মঙ্গলবার ● ২০ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » বাবা দিবসের ভাবনা
বাবা দিবসের ভাবনা
প্রকাশ ঘোষ বিধান
বাবা ছোট একটি শব্দ। কিন্তু তার শক্তি অপরিসীম। সন্তানের কাছে বাবা হলেন সব চেয়ে বড় শক্তি। উত্তপ্ত রৌদে মাথার উপর একটি ছাতা। যেন বট বৃক্ষের ছায়া। সন্তানের কাছে বাবা এবটি নিরাপদ আশ্রায়, ভাবনাহিন দুনিয়া। বাবা সন্তানের কাজে বন্ধুর মতো, আবার বাবা পথপ্রদর্শক। জুন মাসের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস। বাবার প্রতি শ্রদ্ধা-ভালবাসা ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও বাবা দিবস পালিত হচ্ছে।
ভাষাভেদে বাবা বলার উচ্চারণ বদলায়। তবে বদলায় না বাবা সন্তানের সম্পর্ক। রক্তের টান কোন কিছুতেই বদলায় না। বাবার প্রতি সন্তানের ভালবাসা প্রতিদিন প্রকাশ ঘটে। এরজন্য আলাদা দিন, ঘন্টা, সময় লাগে না। তারপরও পৃথিবীর মানুষ বাবার জন্য একটি দিন উৎস্বর্গ করতে চায়। এর প্রেক্ষাপটে বাবা দিবসের প্রচলন ঘটেছে। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে বাবা দিবসের প্রচলন শুরু হয়। ইতিহাস থেকে জানাযায়, ১৯০৮ সালে প্রথম বাবা দিবস উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যুক্ত রাষ্ট্রের ওয়েষ্ট ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টে ৫ জুলাই এই দিবস পালন করা হয়। মিসেস গ্রেস গোল্ডেন ক্লেটনের উদ্যোগেই মা দিবসের আদলে দিবসটি পালিত হয়। ১৯০৭ সালের একটি সড়ক দূঘটনায় প্রায় হারান ১১০ জন বাবার স্মৃতির উদ্যোগে সে বারের দিবস। তবে তা নিয়মিত হয়নি। তার দুই বছর পর ১৯১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনোরা স্মার্ট ডট নতুন পরিসরে বাবা দিবস পালন করে। সেনোরাকেই বাবা দিবসের উদ্যোক্তা মনে করা হয়। ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিণ্ডন বি জনসন জুন মাসের তৃতীয় রোববারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসাবে নির্ধারণ করেন। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রতিবছর জাতীয়ভাবে বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন।
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে জুন মাসের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস পালিত হয়। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে দিবসটি পালিত হয়। কোন কোন দেশে ছেলে মেয়েরা বাবাকে কার্ড, ফুল ও নতুন পোশাক দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। আবার কোথাও বাবাকে ছেলে-মেয়েরা বেড়াতে নিয়ে যায়, আবার কোন কোন ছেলে-মেয়েরা হোটেল বা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বাবার সঙ্গে প্রিয় খাবারটি আহার করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ব বাবা দিবসে বাবাকে নিয়ে ছবি ও পোষ্ট দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে বিশ্ব বাবা দিবস উপলক্ষে পত্রিকায় বাবাকে নিয়ে লেখা, স্মৃতিচারণ ও বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। বাবা এক দায়িত্বশীল অভিভাবক। বাবার ছায়ায় সন্তানের পথ চলা। বাবাই পরিবারের ক্ষমতাধর ব্যক্তি। সন্তানের কাছে সকল অনুপ্রেরণা উৎস্য হলো বাবা। বাবা নামটির মাঝে জড়িয়ে আছে øেহ আর মমতার এক অদ্ভুত মায়াবী বিশলত্ব। বাবা তার সন্তানের রক্তের বন্ধনে বাঁধা সম্পর্ক। সে সম্পর্ক ভালবাসা আর শ্রদ্ধায় আবদ্ধ। বাবায় সন্তানের বড় বন্ধু। বাবা সন্তানকে নিরাপদ বলয়ে রেখে তিল তিল করে গড়ে তোলেন।
বর্তমান সময়ে নাগরিক জীবনে ব্যস্ততা বেড়ে চলেছে। পেশাগত কাজে মা-বাবাকে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। এমন পরিবারের সন্তানেরা মা-বাবাকে কাছে খুব কম পায়। অনেক মা-বাবা কাজের চাপে সন্তানের ঠিকমত খোঁজ খবর নিতে পারে না। এতে করে সন্তানের সাথে মা-বাবার দূরত্ব বাড়তে থাকে। এর ফলে অনেক সন্তান হচ্ছে বিপদগামী। সন্তান সঠিক পথে না চলে ধ্বংসের পথে ধাবিত হচ্ছে। তাই শত ব্যস্ততার মাঝে বাবাকে সন্তানের জন্য সময় দিতে হবে। আদর্শ বাবা হিসাবে সন্তানের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে।
বাবার জন্য সন্তানের সীমাহীন ভালবাসা। এ ভালবাসা কোন সীমানা বলায় দিয়ে আবদ্ধ করা যায় না। বাবার জন্য ভালবাসা প্রতিমূহুর্তের। এর কোন নির্দিষ্ট দিন লাগে না। তবেও বাবার জন্য একটি দিন উৎস্বর্গ করা সন্তানের কাছে বড় অনুপ্রেরণার। বিশ্বের সকল বাবাকে নিয়ে সন্তানেরা উৎসব আর ভালবাসায় দিন কাটাবে। এ দিনটি সন্তানকে তার বাবার প্রতি দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কর্মজীবনে ছোট ছোট কাজে বাবা সন্তানের সাহায্য চায়। সন্তানের সহযোগিতায় বাবার অনুভূতিতে বুক ভরে যায়। পুত্রে মাঝে বাবা তার ছায়া খুজে পায়। কর্মময় জীবনে বাবা বয়সের ভারে একসময় দূর্বল ও অসহায় বোধ করেন। এ সময় বাবা তার সন্তানকে কাছে পেতে চান। এ সময় বৃদ্ধ বাবাকে বেশী বেশী সময় দিতে হবে সন্তানকে। কিন্তু সময়ের প্রেক্ষাপটে বৃদ্ধ মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর প্রবণতা বেড়ে গেছে। শেষ জীবনে বৃদ্ধ মা-বাবা যেন সন্তানের কাছে থাকতে পারে এর জন্য দৃঢ় মানসিকতা সন্তানকে গড়ে তুলতে হবে। সন্তানের কর্মজীবনে চলার পথে বাবার স্মৃতি অনুভূত হোক শ্রদ্ধা ও ভালবাসায়।
লেখক ঃ সাংবাদিক