রবিবার ● ৯ জুলাই ২০১৭
প্রথম পাতা » স্বাস্থ্যকথা » দাকোপে দিনমজুর মুজিবরের পরিবার দূরারোগ্যব্যাধীতে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় এখন মুত্যু পথযাত্রী
দাকোপে দিনমজুর মুজিবরের পরিবার দূরারোগ্যব্যাধীতে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় এখন মুত্যু পথযাত্রী
আজগর হোসেন ছাব্বির,দাকোপ
দাকোপের আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ সুতারখালী ইউনিয়নে দিনমজুর মুজিবর গাজীর পরিবারের সকলে দূরারোগ্য ব্যাধী থ্যালাসেনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় এখন মৃত্যু পথযাত্রী। অপরিনত বয়সে মৃত্যু ভয়ে আতংকিত অসহায় পরিবারটি জীবন বাঁচাতে সরকার এবং বিত্তবানদের কাছে সাহায্য কামনা করেছে।
উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের ৭ নং কালাবগী গ্রামের কাশেম গাজীর পুত্র মুজিবর গাজী (৪৮)। কেবল ভিটেবাড়ী ছাড়া সম্পদ বলতে কিছু না থাকায় দিন মজুরি করে চলে সংসার। গত ১৫/২০ বছর পূর্বে সে ধীরে ধীরে অসুস্থবোধ করলে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহন করে। ক্রমেই দূর্বল হয়ে সে খুলনা ঢাকায় নানা উন্নত পরিক্ষার মাধ্যমে জানতে পারে, তাঁর শরীরে দূরারোগ্য ব্যাধি থ্যালাসেনিয়া বাসা বেঁধেছে। এই রোগের কারনে সৃষ্ট রক্ত শুন্যতা ক্রমান্বয়ে লিভার প্লীহা বড় হতে থাকে। নিজে আক্রান্ত হওয়ার অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে তাঁর বড় ছেলে ইমরান গাজী (২৫) একই রোগে আক্রান্ত হয়। পর্যায়ক্রমে পরিবারের অপর দুই সদস্য তাঁর স্ত্রী সখিনা বেগম (৪২) এবং সর্বশেষ ছোট ছেলে খুলনা বিএল কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র এজাজ আহম্মেদ (২২) এর শরীরে থ্যালাসেনিয়া রোগের লক্ষন ধরা পড়ে। শুরু থেকে সাধ্যমত চিকিৎসা করিয়ে সর্বশান্ত হয়ে বর্তমানে তাঁরা প্রতি ১৫/২০ দিন পর পর শরীরের রক্ত পরিবর্তন করে মৃত্যু আতংক সাথে নিয়ে কোন মতে বেঁচে আছে। জানা যায় মুজিবরের বড় ছেলে ইমরান থ্যালাসেনিয়া থেকে বর্তমানে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। সম্প্রতি স্ত্রী এবং কলেজ পড়–য়া পুত্র এজাজকে নিয়ে দাকোপ উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহনে আসে। সেখানে এই প্রতিবেদকের নিকট কান্নাজড়িত কন্ঠে মুজিবর জানায়, চোখের সামনে আমার গোটা পরিবার ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমার জীবনের বিনিময়ে যদি স্ত্রী ও ২ সন্তান বেঁচে থাকতো তাহলেও আফসোস করতাম না। সে এই প্রতিবেদকরে হাতটি চেপে ধরে বলে ভাই আমরা বাঁচতে চাই, আমাদের বাঁচান। এ ব্যাপারে দাকোপ হাসপাতালের ডাক্তার জীবিতোষ বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি স্থায়ী চিকিৎসার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, এই রোগে রক্ত শুন্যতা থেকে ক্রমান্বয়ে প্লীহা বড় হয়ে রোগী ধীরে ধীরে নিস্তেজ ও দূর্বল হতে থাকে। এভাবে রক্ত পরিবর্তন করে হয়ত ২৫/৩০ বছর রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব, কিন্তু ওই সময় সে কর্মক্ষম থাকেনা। তিনি বলেন এর স্থায়ী চিকিৎসা হচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তির অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব। কিন্তু চিকিৎসাটি অত্যান্ত ব্যয় বহুল। এক একটি অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা খরচ হবে বলে তিনি জানায়। মুজিবরের পরিবারের ৪ সদস্যের সকলেই আক্রান্ত হওয়ায় তাঁরা এখন অন্যের সাহায্য সহযোগীতায় কোনমতে দিনাতিপাত করছে। এই ব্যয় বহুল চিকিৎসা তাঁদের পক্ষে কোন মতে সম্ভবনা। সমাজের বিত্তবান যাদের জীবন বিলাসিতায় প্রতি নিয়ত লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়, তাঁদের সামান্য দয়া হয়ত ৪ টি জীবনকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। একই সাথে সরকারের নিকট পরিবারটি বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে মানবিক সাহায্যের আবেদন করছে। চাইলে ০১৭৪১৪৫৩০৯৬, ০১৯১০৩২৮০৫৬ নাম্বারে অসহায় ওই পরিবারটির সাথে যোগাযোগ করা যাবে।