শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
রবিবার ● ২৩ জুলাই ২০১৭
প্রথম পাতা » নারী ও শিশু » ১০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে রাতভর নির্যাতন
প্রথম পাতা » নারী ও শিশু » ১০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে রাতভর নির্যাতন
৪৩৪ বার পঠিত
রবিবার ● ২৩ জুলাই ২০১৭
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

১০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে রাতভর নির্যাতন

---

নড়াইল প্রতিনিধি

নড়াইলে ১০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘরে আটকে রেখে তিনদিন ধরে গৃহবধূকে নির্যাতন করা হয়েছে। আর এসব অভিযোগ উঠেছে গৃহবধূর পুলিশ কর্মকর্তা স্বামীর বিরুদ্ধে। হাসপাতালে এসেও হুমকি দিচ্ছে নির্যাতনকারী স্বামী। এমনকি তাদের তিন বছরের শিশু সন্তানকে হাসপাতাল থেকে তুলে নেয়ার ভয়ে অবুঝ শিশুটিকেও মায়ের পাশে রাখা সম্ভব হয়নি।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সাড়ে চার বছর আগে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নান শরীফের মেয়ে ফাতেমা বেগম শিখার সাথে লোহাগড়া পৌরসভার কুন্দশী এলাকার সৈয়দ সিরাজ আলীর ছেলে পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ আল মামুনের বিয়ে হয়। আল মামুন খুলনার আদালতে পুলিশ ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন।

বিয়ের পর বছর খানেক সুখের জীবন কাটলেও যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী ফাতেমা বেগম শিলার ওপর শুরু নির্যাতন। যৌতুকের দাবি মেটাতে গৃহবধূর পাঁচ লাখ টাকার গহনাসহ বাবার বাড়ি গরু পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে। এমনকি টাকা সুদ করে এনেও যৌতুকের টাকা পূরণ করা হয়েছে। তবুও কপালে সুখ মেলেনি গৃহবধূ ফাতেমার। আবারো যৌতুকের দাবি করা হয়েছে। চাকুরিতে বদলি ও পদোন্নতির কথা বলে পুলিশ কর্মকর্তা আল মামুন সম্প্রতি ফাতেমার বাবার কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। দাবিকৃত এই টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ার গত শুক্রবার (২১ জুলাই) রাতে রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয় ফাতেমাকে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শনিবার সকাল ১০টার দিকে ফাতেমাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফাতেমা জানান, যৌতুকের দাবিতে তার স্বামী তিনদিন ঘরে আটকে রেখে রড দিয়ে পিটিয়েছে রক্তাক্ত করেছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের তিন বছরের শিশু সন্তান আরাফাতকেও লাথি মারে।

ফাতেমার ভাই সাবু শরীফ বলেন, প্রথমে আমরা মামুনকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছি। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে পদোন্নতির কথা বলে আমাদের কাছ থেকে এই টাকা নেন। কিছুদিন চুপচাপ থাকার পর আবারো টাকার জন্য বোনের ওপর শুরু হয় নির্যাতন। এখন কোর্ট ইন্সপেক্টর থেকে থানায় যাওয়ার নাম করে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন আমার দুলাভাই। এমনকি জমি বিক্রি করে টাকা দিতে বলেন। সেই টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ার শুক্রবার রাতে আমার বোনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। রড দিয়ে ২৫টি আঘাত করেছে। আমার বোনের মতো এমন পরিস্থিতি যেন কারোর না হয়। মা ফুরজাহান বেগম বলেন, মামুন এতোটা লোভী আমরা আগে বুঝতে পারিনি। মোটা অঙ্কের টাকা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পাঁচ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত টাকা দিয়েছি। তবুও ওর টাকার প্রয়োজন শেষ হয়নি। আমার মেয়েকে লাথি ও চোখে ঘুষি দিয়ে এবং রড দিয়ে মেরে জীবনটা প্রায় শেষ করে দিয়েছে। এ নির্যাতনের বিচার চাই।

বাবা আব্দুল মান্নান শরীফ বলেন, হাসপাতালেও আমার মেয়ের চিকিৎসা ঠিক ভাবে করাতে পারছি না। জামাই হাসপাতাল ছাড়ার হুমকি দিয়ে গেছে। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছি। খালা নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, ফাতেমার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে পিটিয়ে আহত করেছে, তা সহজে কাউকে দেখানো যায় না। একজন নারীর ওপর এমন নির্যাতন মেনে নেওয়া যায় না। এমনকি তাদের তিন বছরের শিশু সন্তান আরাফাতকে হাসপাতাল থেকে তুলে নেয়ার ভয়ে অবুঝ শিশুটিকেও মায়ের পাশে রাখা সম্ভব হয়নি। ফাতেমা ও তার শিশু সন্তানের নিরাপত্তায় পুলিশের কোনো ভূমিকা দেয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া আল মামুনকে হাসপাতাল এবং লোহাগড়া থানা এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন ফাতেমার স্বজনেরা।

লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ শেখ আবুল হাসনাত বলেন, ফাতেমার শরীরে আঘাতের একাধিক চিহৃ রয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে। এদিকে, শনিবার বিকেল থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চেষ্টা করেও লোহাগড়া থানায় মামলা করতে পারেননি ফাতেমার বাবা, ভাইসহ স্বজনেরা। পরবর্তীতে রাত ১২টার দিকে পুলিশ এজাহার রেখে দিলেও আজ রোববার (২৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মামলা দায়ের করা হয়নি বলে ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন ফাতেমার ভাই সাবু শরীফ। এমনকি লোহাগড়া থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম ফাতেমার নির্যাতনের ব্যাপারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)