গর্তে পড়ে দুই যাত্রী নিহত এবং অন্তত ৩০ জন আহত হন। বেসরকারি সংস্থার মাঠকর্মী ফজলে রাব্বী বলেন, নড়াইল-গোবরা সড়কের কাড়ারবিল এলাকায় বিপদজনক অবস্থায় একটি মরা গাছ দীর্ঘদিন ধরে সড়কের পাশে পড়ে থাকলেও কর্তৃপক্ষ উদাসীন রয়েছে। এদিকে, জেলা শহরের রূপগঞ্জ মুচিপোল সংযোগ সড়ক এলাকা থেকে ভওয়াখালী যাওয়ার রাস্তাটি দীর্ঘ নয়মাস পানিতে ডুবে আছে বলে জানিয়েছেন ওই সড়কের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাসান। এছাড়া লোহাগড়া ফয়েজ মোড় এবং বাজার সড়কগুলোতে পানি ও কাঁদা জমে থাকায় ঈদ বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আর সামান্য বৃষ্টি হলেই নড়াইল পুরাতন বাসটার্মিনাল এলাকায় পানি জমে যাচ্ছে। এতে শহরবাসী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) জেলা সভাপতি সৈয়দ খায়রুল আলম জানান, নড়াইল-কালনা মহাসড়কের গা ঘেঁষে পাঁচটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এছাড়া লোহাগড়ার এড়েন্দা-আমাদা-লুটিয়া সড়কে দু’টি এবং নড়াইল-কালিয়া সড়কের আউড়িয়ায় একটি ইটভাটা সড়কের গা ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। এসব ভাটার মাটি পাহাড়ের মতো স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বৃষ্টিতে ভাটার কাঁদামাটি সড়ক-মহাসড়কের ওপর পড়ে চলাচল অনুপোযোগী হয়ে গেছে। মোটরসাইকেলসহ দুই এবং তিন চাকার গাড়িগুলো ভাটার কাছে প্রায়ই দুর্ঘটনায় পতিত হয়। দুই বছরের ব্যবধানে ভাটা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক শিশুসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। নড়াইল জেলা বাস-মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্মসম্পাদক ছাদেক আহম্মেদ খান বলেন, নড়াইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১৭০ কিলোমিটার পাঁকা রাস্তার মধ্যে ৭৫ ভাগ সড়কের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। একেবারেই চলাচল অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি হবে। এ ব্যাপারে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আবু ছায়েদ বলেন, বরাদ্দ পেলে পর্যায়ক্রমে সড়কগুলো সংস্কার করা হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী তাপসী দাশ দাবি করে বলেন, জেলার সড়ক-মহাসড়কগুলোর অবস্থা ভালো। তেমন কোনো সমস্যা নেই।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)