রবিবার ● ২০ আগস্ট ২০১৭
প্রথম পাতা » বিবিধ » ডুমুরিয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ চাদগড়ে আবারো ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে ঃ মেরামতে ধীরগতি
ডুমুরিয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ চাদগড়ে আবারো ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে ঃ মেরামতে ধীরগতি
অরুন দেবনাথ, ডুমুরিয়া
ভদ্রা নদীতে জোয়ারের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ডুমুরিয়ার ক্ষতিগ্রস্থ চাদগড়ে আবারো ভয়াবহ ওয়াপদা ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এবার বাঁধের নতুন দুই অংশে অর্থাৎ ১১০ মিটার এরিয়া নিয়ে বাঁধটি ভদ্রা নদীতে বিলীন হচ্ছে। দ্রুত মেরামত না করা গেলে সামনের জোগার গোনে বাঁধ ভাঙ্গা পানিতে কয়েক’শ মাছের ঘেরসহ শতশত বসতবাড়ি প্লাবিত হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার জালিয়াখালী-চাদগড়ে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই তারিখে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৯ নম্বর পোল্ডারের বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলার ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। তখন ঘরছাড়া শতশত পরিবার রাস্তার উপর আশ্রয় নেয়। পরবর্তিতে ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দে বাঁধ নির্মানের কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ একটি বছর ধরে জোয়ার-ভাটা বয়ে যাওয়ার পর বাধটি নিয়ন্ত্রনে আসে। সেই ক্লোজারে এখনো কাজ চলছে। কাজের অগ্রগতি ৫৮ শতাংশ। এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ চাঁদগড়ে বাধের নতুন দুই অংশে অর্থাৎ ৪০ মিটার, অন্য অংশে ৭০ মিটার এরিয়া নিয়ে আবারো ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এখানে ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দে বাঁধ মেরামতের কাজ বাস্তবায়ন করছে ব্লু-গোল্ড প্রোগাম নামের একটি প্রকল্প। কাজের ধীর গতি থাকায় ইতোমধ্যে বাঁধটির চার তৃতীয়াংশ ভদ্রা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। সামনে আসছে ভয়াবহ জোগার গোন। নদীতেও প্রবল পানির চাপ। দ্রুতভাবে মেরামত না করা গেলে বাঁধ ভেঙ্গে বড় ধরনের ক্ষতি হবে। এতে কয়েক হাজার মৎস্য ঘের তলিয়ে সব একাকার হয়ে যাবে।
স্থানীয় সাবেক মেম্বর হাবিবুল্লাহ বাবলু বলেন, ক্ষতি কাটে না উঠতেই আবারো নতুন এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বাঁধ ভাঙ্গলে চাঁদগড়, আকড়া, জালিয়াখালী, ঝালতলা, ভুলবাড়িয়াসহ ৭/৮টি গ্রাম প্লাবিত হবে। পুরাতন ক্লোজারের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তার মধ্যে নতুন স্থানে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।
শনিবার দুপুরে বেড়ি বাঁধে বসে থাকা সোহরাব ফকিরের স্ত্রী জামিরুন বেগম এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা গরীব মানুষ। থাকার জায়গাটুকুই আমাদের সম্বল। তাও ছেড়ে দিতে চাচ্ছি ওয়াপদা করার জন্যে। শুধু লোকজন এসে মাপজোপ দিয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি একটা ব্যবস্থা না নিলে আমাদের আর কিছুই থাকবে না।
স্থানীয় শরাফপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মধ্যে পড়ে গেছি। তাইতো বার বারই ভাঙ্গনের সাথে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এপর্যন্ত ভদ্রা নদীতে আমার এলাকা জালিয়াখালী ও চাদগড় গ্রামের প্রায় ১২/১৩’শ বিঘা সম্পত্তি বিলিন হয়ে গেছে। তবুও সংগ্রাম করে এলাকার মানুষ মৎস্যঘের বেড়িসহ সবজি চাষাবাদ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। আবারো বাঁধ ভাঙ্গলে এলাকার মানুষ সীমাহীন বিপদে পড়বে। এখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরিভাবে হস্তোক্ষেপ প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
ব্লু-গোল্ড প্রকল্পের জোনাল কো-অর্ডিনেটর আজিজুল রহমান বলেন, নতুন ক্ষতিগস্থ ৪০ মিটার জায়গায় ভাঙ্গন রোধে জিয়োব্যাগ ডাম্পিং (বালু ভর্তি বস্তা নদীতে নিক্ষেপ)সহ ব্লক প্লেসিং করা হচ্ছে। এছাড়া ৭০ মিটার ভাঙ্গনেও সিনথেটির ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাহিদুর রহমান বলেন, মেসার্স ওমর এন্টার প্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওই বাঁধের কাজটি করছে। ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দে ১১০ মিটার ভাঙ্গনরোধ, ওয়াপদার ২০০ মিটার বাঁধের ব্যাকিং চার্জসহ একটি পুকুর ভরাটের কাজ চলছে। এখানে ৮০ শতাংশ ভাঙ্গন রোধের কাজ করা হয়েছে। কাজের গুনগত মান ভালো। আমরা প্রতিনিয়ত সেখানে কাজের খোঁজ খবর নিচ্ছি। দ্রুত কাজ চলছে। প্রটেকশন যাহা দেয়া হয়েছে তাতে আশা করি ক্ষতি হবে না ইনশাল্লাহ।