বুধবার ● ২৫ অক্টোবর ২০১৭
প্রথম পাতা » সারাদেশ » মোটরসাইকেল দিয়ে ‘অটোবাইক রিকশা’ বানিয়ে পঙ্গু ইলিয়াসের নতুন যাত্রা
মোটরসাইকেল দিয়ে ‘অটোবাইক রিকশা’ বানিয়ে পঙ্গু ইলিয়াসের নতুন যাত্রা
এস ডব্লিউ নিউজ ।
একটি পা নেই ইলিয়াস মিয়ার। তাই বলে তো আর জীবন থেমে থাকে না। জীবন যুদ্ধে তাকে জয়ী হতেই হবে। তাইতো মোটরসাইকেল দিয়ে নতুন আকারের রিকশা বানিয়ে নতুন জীবন শুরু করেছেন তিনি। জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার লক্ষ্যে ১৫ অক্টোবর থেকে এই যাত্রা শুরু করেছেন ইলিয়াছ।
ইলিয়াসের বাড়ি মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের চাকলেশ্বর গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের চাকলেশ্বর গ্রামের আলাল উদ্দিনের দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে ইলিয়াস প্রথমে গার্মেন্টসে চাকরি নেন। চাকরি ভালো না লাগায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলকারী গাড়িতে ফেরি করে পণ্য বিক্রি শুরু করেন।
বাবা আলাল উদ্দিন মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে গার্ডের চাকরি করেন। তাদের রোজগারে ভালোভাবেই সংসার চলত। গাড়িতে ফেরি করে পণ্য বিক্রির সময় গত ২০১৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় বাম পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন ইলিয়াস। এতে চরম বিপাকে পড়েন বাবা আলাল। পরে অনেকের কাছে ধার-দেনা করে চিকিৎসা করিয়ে ছেলেকে সুস্থ করে তোলেন।
সুস্থ হয়ে ইলিয়াস ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর বাইপাস বাাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি টং দোকান বসিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। প্রতিদিন রোজগারের টাকা দিয়ে বাবার সঙ্গে মিলে সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু মহাসড়কে চার লেন উন্নীতকরণ কাজ শুরু হওয়ায় পঙ্গু ইলিয়াছের টং দোকানটি ভাঙা পড়ে। এতে তিনি বাবা, মা, ভাই-বোন ও স্ত্রী সন্তান নিয়ে বেকায়দায় পড়ে যান। দোকানটি সরিয়ে অন্যত্র বসালেও বেচা-কেনা কমে যাওয়ায় তার সংসার তেমন ভালো চলছিল না।
পরে ইলিয়াস তার স্ত্রীর বোনের স্বামীর (ভায়রার) কাছ থেকে একটি পুরাতন মোটরসাইকেল আনেন এবং ওয়ার্কসপ থেকে প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি রিকশা তৈরি করেন। যার নাম দিয়েছেন অটোবাইক রিকশা। ১৫ অক্টোবর পঙ্গু ইলিয়াস তার অটোবাইক রিকশা নিয়ে নতুন যাত্রা শুরু করেন। প্রতিদিন সকালে তিন ঘণ্টা ও বিকেলে ৩/৪ ঘণ্টা রিকশাটি চালান। সোমবার বিকেলেও মির্জাপুর সদরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইলিয়াসকে তার অটো বাইক রিকশা দিয়ে যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে।
পঙ্গু ইলিয়াস বলেন, ভাইরার কাছ থেকে মোটরসাইকেলটি এনে অটো রিকশা তৈরি করতে প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিদিন ৭/৮ ঘণ্টা চালিয়ে ২ লিটার তৈল ও ১০০ টাকার মবিল বাবদ প্রায় ৩০০ টাকা খরচ হয়। খরচ বাদে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই সংসার চালাচ্ছি।
ইলিয়াস বলেন, পা হারিয়ে কিছুটা বিপাকে পরলেও আমি সক্ষম। কর্ম করেই সংসার চালাতে চাই।