সোমবার ● ৩০ অক্টোবর ২০১৭
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » জমে উঠেছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন মেলা
জমে উঠেছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন মেলা
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জমে উঠেছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন মেলা। ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজিত এ মেলার দ্বিতীয় দিনে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে গড়ে তোলা ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের উদ্যোক্তারা তাদের রকমারি পণ্যের সমাহার নিয়ে যোগ দিয়েছেন ছয় দিনের এ মেলায়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে অংশ নেওয়া এ উদ্যোক্তারা মেলায় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ক্রেতা-দর্শনার্থীর সাড়া পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এমন মেলা প্রতিবছরই আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
আজ সোমবার মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, মেলায় আগত দর্শনার্থীরা এক স্টল থেকে আর এক স্টল ঘুরে ঘুরে দেখছেন। পণ্যের দাম-দর করছেন। পছন্দ ও দামের সঙ্গে সঙ্গতি হলে কিনে নিচ্ছেন। কেউবা আবার শুধু ঘুরে ঘুরে দেখছেন। কুটির শিল্প সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছেন। আগামীতে নিজে কোন কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন।
রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় থাকেন তামিম আহমেদ। বাড়ি খুলনার খালিশপুর। সদ্য মাস্টার্স শেষ করে ঢাকায় এসেছেন চাকরির সন্ধানে। কিন্তু পছন্দ অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছেন না তিনি। তাই ভাবছেন গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাবেন। কিছু টাকার বিনিয়োগ করে ছোট পরিসরের কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। তাই মেলায় এসেছেন অল্প পুঁজিতে কোনো ধরণের শিল্প গড়ে তোলা যায় কী না, তার ধারণা নিতে।
তামিম আহমেদ একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইনকে বলেন, আমি কয়েকটি স্টল ঘুরে দেখলাম। আমার মনে হলো চাকরির জন্য এমন মরিয়া না হয়ে কিছু টাকা বিনিয়োগ করে কয়েকজন কর্মচারী নিয়ে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি গ্রামে ফিরে কাঁথা-শাড়ীসহ এ ধরণের কিছু কুটির পণ্যের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলব। প্রথম ৫ বছর আমি কোনো লাভের আশা করবো না। যা লাভ হবে তা আবার শিল্পে বিনিয়োগ করবো। এ পাঁচ বছরে আমি যাদের কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিবো, তাদের অন্যের যোগানদাতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবো। আমার অধীনে কিছু লোক কাজ করবে এটাই সম্মান। আমি কারো জন্য কিছু করতে পারবো সেটাই হবে আমার গর্ব। তখন সর্বোচ্চ লেখা-পড়া করেও চাকরি না পাওয়ার বেদনা আর থাকবে না। আর আমার অর্থ উপার্জনের জন্য আমি এলাকায় মাছের চাষ করবো। এটা থেকে যা আসবে আশা করি তাতেই আমার চলে যাবে।
পুরো মেলায় ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের মতো অনেক স্টলই আছে। হস্ত ও কুটিরশিল্পের বাহারি পণ্যও মিলবে সেখানে। মাটির গয়না, ঘর সাজানোর পণ্য থেকে শুরু করে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এলইডি প্রযুক্তির বাতি, ল্যাপটপের মতো উচ্চপ্রযুক্তির পণ্যের প্রদর্শনীও এখানে হচ্ছে। আবার স্থানীয়ভাবে তৈরি বিস্কুট, চানাচুর, ডাল, সরিষার তেলের মতো ভোগ্যপণ্যও মিলছে এই মেলায়।
মেলায় দেখা হয়, মিরপুর থেকে আসা নাসিমা আক্তার শিউলির সঙ্গে। বেসরকারি চাকরিজীবি নাসিমা আক্তার বলেন,আমি এখন অফিসের ছুটিতে আছি। আজ আকাশটাও অনেকটা মেঘলা। রোদে পোড়ার ভয় নেই। তাই মনে করলাম মেলা থেকে ঘুরে আসি। মেলা এসে অনেক ভাল লাগছে। আমি দুটি জামদানি শাড়ী আর এক জোড়া কানের দুল কিনেছি। তুলনামূলক দাম কম পেয়েছি। এখানে অনেক স্টল, তাই দেখে দেখে যাচাই করে কিনতে পেরেছি।
মেলায় শিশু নিলয় ফাউন্ডেশন কানের দুল, নাকফুলসহ বিভিন্ন গহণার পসরা সাজিয়েছে। সামুদ্রিক ঝিনুক, কড়ি, পুথি ইত্যাদিতে কারুকার্য খচিত নারীদের বিভিন্ন গহনা প্রদর্শিত হচ্ছে স্টলটিতে। কথা হয় শিশু নিলয় ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাসিমা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার মেলা প্রথম থেকেই জমজমাট। আজ দ্বিতীয় দিনে গতকালের তুলনায় দর্শনার্থী আরও বেড়েছে। প্রথম দিন থেকেই বেঁচাকেনা শুরু হয়েছে। আজ আরও বেড়েছে। এ ধরণের আয়োজনের জন্য পিকেএসএফকে ধন্যবাদ। তবে মেলার এ আয়োজন প্রতিবছর হলে আরও ভালো হতো।
মেলায় অংশ নেয়া জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বলেন, যশোরের বিভিন্ন এলাকার নারী-পুরুষ আমাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এসব পণ্য তৈরি করেন। তাঁদের কাছ থেকে আমরা সেসব পণ্য আবার কিনে নিই। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের হাতে তৈরি এসব পণ্য প্রচারের জন্যই আমরা এখানে এসেছি। মেলার মূল উদ্দেশ্য প্রদর্শণী। তবে বিক্রিও করছি আমরা। ক্রেতারা দেখে শুনে ভালো লাগলে কিনে নিচ্ছেন। আয়োজকদের এমন আয়োজনে ধন্যবাদ জানিয়ে লুৎফর রহমান মেলার আয়োজন প্রতিবছর করার জন্য পিকেএসএফের কাছে দাবি রাখেন।
মেলার আয়োজন প্রতি বছর করা হবে কী না জানতে চাইলে পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল করিম বলেন, পিকেএসএফের উদ্যোগে দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পরিধি দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেক্ষেত্রে এ শিল্পের প্রদর্শণীর ব্যবস্থা আরও বাড়াতে আগে থেকেই অনেকে দাবি জানিয়ে আসছে। বিষয়টি পিকেএসএফ আগামীতে ভেবে দেখবে। সম্ভব হলে অবশ্যই বাড়ানো হবে।
গতকাল রোববার ছয় দিনের এ মেলার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ। এ সময় কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ বলেন, পিকেএসএফ দেশের দরিদ্র্য মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এরইমধ্যে ৫২ হাজার নারী-পুরুষকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ১ হাজার ভিক্ষুককে অর্থায়নের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করেছে। তবে ১ জন ভিক্ষুক আবার তার ভিক্ষাবৃত্তিতে ফিরে গেছে। আর ১৯জন ভিক্ষুক ভালভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বাকি ৯৮০ জন ভিক্ষুক স্বাবলম্বী হয়েছে। আমাদের সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষা সহায়তা কেন্দ্র আছে। তবে আমি মনে করি দেশের প্রকৃত উন্নয়ন একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। এর জন্য স্থানীয় সরকার পর্যায়ে কাজের গতি বাড়াতে হবে।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গবেষণা ও আইটি, সেবামূলক প্রতিষ্ঠানসহ মোট ৯০টি প্রতিষ্ঠানের ১৩৩টি স্টল মেলায় অংশ নিয়েছে। মেলা রোজ সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।