বুধবার ● ৭ মার্চ ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » যুদ্ধাপরাধী-খুনিরা ক্ষমতায় যেন না ফেরে: হাসিনা
যুদ্ধাপরাধী-খুনিরা ক্ষমতায় যেন না ফেরে: হাসিনা
যুদ্ধাপরাধী ও খুনিরা যেন ক্ষমতায় ফেরার সুযোগ না পায়, সেজন্য দেশবাসীকে সচেতন থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এস ডব্লিউ নিউজ। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় ভাষণে এই সতর্কবার্তা দেওয়ার পাশাপাশি জঙ্গি, সন্ত্রাসী, মাদকের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার থাকার আহ্বানও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “যুদ্ধাপরাধী, খুনি, এরা যেন কোনোদিনই ক্ষমতায় আসতে না পারে। যারা স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও উন্নয়নে বিশ্বাস করে; তারা সচেতন থাকবেন।”
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরে এই ভাষণে কার্যত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে ভোট না দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানালেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারে জামায়াতে ইসলামীর মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ মন্ত্রী হয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ আমলে যুদ্ধাপরাধের বিচারে যাদের প্রাণদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার পর সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ড এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা ও ধর্ষণের কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বাংলাদেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মুক্ত করতে জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার উপর জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক কোনোভাবেই যেন আমাদের যুব সমাজকে নষ্ট করতে না পারে।”
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজেন বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় জঙ্গিদের তৎপরতা স্তিমিত হয়ে এলেও কয়েকদিন আগে লেখক-অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপর হামলার পর তা নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
জনসভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বিএনপির নেতৃত্বের উদ্দেশে বলেন, “এবারও কোনো ষড়যন্ত্র মানুষ মেনে নেবে না। নির্বাচনে না আসলে আপনারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। নালিশ দিচ্ছেন? কোনো লাভ হবে না।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, “আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। অন্য কোনোভাবে আগামী নির্বাচন হবে না। কোনো ছবক দিয়ে লাভ হবে না।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকার আমলের উন্নয়নের কথাও বলেন।
“বাংলাদেশ কারও কাছে ভিক্ষা চেয়ে যেন না চলে, তার জন্য আমরা কাজ করছি। আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বিশ্বে সম্মান পেতে যাচ্ছি। অতি শিগগিরই এই সম্মান পেতে যাচ্ছি।”
একাত্তরে যে দিনটিতে বাঙালির স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাতে এবার ভিন্ন মাত্রার ছাপ ছিল এবারের আয়োজনে।
জাতির জনকের ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ার পর এই প্রথম দিবসটি উদযাপিত হয় বাংলাদেশে।
শেখ হাসিনা তার পৌনে এক ঘণ্টার বক্তৃতার শুরুতেই জাতির জনকের বক্তৃতার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, সেদিনের স্মৃতিচারণও করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “ঠিক যেখানে শিশু পার্ক, ওখানে মঞ্চ ছিল। পুরো ময়দান ছিল লাখ লাখ মানুষে ভরপুর।”
লাখো মানুষের ওই জনসভায় বঙ্গবন্ধু সবাইকে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন,. “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
শেখ হাসিনা বলেন, “তার ঘোষণা পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তার কথা মতো বাংলাদেশের মানুষ প্রতিটি ঘরকে দুর্গে পরিণত করে পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করে।”
৭ মার্চের ভাষণের ইউনেস্কোর স্বীকৃতির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “ইতিহাসকে কেউ মুছতে পারে না। ইতিহাসকে কেউ নিশ্চিহ্ন করতে পারে না।”
ঐতিহাসিক ওই ভাষণ নিয়ে নিজের লেখা কবিতা ‘স্বাধীনতা শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতাটি বুধবারের জনসভায় পড়ে শোনান কবি নির্মলেন্দু গুণ।
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জনসভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাহারা খাতুন ও ফারুক খান, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মির্জা আজম, ঢাকা সিটি করপোরেশনের (উত্তর) মেয়র সাইদ খোকন, ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব ফজলে নূর তাপস, মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী সুফিয়া খাতুন, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার, যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী নাজমা আক্তার,ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বক্তব্য রাখেন।
জনসভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।