রবিবার ● ৮ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » কৃষি » ডুমুরিয়ায় ব্লাস্ট’র আক্রমনে বোরো চাষিরা দিশেহারা
ডুমুরিয়ায় ব্লাস্ট’র আক্রমনে বোরো চাষিরা দিশেহারা
অরূণ দেবনাথ, ডুমুরিয়াঃ
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার অধিকাংশ বিলে চলতি বোরো মৌসুমে সমগ্র ব্লাস্ট রোগের প্রদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। মহামারি আকার ধারণ না করলেও অসংখ্য চাষির মাথায় হাত উঠেছে। প্রধানত ব্রি- ২৮ জাতের ধানেই ব্লাস্ট’র আক্রমন ঘটেছে। তবে উপজেলা কৃষি অফিস সামান্য ক্ষতির কথা বললেও ক্ষতি ছোট নয়।
উপজেলার বিভিন্ন বিলে সরেজমিনে ধান চাষিদের সঙ্গে ও কৃষি অফিসে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ২১ হাজার ৪’শ ৫০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা বিভিন্ন জাতের বোরো ধানের চাষ করেছেন। যেখানে ১ লক্ষাধিক মেট্রিক টন ধান উৎপন্ন হওয়া কথা। কিন্তু ফলনের মুখে ব্লাস্ট রোগের আক্রমনে অসংখ্য ধান ক্ষেতে কাঁচা ধানের বাইল’র মধ্যে হঠাৎ করে কিছু জমির ধানের বাইল সুকিয়ে মরে যাচ্ছে। ফলে কৃষকরা বিপুল পরিমান টাকা ও শ্রম দিয়ে যে ধান চাষ করেছে তা থেকে প্রত্যাশিত ফলন পাবেন না। উপজেল কৃষি অফিস সুত্রে আরও জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ডুমুরিয়া অঞ্চলের চাষিরা ব্লাস্ট রোগ সহিষ্ণু, দেখতে ও খেতে ভালো ব্রি- ২৮ জাতের ধান চাষ করে আসছিলো। কিন্তু গত বছর সমগ্র ডুমুরিয়ায় ব্লাস্ট মহামারি আকার ধারণ করায় চাষিরা মারাত্মক ক্ষতির শিকার হন। আর সে কারণেই ডুমুরিয়া তথা দক্ষিনাঞ্চলের চাষিরা চলতি বছর ২৮ জাতের পরিবর্তে বিভিন্ন জাতের হাই-ব্রিড ধান বেশি-বেশি চাষ করেছেন। আর যারা ব্রি- ২৮ চাষ করেছে তাদের ৯০ শতাংশই ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়েছে। তাছাড়া অন্য জাতের কিছু কিছু ধানও আক্রান্ত হয়েছে। ফলে ব্লাস্টের ভয়ে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে বোরো ধান চাষ হুমকির মুখে পড়তে পারে। উপজেলা কৃষি অফিস স্বীকার করেছে, সমগ্র উপজেলার বিভিন্ন বিলের ধানে অল্প-অল্প ব্লাস্ট রোগের আক্রমন হয়েছে। তারমধ্যে উপজেলার ধামালিয়া ইউনিয়নের চেচুড়ি বিল, রঘুনাথপুর ইউনিয়নের বিল পাটিয়ালা, রুদাঘরা ইউনিয়নের মাঝেরপাড়া বিল, খর্ণিয়া ইউনিয়নের টিপনা বিল, আটলিয়া ইউনিয়নের মালতিয়া-চুকনগর বিল, মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের বাদুড়িয়া-ঘোষড়া বিল, শোভনা ইউনিয়নের বলাবুনিয়া, জিয়ালতলা, পাতিবুনিয়া, শরাফপুর ইউনিয়নের কেয়াখালি-ঝালতলা বিল, সাহস ইউনিয়নের নোয়াকাঠি বিল, ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নের চাত্রা বিল, ডুমুরিয়া সদর ইইনয়নের মিরেখালি, খলশী বিল, রংপুর ইউনিয়নে রামকৃষ্ণপুর বিল, গুটুদিয়া ইউনিয়নে ধাইগ্রম-বিলপাবলা বিল-সহ অসংখ্য বিলে অল্প-বিস্তর আকারে ব্লাস্ট রোগের আক্রমন ছড়িয়ে পড়েছে।
ডুমুরিয়ার মিরেখালি বিলে গেলে কথা হয় আবুল হোসেন গাজী বলেন, আমার এক একর জমির কিছু অংশে ব্রি- ২৮ ধান ও কিছু অংশে হাইব্রিড লাগিয়েছি। আপনারাই দ্যাখেন, শুধু ২৮ জাতের ধানেই ব্লাস্টের কারণে সব ধান মরে শেষ। ওই একই বিলের আতিয়ার রহমান, আফসার গাজী, আজিজুল মোড়ল, আকতার শেখ, ইকবাল মোলা, সোহরাব গাজী, নজরুল মোল্লা, পার্শবর্তী চাতরা বিলের মাহাবুর ফকির, জয়নাল শেখ, মোস্তফা শেখ-এর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের প্রত্যেকের ১-২-৩ একর জমিতে ২৮ জাতের ধানে ব্লাস্ট লেগেছে। তবে কৃষি অফিস এখনও কোনো খোঁজ নেয়নি। শোভনা ইউনিয়নের বলাবুনিয়া বিলে অনিমেশ মন্ডল বলেন, আমার ২ একর জমির ধানে ব্লাস্ট লেগে সব ধান মরে গেছে। ওই বিলের চাষি স্বপন দাস বলেন, বড় আশা নিয়ে পাইকগাছা থেকে এসে ৪ একর জমি লিজ নিয়ে তাতে ধান চাষ করেছি। ব্লাস্ট লেগে আমার সব শেষ। রুদাঘরা ইউনিয়নের মোজাম সরদার বলেন, কৃষি অফিস আমাগে ২৮ না লাগাতি কইলো, কিন্তু খাতি ভালো বলে ২৮ লাগাগে আমার সর্বনাশ হয়ছে। ডুমুরিয়ার খলশী বিলের আমজাদ শেখ বলেন, আমার ক্ষেতে মাঝে মাঝে ধান পুড়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি অফিসার নজরুল ইসলাম উপজেলার সর্বত্রই অল্প-অল্প করে সর্বমোট ১২ হেক্টর জমির ধানে ব্লাস্টের আক্রমনের কথা স্বীকার করে বলেন, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, দিনে গরম রাতে শীত, দীর্ঘ শিশির ভেজা সকাল ছাড়াও অতিরিক্ত ইউরিয়া ব্যবহার করায় ব্লাস্টের আক্রম ঘটে। আমরা এবছর আগে থেকেই যথেষ্ট পরিমানে চাষিদের ব্লাস্ট সম্পর্কে স্বচেতন করেছি বলে ক্ষতি সামান্য হবে। আর শুধু ব্রি- ২৮ জাতের ধানেই নয়, অন্যান্য হাইব্রিড ধানেও ব্লাস্ট লেগেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কৃষি অফিসের একটি সুত্র জানিয়েছে, ১৯৮৮ সালে ব্লাস্ট সহিষ্ণু ব্রি-২৮ ধান রিলিজ করেছিলো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ২৮ আর ব্লাস্ট প্রতিরোধ করতে পারছে না। তাই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের এ বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনিস্টিটিউটের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মামুনুর রহমান বলেন, আমি ব্লাস্ট রোগের প্রদূর্ভাব দেখতে ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘরে সামান্য পরিমানে ব্লাস্টের আক্রমন দেখেছি। তাছাড়া কয়েকটি এলাকায় লবনাক্ততার প্রভাবে ধান মরতে দেখেছি।