মঙ্গলবার ● ২৮ নভেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » পাইকগাছা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে বিনা চিকিৎসায় গর্ভবতী মহিলা মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিক বন্ধ; তদন্ত কমিটি গঠণ
পাইকগাছা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে বিনা চিকিৎসায় গর্ভবতী মহিলা মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিক বন্ধ; তদন্ত কমিটি গঠণ
এস ডব্লিউ নিউজ ॥
পাইকগাছা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে বিনা চিকিৎসার কারণে ৮ মাসের গর্ভবতী মহিলা ভারতী রাণী মন্ডলের মৃত্যুর ঘটনায় খুলনা সিভিল সার্জন ক্লিনিকটি সাময়িক বন্ধ রেখে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠণ করেছে। অপরদিকে, ক্লিনিক মালিক তৃপ্তি রঞ্জন সেন ভারত থেকে দেশে ফিরে ঘটনাটি ধামাচাঁপা দেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ ও মৃত ভারতী রাণীর পরিবারকে ম্যানেজ করে সাংবাদিক সম্মেলন করার পাঁয়তারা করছে।
জানাগেছে, উপজেলার খড়িয়া ঠাকুরণ বাড়ীর চক গ্রামের তারক মন্ডলের ৮ মাসের অন্তস্বত্তা স্ত্রী ভারতী রাণী (২৫) অসুস্থবোধ করলে ২৬ নভেম্বর সকালে তাকে ভর্তি করা হয় পাইকগাছা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে। ভর্তির পর সারাদিন রোগীর দিকে কোন খেয়াল না করার কারণে সন্ধ্যায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে খবর দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ প্রভাত কুমার দাশকে ক্লিনিকে আনেন কর্তৃপক্ষ। ডাক্তার রোগী দেখার পরক্ষণে রাত আনুমানিক ৮ টার দিকে ভারতী রাণী মৃত্যুর কোলে ঢুলে পড়েন। ঐ রাতেই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ্যাম্বুলেন্সযোগে তড়িঘড়ি করে ভারতীর লাশ বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
অভিযোগ উঠেছে, স্বাস্থ্য নীতি উপেক্ষা করে উপজেলার অধিকাংশ ক্লিনিকগুলো পরিচালিত হচ্ছে। অধিকাংশ ক্লিনিকে আবাসিক ডাক্তার ও পর্যাপ্ত নার্স না থাকলেও কাগজে-কলমে দেখিয়ে দেদারসে ক্লিনিক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। ক্লিনিক মালিকরা বিভিন্ন অপারেশন রোগী ভর্তি করে বাইরে থেকে ভাড়াটে ডাক্তার নিয়ে অপারেশন করিয়ে থাকেন। ক্লিনিকে থাকা অনেক রোগী ও তাদেও সাথে আসা স্বজনরা জানান, ক্লিনিকের নিচে একাধিক কাঁকড়ার ডিপো থাকায় সারাক্ষণ দুর্গন্ধে আগত রোগীরা আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে রোগীর স্বজনরাও রোগী হয়ে পড়ছেন।
এ ঘটনায় ভারতী রাণীর ভগ্নিপতি সুজিত জানান, প্রথমত কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা ও ক্লিনিকে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় তার অন্তস্বত্তা শ্যালিকা ভারতীর মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক সংশ্লিষ্টদের বিচার দাবি করেন তিনি।
ঐ সময় ক্লিনিকে থাকা কর্মরত ডাঃ উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প.কর্মকর্তা প্রভাত কুমার দাশ সাংবাদিকদের জানান,প্রথম দিন ভোরে রোগীকে তার চেম্বারে নিলে রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে তিনি তাকে খুলনায় নেয়ার পরামর্শ দেন। পরে সন্ধ্যায় তিনি ক্লিনিকে গিয়ে দেখেন রোগীকে ক্লিনিকেই রাখা হয়েছে। তার অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে,পুনরায় যতদ্রুত সম্ভব তাকে খুলনায় নেয়ার পরামর্শ দেন।
সার্জিক্যাল ক্লিনিকে প্রসুতির মৃত্যুর ঘটনায় সিভিল সার্জন খুলনা, এএসএম আব্দুর রাজ্জাক ক্লিনিকটি পূনরায় নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা ও খুলনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আতিয়ার রহমানকে তদন্ত কমিটির প্রধান করে খুলনা সার্জিক্যাল অফিসের ডাঃ তানিয়া ইসলাম ও পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাঃ সুজন কুমারকে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠণ করেছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এদিকে ক্লিনিক মালিক তৃপ্তি রঞ্জন মঙ্গলবার ভারত থেকে দেশে এসে মৃত ভারতী রাণীর বাড়ীতে তার পরিবারকে ম্যানেজ করার জন্য সারাদিন সেখানে অবস্থান করছিল। গুঞ্জন উঠেছে, ঐ পরিবারকে দিয়ে পাইকগাছা প্রেসক্লাবে আজ বুধবার সাংবাদিক সম্মেলন করবে।