বুধবার ● ৩ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » কৃষি » মাগুরায় চলতি মৌসুমে জেলার সরিষার চাষ লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ না হবার আশংকা
মাগুরায় চলতি মৌসুমে জেলার সরিষার চাষ লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ না হবার আশংকা
এস আলম তুহিন ,মাগুরা থেকে :
মাগুরায় উচ্চ ফলনশীল বারি-৯ ও টোরি -৭, বারি-১৪ ও বারি-১৫ জাতের সবিষার আবাদ কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগালেও গত বছরের তুলনাই সরিষা চাষ এবছর অর্ধেকে নেমে এসেছে।
মৌসুমের শুরুতে কৃষি বিভাগ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত এই অধিক ফলনশীল সরিষা আবাদে উদ্বুদ্ধ করে।এতে সরিষা আবাদে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ফিরে আসবে বলে আশা করেছিল কৃষি বিভাগ কিন্তু বৈরী আবহাওয়া ও শীত আসতে দেরী হওয়ায় চলতি মৌসুমে জেলার সরিষার চাষ লক্ষ্য মাত্রা পূর্ণ না হবার অশংকা করছেন কৃষি বিভাগ ও কৃষকেরা। মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রাজিব হাসান জানান,চলতি মৌসুমে জেলার সদর,শীপুর,শলিখা ও মহাম্মপুর উপজেলায় ৬ হাজার তিন শত পঁচানব্বই হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে যেখানে গতবছর সরিষা আবাদের পরিমান ছিলো ১০ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে । এ বছর মাগুরা সদরে ২১৫০,মহাম্মাদ উপজেলায় মাত্র ৬০৫,শ্রীপুর উপজেলায় ৫৫০ ও শালিখা উপজেলায় ৩০৯০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে সেখানে গতবছর সদরে ৬ হাজার ১২০হেক্টর , শ্রীপুরে ৩৭৫ হেক্টর , শালিখায় ও মহম্মদপুরে ৬০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছিল।
এ বছর জেলায় ৭ হাজার ৪৬৬ টন সরিষা উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ যা গত বছরের চেয়ে অর্দ্ধেক। তাছাড়া সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বাড়তি আয় করার কথা শতাধিক মধু চাষী দের জেলাতে এ বছর সরিষা চাষ ভালো না হওয়াতে এলাকার মধু চাষিরা এবার পার্শ্ববর্তী জেলাতে ভিড় জমিয়েছেন।সাধারনত মাগুরার কৃষকরা স্থানীয় জাতের পাশাপাশি বারি-৯ ও টোরি -৭ জাতের সরিষার আবাদিই বেশী করতেন। সময় বেশী লাগায় ও ফলন কম হওযায় কৃষকরা সরিষা চাষে উৎসাহ হারাচ্ছিল।এ দুটি জাতের সরিষা মাত্র ৬৫-৭৫ দিনে সরিষা ঘরে তোলা গেলেও চলতি মৌসুমের শুরুতে কৃষি বিভাগ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল জাতের বারি-১৪ ও বারি-১৫ সরিষা আবাদে উদ্বুদ্ধ করলেও অসময়ে বৃষ্টি ও শীত শুরু হতে দেরি হওয়াতে মাগুরার কৃষকরা সরিষা আবাদে অনেকটা নিরুউৎসাহ প্রকাশ করছে।হেক্টরে দেড় হাজার কেজি ফলন হয়। সরিষা কেটে আবার ওই জমিতে বোরোর আবাদ করা যায়।এতে কৃষি জমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
আঠারখাদা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জনাব তানজির আহম্মদ জানান, ‘আমন ধান কাটার পর পড়ে থাকা জমিতে রিলে পদ্ধিতিতে ( জমি চাষ না করে) সরিষা চাষ মাগুরাতে এখন বেশ জনপ্রিয়। এ পদ্ধতিতে সরিষা চাষে উৎপাদন খরচ অনেক কম। এবার অনেক কৃষকেরা মাগুরাতে এ পদ্ধতিতে সরিষা চাষ করছে।’
মাগুরা সদর উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের সরিষা চাষি বিনয় সরকার,দিপক সরকার,লক্ষন বিশ্বাস,বিদ্যুৎ সরকার ,নারায়ন বিশ্বাস, হাজীপুরের আবজাল,কুকনা গ্রামের পলাশ ঘোষসহ অনেকে বলেন, ‘দেশী জাতের সরিষা আবাদ করে একরে ৮-১০ মণ ফলন পাওয়া যেত। সেখানে উন্নত জাতের সরিষা আবাদে প্রতি একরে পাওয় যায় ১৪-১৫ মণ। উৎপাদন খরচও আগের চেয়ে অনেক কম। কিন্তু অসময়ে বৃষ্টি ও শীত আসতে দেরী করায় এবার জেলাতে সরিষা চাষ কম হয়েছে।’
মাগুরা সদর উপজেলার আঠাখাদা গ্রামের বিনয় সরকার বলেন, ‘আমি চলতি মৌসুমে ২ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল সরিষার আবাদ করেছি। আশা করি ৪০-৪৫ মণ সরিষা ঘরে তুলতে পারবো।’
মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি র্কমকর্তা মো. রুহুল আমিন জানান, চলতি রবি মৌসুমে জেলায় স্থানীয় জাতের তুলানায় উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা বেশি চাষ করছেন কৃষকরা। সরিষা চাষে কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। এ ছাড়া আবহাওয়া ভালো থাকলে সরিষার ভালো ফলন পাওয়ার পাশাপাশি ভালো দাম পাবেন বলে তিনি মনে করেন।
মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের জেলা কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম সাহা জানান,‘ অসময়ে বৃষ্টি ও শীত আসতে দেরী হওয়ায় এ বছর মাগুরার কৃষকরা গতবারের তুলনায় সরিষা চাষ কম করেছে, আবার অনেকে অগ্রীম ধান চাষ করার জন্য জমি ফেলে রেখেছে’ ।