রবিবার ● ২৫ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » সংস্কৃতি ও বিনোদন » যেখানে সেখানে জীবন দেবেন না প্লিজ …..
যেখানে সেখানে জীবন দেবেন না প্লিজ …..
পলাশ আহসান, নিউজ এডিটর, একাত্তর টেলিভিশন।
পত্রিকায় দেখলাম জনৈক সিনেমা অভিনেতা হুংকার দিচ্ছেন , জীবন দিয়ে হলেও যৌথ প্রযোজনার ছবি বন্ধ করবেন। কেউ কেউ বলছেন যৌথ প্রযোজনার ছবি প্রতারণা। এত হাস্যকর মনে হচ্ছে বিষয়টি… বন্ধুদের সঙ্গে দু’কথা না বলে পারছি না। কারণ এই এরাই আমাদের সিনেমা শিল্পটাকে নষ্ট করেছে। প্রতরাণা অবশ্য একটা আছে, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কে করছে প্রতারণা ….
একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। না হওয়ার কোন কারণ নেই । কারণ এদের সিনেমা সবার মুখস্ত । সেই যে একটা ডুপলেক্স ড্রয়িংরুমে সিনেমা শুরু হবে আর শেষ হবে গুদাম ঘরে। পাত্র পাত্রীদের আচরণও সবার মুখস্ত । এমনকী ডায়ালগগুলোও । প্রতিটি গল্পই এক রকম। পাত্র পাত্রীরা এমন সব কাপড় পরবে যা পৃথিবীর কোথাও কেউ পরেনি। আর অভিনয়ের যা মান…. এক জন আরেকজনের চেয়ে ভয়ঙ্কর । এসব টাকা দিয়ে কেন দেখবে মানুষ ?
যৌথ প্রযোজনা হলেই যে এই ছক থেকে বাইরে বের হওয়া যায় তা বলছি না । বলছি এতে একটা ভাল কিছু সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয় । কারণ যৌথ প্রযোজনায় যারা যুক্ত হন ,তারা সবাই অনেক মান সম্মত কাজ করেন সারা বছর। তাদের ছোঁয়ায় যদি কিছু উন্নতি হয়। এটাই আমাদের চলচ্চিত্রের মান উন্নয়নের শেষ চেষ্টা বলে মনে হচ্ছে আমার ..
অবশ্য ইদানিং আমাদের দেশে বানানো যে দু’একটি যৌথ প্রযোজনার ছবি চোখে পড়েছে সেগুলি হতাশ করেছে। এই কলাকুশলীরা অনেক গুণী, এরা কীভাবে এত বাজে কাজ করছে বুঝতে পারছি না। আমার মনে হয় এদের ব্যবস্থাপনার সংকট আছে । কারণ আমাদের শিল্পীরা অন্যদেশের ভাল পরিচালকের সঙ্গে কাজ করছে বা করেছে তারা তো ভাল করছে ।
শুধু ভাল নয় কালজয়ী হয়েছেন কেউ কেউ … এই মুহুর্তে ববিতার অশনি শংকেত এর কথা মনে পড়ছে। তাছাড়া ইদানিং জয়া আহসান এবং সোহানা সাবার পারফারমেন্সও তো দুর্দান্ত। যে কারণে এই সম্ভাবনার রাস্তাটি খোলা রাখা দরকার। তাই যারা এই পথ বন্ধ করতে চাইছেন, তাদের ধিক্কার দিচ্ছি।
যৌথ প্রযোজনা তো বটেই আমি চিন্তা করতে চাই আরেক ধাপ এগিয়ে । আমি মনে করি সিনেমা বাঁচাতে এই শিল্পের সব দিক খুলে দেয়া দরকার। সব ধরনের সিনেমা দর্শকদের জন্যে উন্মুক্ত করে দেয়া দরকার। যার যেটা খুশি দেখবে। এতে রুচি ফিরবে মানুষের । নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা ভাল ছবি তৈরি করা শিখবে।
বন্ধ করে কখনো কিছু লাভ হয়না। যেমন হয়নি আমাদেরও। রাজ্জাক সাহেব এবং আলমগীর সাহেবদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, ওনারা আমাদের চলচ্চিত্র ওই ডুপলেক্স ড্রয়িংরুম এবং গুদামঘরের ঘেরাটোপ থেকে বের করতে পারেননি, বরং সিনেমা হলগুলো বন্ধ করেছেন। এতে কত বড় ক্ষতি হয়েছে দেশের তা আপনারা চিন্তাও করতে পারবেন না । সত্যি বলতে কী এর জন্যে রীতিমত গবেষণা দরকার। এখন শুধুৃ একটু বলি, আমাদের দেশের কোন কোন মানুষের আজ আচরণগত যে নিন্মমুখিতা, এর যত কারণ আছে , সিনেমার অবক্ষয় তার মধ্যে একটা ….
আর যারা জীবন দিয়ে যৌথ প্রযোজনার ছবি বন্ধ করতে চাইছেন তাদের্ বলছি, যেখানে সেখানে জীবন দেবেন না প্লিজ। একটা কিছু বন্ধ করতে জীবন দেবেন ? কাজটা কী ঠিক হবে ? ধরুন জীবন দিলেন না , যৌথ প্রযোজনার সময় সিনেমা বানানোর কাজটা শিখলেন এবং পরে সেটা ভাল করে করলেন ? নিজেকে প্রশ্ন করুন, কোনটা ঠিক হবে ? অবশ্য যদি দাবি করেন, আপনারা সিনামা বানাতে পারেন …তাহলে আমার আর কিছু বলার নেই ….